ওরে আমার সোনা রে!

১৮৬৬ পঠিত ... ২৩:৫৭, মে ২২, ২০১৭

সোনার এক জোড়া দুল চেয়েছিল মেয়েটি। কৃষক বাবা দিতে পারেননি তা। ক্লাস সেভেনে পড়া মেয়েটা অভিমানে কীটনাশক খেয়ে ফেলে এক বোতল। মারা যায় গোয়াল ঘরের কোনায়। দেড়দিন পর তার লাশটা যখন পাওয়া যায়, তখন পিপড়ে ছেঁকে বসেছে তার সমস্ত শরীর। নীল হয়ে গিয়েছিল সোনা রংয়ের তার মুখটা।

উনিশ শ তিরাশি সালে ঠাঁকুরগায়ে এ ঘটনাটি ঘটার পর সিরাজগঞ্জ জ্ঞানদায়িনী উচ্চ বিদ্যালয়ের আরবী শিক্ষক মালেক স্যার বলেছিলেন, ‘মানুষ বোঝে না সে নিজেই একটা সোনা, সোনার খনি, সোনার পিন্ড। এটা বোঝে না বলেই তার এতো দুর্ভোগ, এতো হাহাকার!’

সোনা সবেেচয়ে বেশি ব্যবহার করে মেয়েরা। এদিক দিয়ে এগিয়ে আছে ভারতের গৃহবধুরা। তারা বিশ্বের ১১ শতাংশ সোনা ব্যাবহার করে গয়না হিসেবে। যা আমেরিকা, আইএমএফ, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানির সম্মিলিত রিজার্ভের চেয়েও বেশি!

অথচ ভারতের কর্ণাটকের এক মেয়ের তিন তিনবার বিয়ে ভেঙে যায় কেবল একটা সোনার নাকফুলের জন্য। জুতো সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা তা যোগাড় করতে পারেননি। শেষে মেয়ে ধান সিদ্ধ করার চুলোর আগুনে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি দেয় নিজেকে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে-এই ভারতেরই প্রখ্যাত সুরকার-গায়ক বাপ্পী লাহিড়ী পুরুষ হয়ে প্রতিদিন যে পরিমাণ সোনা জড়ান শরীরে, তাতে ওরকম সাতাশিটা নাকফুল বানানো যাবে। আর তার গয়নার পরিমাণ এতো, তা  দিয়ে বিয়ের সব গয়না বানানো যাবে অন্তত সতেরটা মেয়ের!

সোনা নিয়ে মানুষের লোভের শেষ নেই। অথচ ১৯৭১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ১৩টিরও বেশি উল্লেখযোগ্য আকষ্মিক দূর্ঘটনা ঘটেছে খনি থেকে সোনা উত্তোলনের সময়। রোমানিয়ার গোল্ডমাইন দূর্ঘটনায় সায়ানাইড বর্জ্যের বন্যায় ১৯৭১ সালে মারা গিযেছিল ৮৯ জন মানুষ। ফিলিপাইনে ১৯৯৬ সালে স্বর্ণ খণি থেকে ধেয়ে আসা বর্জ্যে তলিয়ে গিয়েছিল পুরো একটা গ্রাম। চিলির স্বর্ণ খনিতে ২০১০ সালে আটকে পড়ে ৩৩ জন খনি শ্রমিক। ৫ ইঞ্চি চওড়া আর প্রায় ১ মাইল লম্বা একটা গর্ত দিয়ে খাবার পানি পাঠিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখা হয়, উদ্ধার করে আনা সম্ভব হয় ৬৯ দিন পর!

অলিম্পিক গোল্ডমেডেলে  কতটুকু সোনা থাকে, জানেন?

মাত্র ১.৩৪ শতাংশ, বাকী ৯৮.৬৬ শতাংশ হলো রূপা।

এটা  না হয় অলিম্পিক কমিটি সবাইকে জানিয়েই দেয়। কিন্তু বাংলাদেশের একুশে পদক কমিটি তা করেননি। প্রখ্যাত লেখক শওকত ওসমানকে একুশে পদক দেওয়া হয়, একটা গোল্ড মেডেল দেওয়া হয়। কী একটা কৌতুহলবশত তিনি সেটা ভেঙে ফেলেন। তারপর দেখা যায় ওখানে যা সোনা থাকার কথা ছিল, তা নেই। সে এক মহা কেলেংকারী ব্যাপার! 

আপনারা কি এটা জানেন, গোল্ডফিশকে দিনের পর দিন অন্ধকার রুমে রাখলে এক সময় এটার গায়ের রঙ সাদা হয়ে যায়?

কেউ জানেন, কেউ জানেন না। কিন্তু সোনা সংক্রান্ত এই ব্যাপার সবাই জানেন, সোনায় অন্তত চারটা অর্থ হ্রাস!

এক. সোনা কিনতে অনেক টাকা  লাগে, কিন্তু সেই টাকা কখনো বৃদ্ধি পায় না। অথচ ওই টাকা ভালো কোনো জায়গায় লগ্নি করলে আয় বাড়ে।

দুই. সোনা রাখার জন্য নিরাপদ জায়গা লাগে এবং সোনা হারানোর ভয়ে অনেকেই সারাক্ষণ আতংকে থাকে। এই দুশ্চিন্তায় রোগ বেধে যায় অনেকের।

তিন. সোনায় যাকাত দিতে হয়। ধরা যাক ১০০ টাকার সোনা আছে আপনার। বছর শেষে আপনাকে আড়াই টাকা যাকাত দিতে হবে।

চার. সোনা একটু একটু করে ক্ষয়ে যায় প্রতিদিন। বছর শেষে দেখা যায়, যা সোনা আছে আপনার, কিছুটা কমে গেছে তা থেকে।

জরিপে দেখা গেছে, গড়ে একজন মহিলা দিনে ৬২ বার হাসে, পুরুষরা হাসে ৮ বার। জরিপে এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটা মহিলা গলায় ইয়া বড় সোনার হার বা মালা পরেন। একটু পর পর সেটার দিকে তাকান তারা আর তৃপ্তিময় মুচকি একটা হাসি দেন সঙ্গে সঙ্গে।

 সোনা দিয়ে অনেক গান আছে আমাদের দেশে, সোনা সোনা সোনা লোকে বলে সোনা, সোনা তো নয় খাঁটি...। আমার সোনার বাংলা...। সোনা বন্ধে আমারে দিওয়ানা বানাইলি...। একি সোনার আলোয়...। একটা ছিল সোনার কন্যা...।

সোনা নিয়ে কার বাণীটা পৃথিবীর মানুষ কপাল কুঁচকে মনে রাখবে সবসময়? অবশ্যই আমাদের দেশের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাণী। সোনা নিয়ে তার মতো অশ্লীল আর অসভ্যময় বাণী পৃথিবীতে আর কেউ কখনো দেয়নি, দিতে পারবে না, দেবেও না।

বাণীটা শুনতে ইচ্ছে করছে আপনাদের?

আপনারাও কেমন যেন, অশ্লীল কথা শুনতে ইচ্ছে করে আপনাদের! তবে মার্কিন লেখক নীল স্টিফেনসনের বাণীটা শুনুন। তিনি বলেছেন, ‘সোনা হচ্ছে মূল্যের মৃতদেহ!’

১৮৬৬ পঠিত ... ২৩:৫৭, মে ২২, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top