জামালস্টোটলের জিপাবলিক

৫৩৯ পঠিত ... ১৬:৫০, মে ২৩, ২০২৩

জামালস্টোটলের-জিপাবলিক

প্লেটোর রিপাবলিক যে নগর রাষ্ট্রের পরিকল্পনা এঁকেছিলো; তার পরী ডানা মেলে উড়ে যাওয়ায়; থাকে শুধু কল্পনা। সেই সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ, জ্ঞানী, সম্পদহীন নিবেদিত প্রাণ রাষ্ট্রের ডাক্তার দার্শনিক নেতার দেখা মেলেনি আজও। প্লেটো বড্ড ভাবালুতাগ্রস্থ বলে, এরিস্টোটলের রাষ্ট্রভাবনা অনুযায়ী অলিগার্ক, সামন্ত মহল, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকেদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আধুনিক গণতান্ত্রিক মডেল গড়তে গিয়ে যেন শিব গড়তে বাঁদর গড়া হয়েছে।  

দেশে দেশে নরেন্দ্র মোদি, শাহবাজ শরিফ, রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ভ্লাদিমির পুতিন, কিম জং উন থেকে একরকমের বেহেশতের বাগানে আম্মা-খাম্মার দুধের নহরের পাশে বসে হাঁসকে দানা খাওয়ানো কিংবা নিজে মাটির সানকিতে দানা-পানি খাওয়ার মধুর ছবি।

হিটলার-মুসোলিনি-স্ট্যালিন-রবার্ট মুগাবে-মুয়াম্মার গাদ্দাফি-জর্জ ডব্লিউ বুশ যেন প্লেটোর ঘুমের মধ্যে এসে বলে, আইদার ইউ আর উইদ আস অর এগেইন্সট আস।

ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙে যায় প্লেটোর। ইচ্ছা করে এক্ষুণি গিয়ে এরিস্টোটলের থোতা মুখ ভোঁতা করে দিয়ে আসেন। আকাদিমিয়া প্লাতেনোস-এর দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। প্লেটো একটা মোটা বই এক থান ইটের মত হাতে বাগিয়ে দরজার কাছে যান; আজ প্লেটোর মাথা ফাটানো হবে।

দরজা খুলতেই হতভম্ব হয়ে যান প্লেটো। একটি লোক হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে। হাতে একটা ঠোঙ্গা। তা থেকে খুশবু এসে লাগে প্লেটোর নাসারন্ধ্রে।

: কে তুমি?

: জি আমি জামালস্টোটল।

: কী চাই!

: জি একটু জ্ঞান আহরণে এসেছি!

: কী জ্ঞান!

: জি রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান।

: এসো ভেতরে এসো।

ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে প্লেটোর পায়ে পড়ে যায় জামালস্টোটল।

: এ কী করছো একী করছো!

: আজ্ঞে ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়ো; দোঁসর জন্ম দিলা তিঁহ সে আন্ধার।

: তোমার হাতে ওটা কী!

: জি ছা-ছপ-ছমুছা; মাত্র দশটাকায় কিনে এনেছি উন্নয়ন রাজ্য থেকে।

: এমনিতেই তোমার তেলে তৈলাক্ত হয়ে গেছি; আবার তেলযুক্ত খাবার; দাও দেখি!

: জি জি স্বাদু খাবার; কল্যাণরাষ্ট্রের প্রসাদ। খেয়ে নিন স্যার।

: কল্যাণ রাষ্ট্র; সে কী ইহজগতে নাকি পরজগতে!

: জি স্যার এ একরকমের বেহেশতের বাগান স্যার। এর ওপর ভিত্তি করে লিখেছি, জিপাবলিক। পড়বেন স্যার!

: পড়ার সময় নাই; বলো দেখি কী লিখেছো।

জামালস্টোটল তার বুদ্ধিজীবীর ঝোলা থেকে কাঁচুমাচু করে বের করে পাণ্ডুলিপি। সে খসড়া খাতার আলো ঠিকরে পড়ে জামালস্টোটলের মাথার এম্ফিথিয়েটারে।

জামালস্টোটল পড়ে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ শাসকের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ উন্নয়নের লীলাভূমি হাজারবছরের গণতান্ত্রিক এই পূণ্যভূমি। এখানে টাকশালে টাকা আছে; সহমতশালে সহমত আছে; জিহুজুরশালে জি হুজুর আছে। তাই একে আমরা জিপাবলিক বলে গর্ব অনুভব করি। এখানে ভোটের ব্যালট পেপার ছাপিয়ে অর্থনাশ অপ্রয়োজনীয়। একমাত্র ভরসার স্থল তিনি।

তিনি বলতেই অশ্রুসজল হয় জামালস্টোটল। প্লেটো একটা রুমাল এগিয়ে দেন। পড়ো খোকা; শুনতে ভালো লাগছে; স্বপ্নের মতো লাগছে।

 জি স্যার জি স্যার বলে, জামালস্টোটল আবার শুরু করে, তিনি না চাইলে গাছের পাতা নড়ে না; ক্রিকেট ব্যাটে রান আসে না; বোলিং-এ উইকেট ভাঙ্গে না। তিনি সারারাত জাদুর কার্পেটে প্রার্থনামগ্ন থাকেন। লক্ষ্য রাখেন পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণে। কী অগ্নিকাণ্ড, কী ঘূর্ণিঝড়, কী বন্যা-খরা-করোনা মহামারী; সব এসে লুটিয়ে পড়ে ম্যাজিক কার্পেটের প্রান্তে।

প্লেটো চমকে ওঠেন; এ যে আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে গণতন্ত্রের সোনালী মিশেল হে জামালস্টোটল। এ যে ধন্বন্তরী; সক্রেটিস-এরিস্টোটল কেউই ভাবতে পারেননি এমন জাদুবাস্তব রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা। যাও পুড়িয়ে ফেলো রিপাবলিক। আজ থেকে জিপাবলিকই এক ও অনন্য।

: জি স্যার আপনার করকমলে কিছু পদক কী রাখতে পারি; এথেন্সে আমাদের গণতন্ত্রের বন্ধুর জন্য উনি এই সম্মাননা পাঠিয়েছেন।

জামালস্টোটল প্লেটোর পকেটে অনেকগুলো মেডেল ঝুলিয়ে দিলে তাকে যেন চিফ অফ আর্মি স্টাফের মতো লাগে।

: ওহে জামালস্টোটল আইনের শাসন কী আছে সেখানে!

: জি স্যার জি স্যার। আইনের চোখে সবাই সমান। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অপরাধ ধরা পড়লে চুপ্পি চুপ্পি তাদের দুর্নীতির তদন্ত করে তারপর টুস করে ফেলে দেয়া হয় খরস্রোতা নদীতে। জিপাবলিক তো আইনের সাজানো বাগান; কোথাও আগাছা জন্মালে সুসজ্জিত কোটাল পুত্ররা ন্যায়দণ্ড দিয়ে সেসব আগাছা কেটে ফেলে।

: তা জনমত কী গুরুত্ব পায়!

: জি স্যার জি স্যার জি হুজুরটাই জনমত। এর অন্যথা হলে আয়নাঘরে নিয়ে গিয়ে এনার্জি বিসকিট খাওয়ালে বেশ জি হুজুর জি হুজুর রবে বেরিয়ে আসে; দেশের শত্রু ও উন্নয়ন চেতনার শত্রুরা।

: জামালস্টোটল নির্বাচনী ব্যবস্থাটা কেমন!

: জি হুজুর উনি মনোনীত করলেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত। লাইলাতুল ইলেকশনের পবিত্র রজনীতে গণতন্ত্রের বুটের হালুয়া খাইয়ে মনোনীতদের ব্যাপ্টিজম করা হয়; এরপর তারা শুদ্ধ পুরুষ।

: আধুনিক গণতন্ত্রে শুনেছি নানা ইজমের লোক থাকে!

: জিহুজুর  উনার চেতনার রং-এ হীরা হয়ে ওঠে লাল; পান্না হয় সবুজ।

: তোমার কথা শুনে বড্ড লোভ হচ্ছে ওখানে যেতে।

: জি স্যার যাবেন স্যার; মাত্র দুইবছর ওখানে গিয়ে জিপাবলিকের সহমত ভাই হিসেবে কাজ করলেই; হাজার কোটি মুদ্রা উপার্জন করে; তারপর হুন্ডি করে এনে এই শুন্ডি রাজ্যে আপনার ভাঙ্গা স্কুল ঘর প্রোমোটারের হাতে দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে পারবেন।

: আমি রাজি; এখন কী করতে হবে বলো!

: জি স্যার, জাস্ট একটা বিবৃতিতে সই করুন। তারপর দেখি, গবেষক ব্ল্যাক পার্লকে দিয়ে কারো লেখা বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি চিহ্নিত করে; তাকে চেয়ার থেকে ফেলে দিয়ে আপনাকে সে চেয়ারে বসানো যাবে স্যার।

প্লেটো ছমুছায় কামড় দেন, আনন্দে তার চোখ মুদে যায়, অশ্রুসজল চোখে বলেন, জয় জিপাবলিকের জয়।  উনি দীর্ঘজীবী  হউন। উনি বাঁচলেই আমরা বাঁচবো। উনিই পারেন; উনিই পারবেন।

৫৩৯ পঠিত ... ১৬:৫০, মে ২৩, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top