ছোটবেলায় শেষ ইফতার মুখে দিয়েই মাঠে চলে যেতাম ইদের চাঁদ দেখার জন্য। চাঁদ দেখে বাসায় ফিরে শুনতাম বিটিভিতে বাজছে 'ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ'। আর পাড়ার ছেলেরা মোড়ে সাউন্ড বক্স এনে উড়াধুরা হিন্দি আর ইংলিশ গান ছেড়ে দিত। এসবই ছিল ইদের আমেজ, ইদ মানেই ছিল এসব। ৮টা বাজলে মসজিদে মসজিদে মাইকিং হতো ইদের জামাতের টাইম টেবিল নিয়ে। ৩০ দিনের শুকনো রোযার দিনগুলো কয়েক মুহূর্তেই হয়ে উঠতো প্রানবন্ত।
বয়স বেড়েছে, ওইগুলো এখন আর টানে না, তবে ইদের ফিলিংসটা টের পাই যখন দেখি প্রিয় শহরটা ভারমুক্ত হয় ফাকা হয়ে উঠেছে। জানি না আর কোন মোহাম্মাদপুরবাসীর এই অনুভুতিটা কাজ করে কিনা, মোহাম্মাদপুরকে আমার আদি ঢাকার একটা অংশই মনে হয়, এই মিরপুর রোড ধরে নিউমার্কেট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ভেতর দিয়ে গুলিস্তান, এরপর পুরান ঢাকা, কোথায় যেন একটা ক্লোজ কানেকশন আছে।
আজ বেরিয়েছিলাম ফাঁকা ঢাকা দেখতে আর মেয়েদের সি-অফ করতে। ফাঁকা ঢাকা দেখে মন জুড়িয়ে গেল। ঢাকা নির্জন রূপ দেখা যায় শুধুমাত্র বছরের এই সময়টাতেই, যখন সবাই বাড়ী চলে যায়। জাদুর শহর ঢাকার তখন আর কোন দর্শন থাকে না।
এই রোডে কখনো দাঁড়িয়ে ছবি তুলব সেই চিন্তা দুঃস্বপ্নেও কেউ করবে না। কারন, এটা সদরঘাটের ঠিক সামনে!
সদরঘাট থেকে গুলিস্তানের দিকে চললে পড়বে নয়াবাজার মোড়, সোজা চলে গেলে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা ব্রিজ, ডানে গেলে ইংলিশ রোড, বংশাল।
ঠিক পেছনেই সারা বছর জ্যামে আটকে থাকা ফাঁকা ইংলিশ রোড, কী সুন্দর দৃশ্য!
সামনেই আল-রাজ্জাক হোটেলখ্যাত বংশাল রোড, কার্ফু ডাকলেও এই রোড এরকম ফাঁকা হবে কিনা সন্দেহ!
টিএসসিতে আমি একটু ভয়ই পেয়েছি, ফাঁকা শূনশান জায়গায় আসলে যেমন একটু ভয় ভয় করে অমন।
কার্জন হল ছুটিতে, ছুটিতে পুরো দেশ।
এই রাস্তায়ও ভয় লেগেছে, ভাবছিলাম আজ আমি নিরাপদে বাসায় পৌঁছতে পারব তো! সামনেই নীলক্ষেত মোড়, তবে এই রাস্তায় ক্রিকেট খেলার পারফেক্ট সময়, কেউ নাই।
পেছনে বিখ্যাত নিউমার্কেট ওভারব্রিজ আর তার নিচে ফাঁকা রাস্তা! কি ভয়ংকর!
মিরপুর রোড, যেখানে বাস আর প্রাইভেট কারের মেলা, আজ সেখানে কেও নেই, কোথাও কেও নেই!
ধানমন্ডি ২৭, আরেকটি ব্যাস্ত সিগন্যালে আজ শুধু বুক হুহু করা শুন্যতা।
আসাদ এভিনিউ, ছায়া ঘেরা, মনোরম একটি সড়ক।
এই জানালা, ওই জানালার খুনসুটি, আমার আপনার সব পাড়ার গল্প।