ছাত্র-শিক্ষিকার প্রেমের উপাখ্যান

১৬৬৪ পঠিত ... ১৪:৪১, জুন ১৬, ২০২২

Premer-kahon

ছাত্র পড়াতে গেলাম। ছাত্রের পড়ায় মন নাই। অনুমান করলাম ছাত্র আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

তখন আমি কলেজে পড়ি। ছাত্র পড়ে ক্লাশ এইটে। জেএসসি পরীক্ষার দুই মাস আগে পড়াতে গেলাম। সামনে পরীক্ষা, প্রচুর পড়ার চাপ। কিন্তু ছাত্রের পড়ায় মন নাই। পড়াতে গেলে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে, কত কিছু যেন ভাবে। সরাসরি কিছু না বললেও আমি বেশ বুঝতে পারলাম ছাত্র প্রেমের পুকুরে সাঁতার কাটছে।

মেয়েদের প্রথম প্রেম হয় গৃহশিক্ষকের সাথে। আমার বেলায় দেখছি উলটা। আমি বুঝেও না বুঝার ভান করেই পড়াতে যাই৷ ছাত্র তো পড়ে না। লিখতে দিলে কলম হাতে নিয়ে বসে থাকে। পড়তে দিলে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। পাত্তা দেবো না দেবো না করেও ওর প্রতি আমার একটা টান চলে আসলো।

আমিও ভাবতে থাকি ছেলে যদি সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে তাহলে কী করব? আমি কি না করব না-কি প্রেম করব? এত প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছিলাম না। তখন-ই দেখি প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বিয়ে করছে তার চেয়ে দশ বছরের ছোটো ছেলেকে। মনে একটু আশার সঞ্চয় হল।

প্রথমদিকে সপ্তাহে তিনদিন পড়াতাম। একদিন ছাত্র জানালো আমি যেন প্রতিদিন পড়াতে আসি। ওর এত আগ্রহ দেখে আমিও প্রতিদিন পড়ানো শুরু করি। এত প্রেম! ভাবা যায়?

কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব দিতে এত দেরি করছে!

ওর বই হাতে নিলে পুরোটা উলোটপালোট করে দেখতাম, ভেতরে কোনো চিরকুট দিলো না-কি! সাংকেতিক সংখ্যায় খাতায় ‘134’ মানে, আমি তোমাকে ভালোবাসি এসব লেখা আছে না-কি! আমার নামের অক্ষরের সাথে তার নামের অক্ষর যোগ চিহ্ন দিয়ে কিছু লিখলো না-কি!  কিছুই পাইনি। কিন্তু ছাত্রের পড়ায় মন নাই, চোখেমুখে প্রেম দেখা যায়।

মাঝেমধ্যে পায়ের উপর সুড়সুড়ি দিতো। আমার অবশ্য ভালোও লাগতো। আমি বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে থাকতাম৷ এক্ষেত্রে গৃহশিক্ষকেরা কী করেন এটা তো জানা নাই আমার। আমার ভীষণ ইচ্ছা করতো একবার পায়ের উপর পা রাখি। যেহেতু ছাত্র সরাসরি কিছু বলেনি তাই এতটা বাড়াবাড়ি করিনি। একদিন পা দিতে যাব তাকিয়ে দেখি একটা তেলাপোকা দৌড়িয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস আগে কখনও নিচে তাকিয়ে দেখিনি৷ কী ভীষণ বোকা হলাম সেদিন।

একদিন পড়াতে গেলাম। তার বাসায় কেউ নেই। ছাত্র আমার হাত ধরে ফেললো। আজ বোধহয় সেই আকাঙ্ক্ষিত দিন, আজ তবে বলেই ফেলবে। বলবে ভালো কথা তাই বলে সরাসরি হাতে ধরে ফেলবে! আমার ভীষণ লজ্জা লজ্জা লাগছিল।

ছাত্রের চোখেমুখে প্রেম। উপচে পড়া প্রেম।

আমার হাত ধরে সে বললো,

" ম্যাডাম আপনার ফোনটা একটু দেবেন? আমার গফকে একটু ম্যাসেজ করব।বাবা আমার ফোন নিয়ে গেছে। প্লিজ ম্যাডাম, কথাটা রাখেন। আপনার হাতে ধরছি। আপনি বললে পায়েও ধরতে পারি একটু ফোনটা দেন না প্লিজ। "

প্রেমের রহস্য উদঘাটন হল। তার গার্লফ্রেন্ড ক্লাশ সেভেনে পড়ে। দুইজনে একই স্কুলে পড়ে। সামনে পরীক্ষা তাই ছাত্রের কাছে ফোন নেই। ওদিকে মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না তাই তার পড়ালেখাতেও মন ছিল না। প্রথম পনেরো দিন সে আমাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর তার মনে

হয়েছে আমাকে বিশ্বাস করা যায় তাই সে আমার দিকে ঐভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো। প্রতিদিন যেন ম্যাসেজ দিতে পারে তাই আমাকে প্রতিদিন পড়াতে বলেছিল।

ছাত্রের গফেরও নিজের ফোন নেই। সে তার গৃহশিক্ষকের ফোন থেকে আমার ফোনে ম্যাসেজ দেয়। দুইজনে সময় মিলিয়ে প্রাইভেট পড়ার সময় ঠিক করেছে। বেচারা গৃহ শিক্ষকের জন্য  মাঝেমধ্যে  আমার টান অনুভব হতো।

এতকিছুর পরেও পড়ানো বাদ দিলাম না। সামনেই তার জেএসসি পরীক্ষা। সবকিছু সহ্য করেই পরীক্ষা অবধি পড়াব বলে পড়াতে যাই।

পরীক্ষার কিছুদিন আগে ছাত্র আর আমার ফোন চাইনি। আগের মতো আমার সাথে বেশি কথাও বলে না। মনমরা থাকে কিছুটা৷ পরীক্ষা সামনে তাই হয়তো চুপচাপ আছে।

পরীক্ষাটা ভালোই ভালোই  শেষ হল। শেষদিন বেতনের খামটা হাতে নিয়েই চলে আসলাম। ওর বাবা ময়মনসিংহ থেকে চাঁদপুর ট্রান্সফার হয়ে গেল।

বেতনের খামের ভেতর একটা চিরকুট পেলাম। তাতে লেখা ছিল,

" ম্যাডাম, আমার গফ কিছুদিন আগে তার গৃহশিক্ষকের সাথে পালিয়ে গেছে। প্রথম প্রথম খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। প্রথম প্রেম তো ভুলা যায় না। পরীক্ষা ভালো হয়েছে। আপনি ভালো পড়ান।

আর আপনি দেখতে খুব সুন্দর, বয়সে ছোটো হলে আপনার সাথে প্রেম করতাম।"

ছাত্রীর সাথে গৃহশিক্ষকের-ই প্রেম হবে স্বাভাবিক!  এটাই ঠিক গল্প। কিন্তু মেয়েটা একটা মুরাদ টাকলার সাথে ভেগে গেল ভেবে খুব আফসোস হল। সেই স্যার মাঝেমধ্যে আমাকেও ম্যাসেজ লিখতো। যেমন :

Omor pram asa sargo thk. Na dakai tmk vlobasi, tbu tmi bugo na kn? I lav u.

আমি আসলেই বুগিনি, বুগিনি বলেই তার সাথে প্রেম করিনি।

ভার্সিটি বন্ধ। বাড়িতে আছি। গতকাল এলাকার এক আন্টি তার ছেলেকে পড়ানোর কথা বললেন। ছেলে কলেজে পড়ে। "ইন্টারের ছেলে অনার্সের মেয়ে " এই বইটা এখন ভীষণ প্রয়োজন।

লেখা: ইসরাত ইমু

১৬৬৪ পঠিত ... ১৪:৪১, জুন ১৬, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top