দল ও একাদশ নির্বাচনে অধিনায়ক কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের মতামতকে আমলেই না নেয়া, অপছন্দের খেলোয়াড়দের দলে সুযোগ না দেয়া ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ চন্দ্রিকা হাথুড়েসিংহে ছিলেন অনেকদিন ধরেই সমালোচিত। সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের চূড়ান্ত ব্যর্থতার পর কোচ বদল যে হচ্ছেই, তাও নিশ্চিত ছিল বটে। অবশেষে গতকাল নিজেই পদত্যাগ করেছেন হাথুড়েসিংহে। এতদিন ধরে বাংলাদেশ দলের অনেক সাফল্য-ব্যর্থতার অংশীদার এই কোচ একটি বিদায়ী মানপত্র তো পেতেই পারেন। হাথুড়েসিংহের জন্য তাই একটি মানপত্র পেশ করছে eআরকি।
হে বিদায়ী গুরু,
ফাগুন বেলা, শোভিত শিমুল-পলাশের বন, কোকিলের কুহুতান, মেঘমুক্ত মাঠ, কর্দমাক্ত আকাশ। দেশীয় ক্রিকেটের এমনই এক উদাসী ক্ষণে পদত্যাগ নামের বেদনা বিধুর পর্বে আমরা উপনীত হয়েছি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দলের প্রধান গুরু হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর নিয়মের বাধ্যবাধকতা আর সময়ের তাগিদে আপনার পদত্যাগপত্র যেন এক অসহনীয় যন্ত্রণার নির্মম বাস্তবতা। তাইতো বিদায়ের করুণ সুরে আমাদের অন্তর আজ অব্যক্ত বেদনায় ভারাক্রান্ত। আমাদের হৃদয়-মন আজ বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন; আমাদের চোখ আজ অশ্রু ছল ছল, ক্রমাগত অশ্রুর জলধারায় আমরা তাকাতে পারতেছিনে...
হে ক্রিকেটবোদ্ধা,
নবীনদের অন্তরে ক্রিকেটীয় আলো জ্বালাবার মহান দায়িত্ব নিয়ে একদিন যে পথে আপনার যাত্রা শুরু হয়েছিল, অবসর গ্রহণের মাধ্যমে আপনি সে পথের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছেন। কিন্তু এর মাঝে জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন অগণিত অন্তরে ক্রিকেটীয় দাবানল । নবীনদের ভুলসমূহ শুধরে দেয়ার কাজ না করে তাদেরকে করেছেন দলে ব্রাত্য! তবুও আমাদের অগ্রজদের অনেকেই আজ শত ক্রোশ দূরে থেকেও আপনার মত মহান কর্মীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, কারণ সিদ্ধান্তের আপনার সমালোচনা করলে। তাদের অনুজ হিসেবে আমরাও আপনার প্রতি পরম শ্রদ্ধায় অবনত থাকার অভিনয় করছি।
হে নিরলস কর্মী,
পছন্দের ক্রিকেটারকে দলে রাখা এবং অপছন্দের খেলোয়াড়কে সুযোগই না দেয়ার ক্রিকেটব্রত পালনে আপনি ছিলেন নিরলস কর্মী। তাইতো আপনার প্রতিটি দিন ছিল কর্মমুখর। আপনি কারো চোখ রাঙানি কিংবা এমনকি মতামতের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো দল সাজিয়ে গেছেন। নিজ দায়িত্বের প্রতি আপনি ছিলেন দায়িত্বের চাইতেও বেশি কর্তব্যনিষ্ঠ, সেটা অতীত ঘাটলেই টের পাওয়া যায়। নাসির মুমিনুল আপনার এহেন কর্মমুখরতার সাক্ষী হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। আপনার কর্তব্যনিষ্ঠার সুবাদে আমরা ক্রিকেটীয় জ্ঞানের যে আলোকবর্তিকা পেয়েছি, তা আমরা খুব দ্রুত নিভিয়ে দিতে চাই। যেন তা ভবিষ্যতে আমাদের ভুল পথ না দেখাতে পারে।
হে মহানুভব,
আজ আপনাকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের মাঝে কান্নার রোল ধ্বনিত না হলেও আমাদের ফেসবুকের প্রতিটি টাইমলাইন আজ বাষ্পরুদ্ধ; আমাদের প্রত্যেকের মেসেঞ্জারে আজ কান্নার ইমো। হোমপেজ আর ক্রিকেভক্তদের গ্রুপগুলোতে আলোচনা ঝড়! স্নেহভাজন হিসেবে আমরা আপনার কাছাকাছি ছিলাম, ম্যাচ হারলেই আপনার দল নির্বাচনের ওপর সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে বড় নির্ভার থাকা যেত। সত্য স্তুতি চপলতায় হয়ত কখনো মনের অজান্তে আমরা আপনার বিরক্তির কারণ হয়েছি; আমাদের কথায় বা আচরণে কিংবা ফেসবুকীয় ট্রলে হয়ত আপনি কষ্ট পেয়েছেন। আজ এ বিদায় লগ্নে আপনার মহানুভবতার কাছে আমাদের দাবি- আপনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।
পরিশেষে আপনার পদত্যাগ জীবন যাই হোক, আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটজীবন হোক অনাবিল সুখ-শান্তিতে সমৃদ্ধ, পরম করুণাময়ের কাছে এই আমাদের প্রার্থনা।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন