যোহরান বাংলাদেশী হলে প্রথম আলো তার সফল যারা কেমন তারা ফিচার ধারাবাহিকে লিখতো, বাংলাদেশী ছেলে, মাতিয়েছে নিউইয়র্কবাসীর প্রাণ। তিনি এলেন দেখলেন জয় করলেন। তাক লাগিয়ে দিলেন গোটা বিশ্বকে।
অমনি ফেসবুকে লাভ লাইক দিয়ে আমাদের ছেলে যোহরান, সোনার ছেলে যোহরান, বাংলাদেশের গর্ব ইত্যাদি বলে অশ্রু জলে কেঁপে কেঁপে উঠতো আবাল বৃদ্ধ বণিতা।
বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের ৬৫টি বুম মাইক্রোফোন নিয়ে হাজির হয়ে যেতো তার বাসায়। ১৫৮ জন ইউটিউবার তাদের মোবাইল ফোনে ধারণ করতো তার বক্তব্য।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক এডজাংকট ফ্যাকাল্টি ফুরফুরে দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলতো, তা তো বুঝলাম, যোহরান মুসলমানের পোলা হইয়া এলজিবিটিকিউ আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা করতেছে; এইগুলি তো শরিয়া বিরোধী কাম।
বাঁশের কেল্লা তখন যোহরানকে সাত রঙ্গা জামা পরিয়ে ফটোশপ করে শাতিম শাতিম বলে কলরব তুলতো। কেউ কেউ দাঁত কেলিয়ে বলতো, তুমার মায়ের ফায়ার ছবি দেইখাই বুঝছি; তুমি হইতেয়াছো গে-লেসবিয়ানগো এজেন্ট।
সুষুপ্ত স্যাফরন আলাপটার অন্য একটা এঙ্গেল এনে বলতো, যোহরানের বাবা লাভ জিহাদ করে বিয়ে করেছিলো তার মাকে। তার মায়েরে কোনদিন পূজা দিতে দেখিনি। কে জানে গোপনে হয়তো ইসলাম ধর্ম পালন করে। ছেলের মুসলিম নাম দেখেই বোঝা যায়।
বজরঙ্গি ভাই কথা কেড়ে নিয়ে বলতো, গুজরাটে মোদি গণহত্যা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে একটা ইন্টারভিউ-এ। ও ব্যাটা আসলে মুসলিম ব্রাদারহুড। প্রগতিশীল মোটেও নয়।
ভটভটি আপা এসে কান্দন জুড়ে দিতো, এতো ইন্টারভিউ দিলো, কোথাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথাটা উল্লেখ করলো না। রাজাকার পাকি কুনহানকার।
দিশেহারা আপা এসে আলুথালু হয়ে বলতো, জুলাই বিপ্লবের কথা মুখেও নিলো না। লোকটা আসলে ভারত পন্থী। রেন্ডিয়ার আঁতে ঘা লাগে এমন কথা বলবে কি করে!
সিপি গ্যাং চ বর্গীয় গালি দিয়ে বলতো, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা না জানাইয়া কিসের ইলেকশন করে সে; ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড।
নব উত্থিত জিয়া সাইবার ফোর্স বলতো, জিয়ার কথা না হয় স্মরণে না থাকলো, তারেক ভাইয়ার নামটা নিলেও পারতো। যোহরান বেশি বাইড়ো না।
বাংলাদেশের এক পিএইচডি ভাইয়া এসে ঢেলে দিতো অভিজ্ঞতা, আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। পরীক্ষার হলে আমার পিছনে বসতো আর দেইখা দেইখা লিখতো। অহন তো চিন্তারে না। সেলফিশ কুনহানকার।
যোহরানের ইলেকশন ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী এক আন্টি টেলিফোন কল ফাঁস করে দিতো। কালের কন্ঠ তা নিয়ে শুরু করতো, যোহরান না মরা পর্যন্ত চালাইয়া যাওয়া সিরিজ।
ফেসবুকের অনুসন্ধানী সাংবাদিক কয়েকটা মানি রিসিট আপলোড করে বলতো, দেখো দেখো যোহরান জায়নিস্ট গো কাছে বাড়ি বেচছে; হাউজিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করার সময়।
বাঁশের কেল্লা আবার তাকে জায়নিস্ট তকমা দিয়ে ফটোশপ করে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বসে শলা পরামর্শ করার ছবি বানিয়ে ভাইরাল করে দিতো।
ব্রেকিং নিউজ নিয়ে হাজির হতো সিপি গ্যাং। যোহরানের উপাঙ্গের দৈর্ঘ্য কত ইঞ্চি তা নিয়ে হাসাহাসি করে ফেমিনিস্ট রেভোলিউশান করে ফেলতো ললিতা। সে গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করতো, হানি ট্র্যাপ কইরা মাপামাপি কইরা আসছি।
শুরু হতো স্ক্রিনশট ফাঁস সিরিজ। আকলিমা নদী, আলপনা সাহা এসে জানাতো, ইনবক্সে কিরকম লুল ঐ যোহরান। দুনিয়ার সব মেয়ে ফেলে সে এই অপ্সরীদের ইনবক্সে পড়ে থাকে।
বামপন্থী রাজবল্লভ এসে বলতো, যতই সোশ্যালিস্টের ভং ধরে থাকুক; আসলে তো সে সাম্রাজ্যবাদী দালাল; নাইলে ইউনুস যে বন্দর বেচে দিচ্ছে; তা নিয়ে একটি প্রতিবাদ তো অন্তত করতো।
অতঃপর ফেসবুকের জাতির বিবেকেরা এসে অনুসিদ্ধান্ত টানতো, মানুষরে বাইরে থেকে যতই সুশীল দেখাক, ভেতরের মানুষটাকে দেখলে আর শ্রদ্ধা থাকে না। এতো দুঃশ্চরিত্র মানুষ হয় কেমন করে। আমি তো আমার বাচ্চাটা যখন ঘুমায়, তখন তার মুখের দিকে তাকাইয়া একটা জীবন কাটাইয়া দিতে পারি।
এইভাবে একটা জনমত গড়ে ওঠে, ফেসবুকের সব মানুষ সৎ চরিত্র, বিশুদ্ধ ও সাধু পুরুষ; আর যত নষ্টের গোড়া ঐ যোহরান।
পাঠকের মন্তব্য