মোহাম্মদপুরে বাইক নিয়ে ঢুকলেই তেল রেখে দিচ্ছে কে বা কারা

৯৬০ পঠিত ... ২০:১১, আগস্ট ০৬, ২০২২

Mohammadpur

প্রখর গরমের দুপুরে মটরসাইকেল ঠেলে মোহাম্মদপুরের জনাকীর্ণ রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছিলেন মোঃ আতা মিয়া। বাইকে কোন সমস্যা আছে কি না, এমন প্রশ্নে কিছুটা হতাশ হয়ে তিনি জানালেন এক করুণ কাহিনী। ট্যাংক ভর্তি তেল নিয়ে আসাদগেট পেট্রোল পাম্প থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণের মাঝেই পুলিশ বক্সের একটু সামনে তিন যুবক তার বাইক থামান। এরপর আতা মিয়াকে ভুংভাং গল্পে আটকে রেখে হ্যান্ড পাম্পের মাধ্যমে দুটি ছোট প্ল্যাস্টিকের কন্টেইনার ও একটি পলিথিনে বাইকের সমস্ত তেল বের করে তিন যুবক হাওয়া হয়ে যান।

গতরাত থেকে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধি হওয়ায় মোহাম্মদপুর এলাকায় বাইক নিয়ে ঢুকলেই নানান কায়দায় তেল রেখে দিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আতা মিয়ার মত আরও অনেক ভুক্তভোগী এই প্রতিবেদকের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন। কাল্পনিক সূত্রমতে, মোহাম্মদপুর এলাকায় এই চক্রটি আগে ভোজ্যতেল মজুদের ব্যবসা করত। লাভজনক হওয়ায় এখন তারা ঝুঁকেছে জ্বালানি তেলের দিকে।

পুরান ঢাকার সহমত ভাই বাইকারদের পনেরো জনের একটি দল মোহাম্মদপুরে ছুটির দিনে বেড়াতে এসে প্রায় ছেচল্লিশ লিটার তেল হারিয়েছেন। তাদেরই একজন আপেল আহম্মেদ। আপেল জানান, ‘নেতার সাথে থাকলে তাকে তেল দিতে হয়। কোন অফিসে গেলে তেল ও ঘুষ একসাথে দিতে হয়। প্রেমিকার বাসায় বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটার চালানোর সময়েও বাইকের তেল বের করে দিই। সারা সপ্তাহে এমন নানান ঝক্কির পর যখন বিনোদনের জন্য মোহাম্মদপুরে এলাম, তখন আমাদের বাইকের শেষ বিন্দু তেলটুকুও শুষে নিল লুটেরার দল।।

সারাদিনে অন্তত ৪৩ জন ব্যক্তির সাথে কথা বলে ঘটনার অসত্যতা পাওয়া গেছে। তেল সরিয়ে কি করা হয়, সেই অনুসন্ধানে নেমে পাওয়া গেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাজমহল রোডের গোপন একটি আস্তানায় রাতারাতি তেলের ডিপো বানিয়ে মটোর সাইকেলের তেল জমা করা হচ্ছে। একইসাথে সেই তেল উচ্চমূল্যে সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে, পেট্রোল পাম্পে ও অফিসে। তেল সরানো চক্রের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য মতি মিয়া জানান, তেল ছাড়া দুনিয়া অচল। আর সেই সুযোগটিই নিচ্ছেন তারা।

একজন তেলবাজের ছদ্মবেশে মোহাম্মদপুর এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা গেছে, তেলের জন্য বাইকারদের হাহাকার। প্রতি রাস্তায় দু-একজন বাইকারকে পাওয়া গেছে যাদের বাইকের তেল হ্যান্ডপাম্প, সিরিঞ্জ, রাবারের পাইপের মাধ্যমে রেখে দেয়া হয়েছে।

তেলের দাম বৃদ্ধির পর নাগরিকদের এমন ভোগান্তিতে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আমাদের একটি গান গেয়ে শুনান। সুরে সুরে তিনি বলেন, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া, বাত্তি যায় নিভিয়া, কী হবে আর কান্দিয়া!’

মোহাম্মদপুরের এই তেলখনি যদি কারো চোখে পড়ে যায়, তাহলে সেখানে হামলা করে তেল লুণ্ঠন করা হতে পারে। এমন আশংকা থেকেই তাজমহল রোডসহ অন্যান্য গোপন তেলাঞ্চলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

৯৬০ পঠিত ... ২০:১১, আগস্ট ০৬, ২০২২

Top