পৃথিবীর প্রাচীনতম জোকবুক কোনটি? সেই বইয়ের জোকগুলোই বা কেমন?

৪৩২৪ পঠিত ... ১৮:০৫, মার্চ ০৪, ২০২০

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম জোকবুক কোনটা?  সেই বইয়ের জোকগুলা কেমন? কেমন ছিলো ওই জোকগুলার ভোক্তাদের রুচি?      

হিউমারে আগ্রহী বলে আরও অনেক প্রশ্নের সাথে এইসব ভাবতাম। কিছু প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম প্রাচীন এক বইয়ে। বইটার নাম ফিলোজেলোস।    

ফিলোজেলোস (হাসি-প্রেমী) ২৬৫টা জোকের একটা সংকলন।  

ফিলোজেলোস এখন পর্যন্ত রেকর্ডেড প্রাচীনতম জোক বই হইলেও প্রাচীনতম জোকটা কিন্তু এই বইয়ের না। সেই জোকটা আরও পুরনো, লো-ব্রাউ সুমেরীয় সভ্যতার সময়ের একটা জোক। আরও নির্দিষ্ট করলে আসলে ওয়ানলাইনার।   

প্রত্মতাত্ত্বিক-গবেষকদের ধারণা জোকটা অন্তত যিশু খ্রিষ্টের জন্মের ১৯০০ বছর আগের। এই যুগের হিউমার পাঠকদের জন্যে জোকটা পড়া হতাশাজনক অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা।

তো, জোকটা মোটামুটি এমন: ‘কোনো নারী স্বামীর কোলে বইসা পাদ দেয় নাই এমন ঘটনা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে কখনও ঘটে নাই।’

ফালতু হইলেও ঐতিহাসিক দিক দিয়া জোকটার গুরুত্ব আছে।  

বই থেকে কয়েকটা ‘চলনসই’ জোক তর্জমা করার আগে সংকলনটা নিয়া দুই-একটা কথা বইলা নিই।   

ফিলোজেলোস নামটাই ফিলোসফোস (প্রজ্ঞাপ্রেমী), ফিলোটিমোস (সম্মানপ্রেমী) এই ধরনের সিরিয়াস বইয়ের নামের প্যারডি। সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ বা পঞ্চম শতাব্দীর দিকে সংকলিত। কিছু পান্ডুলিপিটির সংকলক হিসেবে হিয়েরোকলস এবং ফিলাগ্রিওস- এর নাম পাওয়া যায়। অন্যগুলিতে এদের একজন বা দুজনের নাম অনুপস্থিত।

ফিলোজেলোস যদিও টিকে থাকা সবচেয়ে পুরান জোক বুক, জোকবুক তারও আগেও পৃথিবীতে ছিলো। এথেনাউস এর বরাতে জানা যায়, মাকিদনের ফিলিপ দ্য গ্রেট এথেন্সের ‘ষাট জনের দল’ নামের একটা ক্লাবের সদস্যদের রসিকতা লিখে রাখার জন্যে মোটা অংকের টাকা দিতেন। রোমান সাইডে প্ল্যাটুস এক ধরণের  জোক বুকের কথা নাটকে উল্লেখ করছেন।  

রাপ আর বল্ডউইনের মতো মডার্ন স্কলাররা দেখাইছেন, নারীরা কিভাবে বিভিন্ন জোকের টার্গেট। অবশ্য 'হর্নি উইমেন' নামে একটা ক্যাটিগরি আছে নারীদের নিয়া। সংকলনে যদিও এই ক্যাটিগরির জোক আছে মাত্র দুইটা।   

‘মিসজিনিস্টিক মেন’ নামের একটা ক্যাটিগরি আছে। যদিও নাম মিসজিনিস্টিক ম্যান, জোকগুলার টার্গেট বা বাট ( বাট অফ দ্য জোক) নারীই মনে হইতেছে।  একটা ব্যাপারে গবেষকেরা বেশ অবাক হইছেন: ফিলোজেলোসে হোমোসেক্সুয়াল থিমের অনুপস্থিতি। অথচ ঐ সময়ে হোমোসেক্সুয়ালিটি মোটামুটি কমন ছিলো প্রাচীন গ্রিস প্রভৃতি সমাজে। [একটা ট্রিভিয়া: দার্শনিক প্লেটোর চোখে উত্তম প্রেম হইতেছে অল্প বয়সী বালকের সাথে বয়স্ক পুরুষের প্রেম!]   

সামনে আগানোর আগে, পাঠকদের উদ্দেশ্যে একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দিই। 

জোকগুলা পড়তে গেলে এই যুগে ‘অনুভুতিতে আঘাত লাগা’র সম্ভাবনাই বেশি। লো-ব্রাউ জোকের এমন একটা সংকলন যা পলিটিক্যালি একদমই কারেক্ট না। বেশিরভাগ জোক সেক্সিট, রেসিস্ট, ভায়োলেন্ট। কিন্তু এইগুলা তখনকার দুনিয়ার (তৃতীয় বা চতুর্থ খ্রিষ্টাব্দ ) বাস্তবতারই প্রতিফলন।   আর আগ্রহী পাঠকেরা যাতে বইয়ের জোকগুলার সাথে অনুবাদ মিলায়ে নিতে পারে, অনুবাদের ভুল ত্রুটি যাচাই করতে পারে, সেই কারণে বইয়ের জোক নাম্বারও উল্লেখ কইরা দিলাম।    

বইটার প্রায় অর্ধেকের মতো জোক যাদের নিয়া তাদের নাম 'স্কলাস্টিকো' বা ইউনিভার্সিটিম্যান। অনেকে স্কলাস্টিকোর অনুবাদ  ইন্টেলেকচুয়াল হিসাবেও করছেন। বাংলায় বুদ্ধিজীবীও বলা যায়। এই জোকগুলা ইংরেজি থেকে বাংলা করার সময় আমি 'পন্ডিত' শব্দটাই পছন্দ করছি।

 

পন্ডিতদের নিয়া 

# ৫৭
এক পন্ডিত তার দাসীরে প্রেগনেন্ট বানায়ে ফেলছে। বাচ্চা হইলে, পন্ডিত বাপে বললো, বাচ্চাটারে মাইরা ফালাও। পন্ডিত বললো, আগে আপনার সন্তানরে মারেন, তারপর আমার সন্তানরে মারার কথা বলতে আইসেন।     

# ৭০
একজন পন্ডিত তার অসুস্থ বন্ধুরে দেখতে আসলো। বন্ধুর স্ত্রী তারে জানাইলো, ‘সে চলে গেছে।’ পন্ডিত বললো, বন্ধু ফিরলে তারে বলবেন, যে আমি আসছিলাম। 

# ৯৮
পন্ডিত এক বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু বললো, অভিনন্দন। তুমি একটা বাচ্চা ছেলে পাইলা।
পন্ডিত বললো, এজন্য তোমাদের মতো বন্ধুদের ধন্যবাদ।  

 

বিবিধ বিষয়:   

# ১০৭
চাপাবাজ এক লোক ছিলো। লোকটা গরিব। হঠাৎ করে সে একদিন অসুস্থ হয়ে উঠল। তার প্রেমিকা না জানায়ে চলে আলো তারে দেখতে। এসে দেখে খাগড়ার একটা জীর্ণ চাটাইয়ে তার অসুস্থ প্রেমিক শুয়ে আছে। প্রেমিকারে দেখে সে বললো, শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত আর সেরা ডাক্তার আমারে বলছে, এইভাবে এমন চাটাইয়ের উপ্রে শুয়ে থাকতে। 

২৯#
: আপনার চুল কাটবো কেমন? -বাচাল এক নাপিত বললো।
: চুপচাপ।  

৯১#
এক পেটুক তার মেয়ের বিয়ে দিছেন আরেক পেটুকের সাথে। পেটুক তার শশুররে বললো,  যৌতুক হিসেবে আপনার মেয়ে কী পাইতেছে?
মেয়ে আমার এমন একটা বাড়ি পাইছে যে বাড়ির জানলা দিয়া দূরের বেকারি দেখা যায়।

## ২৪৯
একজন নারীবিদ্বেষীর স্ত্রী মারা গেছে। স্বামী-স্ত্রীতে সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো। স্ত্রী মারা গেলে, স্ত্রীর দেহ যুদ্ধের পোশাকে সজ্জিত করে গোরস্থানে নিয়া গেলো। এটা দেখে একজন বললো, যুদ্ধের পোশাকে কেন? 

স্বামী: সে ভালো যোদ্ধা ছিলো। 

# ২৫২
একজন দুর্ভাগা ইউনাকের হার্নিয়া হইলো।

 

নিষ্ঠুর লোক:  

# ১৮৭
বাচ্চা ছেলের রাশিচক্র দেখে এক জ্যোতিষী  বাচ্চার মাকে জানাইলো যে ছেলে দীর্ঘায়ু লাভ করবে। তারপরে সে তার ফি চাইলো। বাচ্চার মা বললো, কালকে আইসেন, আমি দিয়ে দেবো।
জ্যোতিষী: কিন্তু রাত্রে যদি আপনার বাচ্চা মারা যায়, আমার ফি’র কী হবে?    

২৬#
উইটি এক লোক ধীর গতির একটা দৌড়বিদরে দেখে বললো, এই ভদ্রলোকের যা দরকার বলে আমার মনে হইতেছে। 

রেসের স্পন্সর আগ্রহী হইলো, ‘কী দরকার?’
তার একটা ঘোড়া দরকার, এছাড়া প্রতিযোগিতায় ভালো কিছু করার তার পক্ষে সম্ভব না। 

 

ইনকম্পিটেন্ট: 

# ১৯৭
একজন অযোগ্য স্কুলমাস্টাররে জিগানো হইলো, প্রায়ামের মায়ের নাম কী? সে বললো, ভদ্রতা কইরা তারে ম্যা’ম বলা যায়। 

# ১৫
আবদেরার এক লোক দেখলো এক খোজা লোক এক নারীর সাথে কথা বলতেছে। খোজা লোকরে সে জিগাইলো, সে কি আপনার স্ত্রী? খোজা বললো, খোজাদের স্ত্রী হয় না।
লোকটা বললো, তাইলে সে কি আপনার মেয়ে? 

 

শরীরী ব্যাপার-স্যাপার:  

# ২৩৪
মুখে দুর্গন্ধওয়ালা এক লোক তার স্ত্রীরে জিগাইলো, তুমি আমারে দেখতে পারো না কেন?
স্ত্রী বললো, তুমি আমারে চুমু খাও বইলা। 

#২৩৯
এক অভিনেতাকে দুইজন নারী ভালোবাসতো। একজনের মুখে দুর্গন্ধ আরেকজনের বগলে। প্রথমজন বললো, আমারে চুমু খাও।  ২য়জন বললো, আমারে একটা হাগ দাও। অভিনেতা করুণ স্বরে বললো, হায়, আমি এখন কী করি? ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়। 

 

হর্নি উইমেন:  

# ২৪৪
কামুক স্ত্রীরে তার স্বামী বললো, এখন আমরা কী করবো, ডার্লিং? খাওয়া দাওয়া না সেক্স?
স্ত্রী বললো, সিদ্ধান্ত তোমার। কিন্তু বাসায় দানাপানি কিছু নাই।  

 

আরেকটা জোক দিয়া এই লেখা শেষ করি। এই যুগের পাঠকেরা এই জোকটার সাথে সম্ভবত সবচে বেশি রিলেট করতে পারবে।  আমি ভাবতেই পারি নাই যে নিচের জোকটা যে এতো পুরান! আমার ধারণা ছিলো সর্বোচ্চ ১-২ শ বছরের বেশি পুরান হবে না জোকটা।   

এক লোক বিদেশ ভ্রমণে গিয়া এক জ্যোতিষীর দেখা পাইলো। লোকটা তার পরিবারের ব্যাপারে জানাইতে বললো। জ্যোতিষী বললো, প্রত্যেকেই ভালো আছে, বিশেষ করে আপনার বাবা। 

জ্যোতিষীরে সে জানাইলো যে তার বাবা দশ বছর আগে মারা গেছে।
জ্যোতিষী বললো, আপনার আসল বাপ কে সে ব্যাপারে আপনার কোনো ধারনাই নাই।     

৪৩২৪ পঠিত ... ১৮:০৫, মার্চ ০৪, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top