পাকিস্তানে সোশ্যাল মিডিয়ায় খেলনা ইস্যু

৮৮ পঠিত ... ১৬:৪৫, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

20 (5)

পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাটি (ছাই দপ্তর) নিজেকে ভীষণ করিতকর্মা মনে করে। নিজেদের কিং মেকার ভাবার কল্পনায় বিভোর থাকে সর্বক্ষণ। কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের মধ্যে ঠিক যেরকম হিরোইজম; গোয়েন্দা সংস্থার হিরোইজম ঠিক ঐ সতেরো বছর বয়েসী সানগ্লাস পরা কলেজ স্টুডেন্টের মতো; যে কলেজের মধ্যে গঁ গঁ করে বাইক চালিয়ে চলে যায়; লেডিস কমন রুমের সামনে এসে মাথায় ঝাঁকুনি দিয়ে চুল ঠিক করে ভাবে; মেয়েরা তার হিরোইজমে পটে গিয়ে ফুলমাল্য অর্পণ করবে।

ছাই দপ্তরের কাজ হচ্ছে গণতন্ত্র-মানবাধিকার-বাক স্বাধীনতা-সামাজিক সুবিচারের জনদাবীকে ডিফ্লেক্ট করে খেলনা সব ইস্যু তৈরি করা। বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনকন্ঠস্বর চাপা দিয়ে নিয়ে আসে অপাংক্তেয় সব বিষয়।

এই কাজে পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক জিয়াউল হক সেরা ছিলেন। তিনি জমিয়তে উলেমা ইসলামীর মওলানা ফজলুর রহমানের সঙ্গে শোকরানা মেহেফিল করে; ইসলামাবাদের অদূরে ফায়েজাবাদে খাসজমি দান করেন মাদ্রাসা নির্মাণের জন্য। মওলানা ফজলুর রহমান মাথায় একটি পাগড়ি পরে ইসলামের স্বপ্রণোদিত ম্যানেজার হয়ে ঘুরে বেড়ায়। একবার ডিজেল ব্যবসার সঙ্গে অশুভ সম্পর্ক নির্ণিত হওয়ায়; তরুণ প্রজন্ম তাকে মওলানা ডিজেল নামেই চেনে। জিয়াউল হক মওলানার মাদ্রাসার ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দিয়ে ও পাকিস্তানে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে তার একদলীয় শাসনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনায় তার সে স্বপ্নের মৃত্যু হয়। কিন্তু মওলানাটি বেঁচে থাকে ইসলামের ঝান্ডা নিয়ে কমলা রং-এর পাগড়ি পরে দৌড়াদৌড়ি করার জন্য।  

ছাই দপ্তর ও মওলানা যেন তামাক আর ফিল্টার; দুজনে দুজনার। এই মওলানাকে দিয়ে কলেজ স্টুডেন্টের মেচিউরিটি থেকে তারা একবার বলিয়ে দেয়, মেয়েরা জিনস প্যান্ট পরায় পাকিস্তানে ভূমিকম্প হয়েছে। অমনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির জারদারির দুর্নীতির প্রাসাদে পিঠাপুলির দাওয়াত খেয়ে মোটা তাজা হওয়া সেকুলাররা জনপরিসর ফাটিয়ে ফেলে প্রতিবাদে। এইখানে মওলানা ও সেকুলারেরা প্রতিপক্ষ হলেও; উভয় পক্ষ মিলে পাকিস্তানের অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা ও দ্রব্যমূল্য ঘোড়ার উর্ধমুখী লম্ফঝম্ফ নিয়ে জনপ্রতিবাদকে ঢেকে দেয়; জিনস প্যান্ট বিতর্কে। বাইরে থেকে দেখে একে কালচারাল ওয়ার মনে হলেও; আসলে তা প্রকৃত জনদাবীগুলোকে ডিফ্লেক্ট করার কালচাঁড়াল ওয়ার।

ছাই দপ্তর যেহেতু ডিফেন্স হাউজিং এস্টেট, ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে আছে রসেবশে; বৃটিশেরা রেলপথ তৈরি করলে যাদের দাদা-পোদ্দাদা গমক্ষেতে বসে প্রাতক্রিয়া করতো; তারা এখন হাইকমোডে বসে সূর্য ডোবায়। সুতরাং তাদের দুর্নীতি ও স্বাধীনতার সুফল সম্ভোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ কথা তুললেই; মওলানা তার কমলা পাগড়ি পরে ইসলামাবাদের অদূরে ফায়েজাবাদে এসে পড়ে মাদ্রাসার ফুট সোলজার নিয়ে। ইসলামের এই স্বপ্রণোদিত সৈনিকেরা তাদের সাদা পাজামা পাঞ্জাবির ওপর কমলা রং-এর টিশার্ট পরে জলসাকে উজ্জ্বল করে তোলে, তাদের ইসলাম গেলো গেলো রব ওঠে জলসায়। ছাই দপ্তরের কর্মকর্তা তাদের মাঝে টাকা বিতরণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় কার যেন মোবাইল ক্যামেরায়। আদালত ঐ সেনা কর্মকর্তাকে ডেকে তিরস্কার করলেও লজ্জা হয়না ছাই দপ্তরের।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কমলা পাগড়ির দুঃশ্চিন্তা নারীদের পর্দা পুশিদা নিয়ে; তেঁতুল বা চকোলেট প্যাকেট দিয়ে ঢেকে না রাখার অভিযোগ নিয়ে। মেয়েরা কেন ঘরের বাইরে; কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে নারী! এইসব পরাবাস্তব দুঃশ্চিন্তা তার। ছাই দপ্তরের পুতুল এই মোল্লাটি এমন যে তাতে দম দিয়ে ছেড়ে দিলেই; সেকুলারদের সঙ্গে খেলনা কালচারাল ওয়ার করে ঢেকে দেয়া যায়, টাকা পাচার, সেকেন্ড হোম, ভোট চুরি, দেশ ডাকাতির মতো জরুরি ইস্যুগুলো।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির সেকুলারেরা এই মওলানার দ্বারা উপকৃত হয়েছে বড্ড। এই যে তারা সিন্ধু প্রদেশে চিরস্থায়ী ক্ষমতাসীন থেকে দুর্নীতির প্রাসাদ গড়েছে; মাত্র পনেরো বছর আগে যারা হায়দারাবাদ ও শাক্কারে কুঁড়ে ঘরে থাকতো; উন্নয়নের আলাদিনের চেরাগ পেয়ে তারা এখন করাচির অভিজাত প্রাসাদে থাকে; তাদের অপরাধগুলোকে লুকিয়ে রাখতে তাদের দলীয় সেকুলারেরা ব্যস্ত থাকে আর জনগণকে ব্যস্ত রাখে কালচারাল ওয়ারে। তাদের একটাই শ্লোগান, এক ভুট্টো লোকান্তরে, লক্ষ ভুট্টো ঘরে ঘরে। সংক্ষেপে ভুট্টো জিন্দা হ্যায়; ঘার ঘার মে ভুট্টো হ্যায়!

আর ছাই দপ্তর ও মওলানা তো ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ নওয়াজের জন্য ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার খেলাবালক। এরা আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি সেজে ইমরান সমর্থক তেহেরিক ই ইনসাফ পাকিস্তানের লোকদের ও  সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির তকমা দেয়। পাকিস্তান পছন্দ না হলে বাপের দেশ এমেরিকা চলে যেতে বলে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন আজাইরা কালচারাল ওয়ার দেখলেই লোকেরা বোঝে, উন্নয়নের তাবাররক পেয়ে চর্বি জমেছে যাদের; তারা সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশাকে ঢেকে রাখতে বড্ড কালচারাল মামা ও খালা সেজেছে।

ছাই দপ্তরের প্রত্যেকদিন ঘুম ভাঙ্গে পাবলিকের গালিযুক্ত মিম দেখে। তারা জানে, বাঁচন আর নাইরে কালু বাঁচন আর নাই। ইমরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলাগুলো উচ্চ আদালতে টিকছে না। পিটি আই কর্মীদের জেল-জুলুম-নির্যাতন পাবলিক সেন্টিমেন্ট তাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক নির্বাচনে কয়েকটি আসনে ছাই দপ্তর ভোট ডাকাতি করলেও নির্বাচনে প্রথম স্থান অধিকার করেছে পিটি আই।

দুপুর বা বিকেলের দিকে ছাই দপ্তরের ফেইক আইডিগুলো কট্টর ইসলামপন্থী ও কট্টর প্রগতিশীলদের উস্কানি নিয়ে কালচারাল ওয়ার তৈরি করতে এলে, বাচ্চা ছেলেরা তাদেরকে ধরে ধুয়ে দেয়। কলেজ জীবনের মতোই পাবলিকলি বেইজ্জত হবার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিদিন ঘুমাতে যায় তারা। ভেতরে ভেতরে অন্য কোন দেশের ভিসা রেডি করে; একটা বদ হাওয়া লেগেছে গায়; কখন পাখি উড়ে যায়।

৮৮ পঠিত ... ১৬:৪৫, এপ্রিল ১৬, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top