জাফরুল্লাহ চৌধুরী সম্পর্কে জানা-অজানা

১০০৫ পঠিত ... ১৬:০৪, এপ্রিল ১২, ২০২৩

Zafarullah-Chowdhury-Jana-ojana

গতকাল গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নিজের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেশের জন্য নানাভাবে কাজ করে গেছেন। এই কিংবদন্তি সম্পর্কে জেনে নিন কিছু তথ্য

১#

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। চিকিৎসাখাতে রেখেছিলেন অসাধারণ অবদান। দেশের রাজনৈতিক নানান প্রেক্ষাপটেও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশে ও দেশের বাইরে কোথাও জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কোনো ফ্ল্যাট নেই।

২#

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বাবা ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের ছাত্র।

৩#

ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ছিলেন, ঢামেক ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। সাধারণ সম্পাদক থাকাকালিন দেশের দুর্নীতি, ক্যাম্পাসের নানান সমস্যা নিয়ে নানান কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

৪#

মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল।‘ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টারটি হামলার শিকার হয়েছিল তাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও।

৫#

মুক্তিযুদ্ধের পর ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গড়ে তোলেন ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল।‘ ‘গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র’ নামটি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

৬#

প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ‘যেখানে ডাক্তার নেই’ নামে একটি বই লেখেন। বইটি একসময় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে একপ্রকার অবশ্য পাঠ্য ছিলো।

৭#

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পাইলট প্রজেক্ট গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রাইমারি কেয়ার কনসেপ্ট মাঠে প্রমাণ করে এবং এর ভিত্তিতে হু আর ইউএনও আলমাআতা কনফারেন্সের মাধ্যমে গ্লোবাল ইউনিভার্সাল প্রাইমারি কেয়ার প্রকল্পের ঘোষণা দেয়। গ্লোবাল প্যারামেডিক যে কনসেপ্ট ও ট্রেইন্ড প্যারামেডিক দিয়ে মিনি ল্যাপারোটমির মাধ্যমে লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সংক্রান্ত তার পেপারটি বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট মূল আর্টিকেল হিসেবে ছাপা হয়।

৮#

যুক্তরাষ্ট্রের মূল পেডিয়াটিক্স টেক্সট বইয়ের একটা চ্যাপ্টার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী লিখতেন অনেক বছর ধরে। দেশে-বিদেশে তার লেখা বই ও পেপারের সংখ্যা প্রচুর।

৯#

স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের সময়ে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব পেয়েছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শেখ মুজিবুর রহমান সরকার, জিয়াউর রহমান সরকার ও এরশাদের সরকারও জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মন্ত্রীত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেন। সবগুলোই সম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। জিয়াউর রহমান সরকারের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব শুধু প্রত্যাখ্যানই করেননি, সরকারে স্বাধীনতাবিরোধী থাকার প্রতিবাদে চার পৃষ্ঠার চিঠিও লিখেছিলেন। তবে রাজনীতির সাথে সবসময় ছিলেন তিনি। কখনও রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছেন, কখনও বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন নানান পরামর্শ।

১০#

দেশে নারীদের উন্নয়নে নানান সময়ে নানান কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের গড়া প্রথম জাতীয় মহিলা উন্নয়ন কমিটির দুই পুরুষ সদস্যের একজন হিসেবে প্রাথমিকে ৫০ শতাংশ মহিলা শিক্ষক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ছাত্রী নেয়ার সুযোগ করেছিলেন। যা কার্যকর হয়েছিল এরশাদ আমলে। জিয়াউর রহমানের আমলে পুলিশে মহিলা নিয়োগ দেয়া শুরু হলে দেশের প্রথম দুই নারী পুলিশ হিসেবে নিয়োগ পান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মী হোসনে আরা ও চামেলী বেগম। এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নারী নার্সদের নিজে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ওরা যেন দ্রুত রোগীর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে সেজন্য নারীদের সাইকেল চালানো শিখতে উদ্বোধ্যও করেছেন তিনি।

১১#

তার পরামর্শেই এরশাদ আমলে পোস্টার, বিলবোর্ড বাংলায় লেখা ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন, উপজেলাব্যবস্থা ও সফল জাতীয় ঔষুধনীতি ও জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি করেছিলেন। 

১২#

চিকিৎসার জন্য মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাননি এই কিংবদন্তি। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগলেও সবসময় চিকিৎসা নিয়েছেন নিজের হাতে গড়া গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এমনকি জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটি প্রত্যাখান করেন। দেশের মাটিতেই নিজের শেষদিনগুলো কাটাতে চেয়েছেন তিনি।

 

১০০৫ পঠিত ... ১৬:০৪, এপ্রিল ১২, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top