বৃষ্টি ঝরাতে কুইক ক্লাউড প্রকল্প

৬৮ পঠিত ... ১৬:২৭, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

28 (7)

বৃষ্টির দেখা নেই। উত্তপ্ত রোদে পুড়ে খাক জীবন। ঢাকা শহরে নিয়মিত গাছ কেটে ফেলা আর জলাভূমি ভরাট করে ডেভেলপারদের উন্নয়ন কাজের দাপটে শহরটি একটি ফুটন্ত কড়াইয়ের রুপ নিয়েছে। উন্নয়নের কারিগরদের উন্নয়ন প্রকল্পের বিলাসী গাড়িগুলোর চাকা আটকে যাচ্ছে রাজপথের গলে যাওয়া পিচে। পানিকামান দিয়ে দুই নয়নের জলে ভিজিয়ে পিচকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চলছে।

এক পরিবেশবিদ বলেন, চাঁদকে নিয়ে অসংখ্য রোমান্টিক কবিতা ও গান লেখায় মনে হয় সূর্য রাগ করেছে। ওরে তোরা জলদি সূর্যকে নিয়ে কিছু প্রেমের কবিতা লিখে ফেল। আর চাই বৃক্ষ বন্দনা।

শুরু হয় ফেসবুকে গাছ লাগানোর কবিতা লেখার মহড়া। ভার্চুয়াল গাছ লাগানোর বিশ্বরেকর্ড করতে উদ্যত বৃক্ষপ্রেমী কবিরা।

ওদিকে সৌদি আরবে বৃষ্টি ও কুয়াশা পড়ছে; তাপমাত্রা ঢাকার চেয়ে কম সেই মরু এলাকায়। সবুজ বনায়নের কারণেই এই বৃষ্টি-কুয়াশা নাকি কৃত্রিম মেঘ সৃষ্টি করে বৃষ্টি ঝরানো হয়েছে তা জানতে উৎসুক জনতা। খোলা মাঠে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় সারিবদ্ধ জনতা; বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে চলছে ব্যাঙের বিয়ে। দিকে দিকে আহাজারি, আল্লা মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই!  

মৌসুমী ব্যবসায়ীরা প্রস্তাব রাখে ‘কুইক ক্লাউড’ প্রকল্প চালু করে কুইকলি বৃষ্টি ঝরিয়ে দেয়া যাবে। প্রস্তাব অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, সিলভার আয়োডাইড, পটাসিয়াম আয়োডাইড, শুষ্ক বরফ বা সলিড কার্বন ডাই অক্সাইডকে গ্যাসে রূপান্তর করে কুইক ক্লাউড তৈরি করে বৃষ্টি এনে দিতে হবে। এই বাবদ বাজেট জানিয়ে আবেদন করুন। সর্বনিম্ন বাজেট গ্রহণযোগ্য।

সঙ্গে সঙ্গে হারমিট গ্রুপ, সেইন্ট গ্রুপ, সুগার আলমপনা গ্রুপ, রহমান এন্ড রহমান এন্টারপ্রাইজ তাদের কোটেশন জমা দেয়। হেলমেট পরে টেন্ডার বাক্স খুলে সর্বোচ্চ বাজেট দিয়েছে যারা; সেই পরীক্ষিত উন্নয়ন সহিসদের বৃষ্টি ঝরানোর কাজ দেয়া হয় আবেদনপত্র বাছাই শেষে।

পৃথিবীর সবচেয়ে সুলভে যেখানে টেবিল সল্টের মতো হাইগ্রোসকোপিক কাঁচামাল পাওয়া যায় সেখান থেকে সেগুলো আমদানি করা হয়। চীন ও সৌদি আরবে যে খরচে কুইক ক্লাউড প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে; তার তিনগুণ খরচে বৃষ্টি ঝরবে এই শ্রীখণ্ডে। এটাই প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের হাজার বছরের সংস্কৃতি। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সেকেন্ড হোম নির্মাণের প্লট দেখতে শুরু করে। হারমিট গ্রুপ ফোর্বস ম্যাগাজিনকে খবর দেয়, কুইক ক্লাউড প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, বিশ্বের দ্রুত ধনীর তালিকার টপ টেনে চলে যাবে তারা।

সাড়ে চুয়াত্তর, সময় অসময় টিভি গ্রাফিকস ও এনিমেশনে বৃষ্টি তৈরি করে প্রতিবেদন তৈরি করে, এই তো বৃষ্টি এল বলে।

ফেসবুকে কুইক ক্লাউড সিডিং এন্ড রেইন শীর্ষক সেমিনারে দুটি ভাগ তৈরি হয়। তেলাঞ্জলি গ্রুপ পরামর্শ রাখে, তীব্র গরম মানেই মাটির নীচে তেল; আগে তেল উত্তোলন করে তারপর বৃষ্টি এনে দিন। শিরিষ কাগজ গ্রুপ এসে চুতরা পাতা ঘষে দিয়ে বলে, বৃষ্টি কী আসবে! অযথা সুইস ব্যাংকে টাকা জমা হবে সহমত কাকুদের।

চিফ হিট অফিসার এসে পরামর্শ রাখে, রেইন ইজ এক্সপেক্টেড; ব্যাগে একটা আমব্রেলা নিতে ভুলবেন না। টাওয়েল রাখুন ভেজা চুল মুছতে; নইলে ফিভার হবে।

শিরিষ কাগজ গ্রুপ তাকে দেখে গান ধরে, অমন চুল খুলে আর বৃষ্টিতে নেম না, তোমার চুলে জড়িয়ে যাবে বৃষ্টি; ও মেঘে কেউ আসবে না আর, অমন কর যদি।

তেলাঞ্জলি দিদিরা জেন্ডার কার্ড ফেলে দিয়ে বলে, নারী বলেই কী তাকে নিয়ে ট্রল! ছ্যা ছ্যা ছ্যা!

তেলাঞ্জলি মামুরা বলে, আহা ভাগ্নি কী সুন্দর ইংলিশ বলে; গর্বে বুকের ছাতি শরিফের ছাতার মতো হয়ে যায়।

বৃষ্টি এসে পড়লে ফসলের ক্ষতি হবে; তাই কৃষক প্রেমী ছাএলীগের মেয়েরা সেই ইদের নামাজে ডিউটি পুলিশের মেহেদি আঁকা হাতে অস্ত্রের অনুকরণে মেহেদি আঁকা হাতে কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে লেগে পড়ে। বিদূষকেরা অস্থির হয়ে বলে, আহা এই দলীয় মানবতার ছাত্র রাজনীতি না থাকলে আজ ধান কাটত যে কে!

কুইক ক্লাউড প্রজেক্টের সমঝোতা স্মারকে লেখা আছে, এমনকী বর্ষাকালেও বসে বসে ভাড়া দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে। আর এ ব্যাপারে কোন জবাবদিহির বালাই নেই; কারণ কুইক ক্লাউড প্রকল্পকে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে।

মেঘবপনের মাহেন্দ্রক্ষণে সংস্কৃতিমামারা ১৯৮৯ সালের বর্ষাবরণের অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট ফটোকপি করে আয়োজন করে, ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।

চিফ হিট অফিসারের পরামর্শে সবাই ছাতা মাথায় দিয়ে তোয়ালে হাতে নিয়ে বৃষ্টি ও দরবেশ পুরুষের প্রার্থনা করতে থাকে।

৬৮ পঠিত ... ১৬:২৭, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top