উগান্ডার বিদ্যুৎ মন্ত্রীর দপ্তরে একটি বিয়ের কার্ড

২০০ পঠিত ... ১৭:০০, মে ০৪, ২০২৪

441211770_1570391850478004_2898101078977592646_n

উগান্ডার বিদ্যুৎ মন্ত্রীর দপ্তরে তিনদিন আগে একটি বিয়ের কার্ড এসেছে। পাত্র-পাত্রী কাউকেই চেনেন না তিনি। চেনার কথাও না, দুজনের বাড়িই প্রত্যন্ত এক গ্রামে। যে গ্রামে কোনোদিন গিয়েছেন বলেও মনে করতে পারছেন না। বিয়ের কার্ডটা হাতে আসার আগে নামও শোনেননি। অনেক মনে করার চেষ্টা করেছেন, কোনো লাভ হয়নি। জিনিসটা যে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ভুলে যাবেন সে সুযোগও নেই। কার্ডে স্পষ্ট করে লেখা, মন্ত্রী না গেলে পাত্র-পাত্রী কবুল বলবে না। এরমধ্যে আবার পত্রবাহক পিয়নের কাছেও কার্ড দেয়নি, সরাসরি মন্ত্রীর সাথে দেখা করে মন্ত্রীর হাতে কার্ড দিয়েছে। ইনস্ট্রাকশন নাকি এমনই ছিল। পত্রবাহককে জিজ্ঞেস করেও কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। সে নিজেও জানে না এই কার্ড কোথা থেকে এসেছে।   

মন্ত্রী চাইলে যদিও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা দিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারতেন। এমন ভেবেছেনও। কিন্তু নিজে কিছুটা পরিস্কার না হয়ে এই ঝুঁকিতে যেতে চাচ্ছেন না। কে না কে? পরে আবার কী না কী তথ্য বের হয়ে আসে—এমন নানান চিন্তায় বিষয়টা নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তিনি লুকিয়ে রাখলে তো আর হবে না, লুকিয়ে রাখতে পারেনি মন্ত্রীর পিএস। বিয়ের কার্ডটা পেয়ে তিনি সাথে সাথেই মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রীকে বিষয়টি অবগত করেন। মন্ত্রী পিএসের পাশাপাশি ভদ্রলোক মন্ত্রী স্ত্রীর পার্টটাইম স্পাই হিসেবেও কাজ করেন। দারুণ করিতকর্মা লোক। 

মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী পরেরদিনই অফিসে আসেন। কথা বলতে বলতে নির্দিষ্ট স্থান থেকে কার্ডটা নিয়ে এমন ভান করেন যেন, এইমাত্র তিনি কার্ডটা পেলেন, এর আগে এই কার্ডের ব্যাপারে উনি কিছুই জানতেন না।

: আরে, কার বিয়ে? দুইদিন পরই তো বিয়ে। চল যাই।

: জানি না।

: মানে কী? তোমার অফিসে কার্ড আসছে, তুমি জান না কার বিয়ে?

: আসলেই জানি না।

: কিন্তু কার্ডে তো তোমার নাম লেখা। আবার লেখা আছে, তুমি না গেলে কবুল বলবে না।

: সেটা আমিও দেখেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি আসলেই চিনি না।

: তুমি কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছো?

: আরে না, তোমার কাছে আমি কী লুকাব!

: আমার তো মনে হয় লুকাচ্ছো। এক কাজ করি চল, কার্ডে দেয়া নাম্বারে কল দেই।

: দিয়েছি আমি। নাম্বার বন্ধ।

একটু সন্দেহের চোখে তাকায় মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী। চোখ সরু করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে একটা কলও দেয় এই নাম্বারে। কল ঢুকে। কল ঢুকতেই সন্দেহ আরও বেড়ে যায় ওনার। ওপাশ থেকে একজন কল রিসিভ করলে মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী পাত্র-পাত্রীর নাম জিজ্ঞেস করে, বিস্তারিত জানতে চায়। কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে রঙ নাম্বার বলে লাইন কেটে দেয় ওপাশের লোকটি। মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রীর সন্দেহ আরও বাড়ে। সন্দেহের চোখ নিয়ে মন্ত্রী সাহেবের দিকে তাকিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করে বসেন—

তুমি কি আরেকটা বিয়ে করেছো? এই মেয়ে বা ছেলে কি ওই সংসারের?

ঘটনা সেদিন বিকেলেই অনেকদূর গড়ায়। মন্ত্রী সাহেবের স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যায়। কার্ডটা নিয়ে মন্ত্রী সাহেবের অস্বস্তি আর যায় না। উনি অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় কার্ডটা নিয়ে আসেন। রাতে অনেক ভাবনা উঁকি দিয়ে যায় তার মনে। একবার মনে হতে থাকে, এটা বোধহয় কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাজ, ওনাকে কি কোনো সিগন্যাল দিচ্ছে? নাকি এটি কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র? প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টা জানাবেন কি না সে বিষয়েও ভেবেছেন একবার। সালাতুল তাহাজ্জুর ওয়াক্ত হওয়ায় আর কল করেননি।

টেনশনে থাকলে শেষরাতে মানুষ ভুলভাল অনেক ধরনের স্বপ্ন দেখে। মন্ত্রী সাহেবও স্বপ্ন দেখলেন, উগান্ডার ভুরুঙ্গামারির সাদেকপুর গ্রামে আসলেই উনি একটা বিয়ে করেছেন, সেই ঘরের কন্যারই কাল বিয়ে।

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন, যা আছে কপালে, বিয়েতে উনি যাবেন। গেলেনও। একটা চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে বিয়ে পর্যন্ত গিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বোঝার চেষ্টা করছিলেন। পাত্র-পাত্রী দুজনই স্টেজে আছে। বেশ হাস্যোজ্জল। আনন্দঘণ পরিবেশ। তেমন কোনো ঝামেলাই চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। এক পর্যায়ে চাদর ফেলে, স্টেজের একটু কাছাকাছি যান। কনে প্রথমে দেখেই চিনতে পারে। বর-কনে দুজনে আবেগে আপ্লুত হয়ে মন্ত্রী সাহেবকে জড়িয়ে ধরেন। স্টেজে তোলেন। এরপর বর-কনে দুজনে মাঝে মন্ত্রী সাহেবকে দাঁড় করিয়ে কনেটা বলতে থাকেন—

আমরা দুজন বিয়ের পিড়িতে বসেছি আজ। এর আগে ৫ বছর আমরা প্রেম করেছি। রাতেরবেলা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়ে, একজন আরেকজনকে সময় দিয়ে, আমরা একসময় বুঝতে পেরেছি,আমরা দুজন একসাথে থাকতে পারবো। আর আমাদেরকে এই সুযোগটা করে দিয়েছেন, আমাদের মন্ত্রী সাহেব। ওনার কল্যাণে আমাদের এখানে দিনে ১৫-১৬ বার কারেন্ট যাইত, একবার গেলে ৫-৭ ঘণ্টার আগে আসত না। আর এই সুযোগে এরপর থেকে বাড়ির পাশের জঙ্গলেই কেটেছে অনেক রাত। সেই প্রেম থেকে আজ আমাদের এই বিয়ে। উনি না থাকলে, ওনার লোডশেডিং না থাকলে হয়তো আমরা কোনোদিন বুঝতেই পারতাম না যে, আমরা দুজন একজন আরেকজনকে কত ভালোবাসি। ধন্যবাদ মাননীয় মন্ত্রী

মন্ত্রী সাহেব কিছুক্ষণের জন্য পাসআউট হয়ে যান। চলে যান অন্য এক ভাবনার জগতে। নিজেকে সফল মনে হতে শুরু করে। চারদিকে কত সমালোচনা, কত কী! ব্যর্থতা ধরিয়ে দেয়ার জন্য মানুষের কী আপ্রান  চেষ্টা। ট্রল, মিম। নেগেটিভিটির ছড়াছড়ি। একসময় তো ধরেই নিয়েছেন, উনি আসলে ব্যর্থ। উনিও যে কারও জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারেন, বিদ্যুতবিভাগ যে এমন একটি মিরাকল ঘটাতে পারে, এটি উনি স্বপ্নেও ভাবেননি। গর্বে মন্ত্রী মশাইয়ের বুকের ছাতি তিন ইঞ্চি বেড়ে যায়।

বিয়েতে উকিল বাপ হন তিনি। অফিসে এসে সিদ্ধান্ত নেন, বিদ্যুৎ বিভাগের এই সাফল্য নিয়ে উনি এনায়েত চৌধুরী ও নাফিস সেলিমের সাথে একটা ভ্লগ বানাবেন। 

২০০ পঠিত ... ১৭:০০, মে ০৪, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top