বিশ্বের নানান দেশে ঘটে যাওয়া ১০টি ক্লাসিক 'এপ্রিল ফুল প্র্যাঙ্ক'

১৪১৯ পঠিত ... ১৭:৩৭, এপ্রিল ০২, ২০১৮

বিশ্বজুড়ে এপ্রিলের এক তারিখকে এপ্রিল'স ফুল ডে হিসেবে একে অপরকে বোকা বানাবার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এই দিনে কখনো কোন দৈনিক পত্রিকা, তো কখনো বিবিসির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যম, আবার কখনওবা এমনিই কোন পাগলাটে মানুষ পুরো শহর কিংবা দেশকেই বোকা বানিয়ে ফেলে। গত শতাব্দীর বিভিন্ন সময়ে এপ্রিল ফুল'স ডে তে মানুষকে বোকা বানিয়ে দেয়ার মজার দশটি ঘটনার সংকলন করেছে eআরকি।   

 

#১

১৯৭৫ সালের ১ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ান একটি চ্যানেলে ‘দিস ডে টুনাইট’ নামের একটি অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয় যে, অস্ট্রেলিয়া শীঘ্রই মেট্রিক টাইম সিস্টেমে চলে যাবে। তখন মিনিট হবে ১০০ সেকেন্ডে, ১০০ মিনিটে হবে ১ ঘণ্টা আর ২০ ঘণ্টায় হবে ১ দিন। অনুষ্ঠানটিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তার (তিনিও প্র্যাংকে অংশ নিয়েছিলেন) সাথেও সরাসরি কথা বলা হয় এ বিষয়ে।

এডিলেড টাউনহলের ঘড়িতে মেট্রিক সিস্টেমে সময় পর্যন্ত দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি ফোন কল আসে। তারা সবাই জানতে চায় কীভাবে তারা পুরনো ঘড়ি দিয়েই নতুন সময় দেখবে।

#২

১৯৭৬ সালের ১ এপ্রিল বিবিসি একজন জ্যোতির্বিদের সাক্ষাৎকার প্রচার করে। তিনি শ্রোতাদের বলেন যে, ঐদিন ঠিক ৯টা ৪৭ মিনিটে জুপিটার এবং প্লুটো পৃথিবীর সাপেক্ষে এমন এক অবস্থানে আসবে যাতে ঐ সময়ে পৃথিবীর কোন অভিকর্ষ বল থাকবে না। ঠিক ঐ মুহূর্তে কেউ যদি লাফ দেয় তাহলে তারা ভেসে থাকার একটা অনুভূতি পাবে কিছুক্ষণের জন্য।

পরবর্তীতে অসংখ্য মানুষ ফোন করে জানায় যে, তারা ভেসে থাকার অভিজ্ঞতা পেয়েছে।

#৩

১৯৯২ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও কোটি কোটি শ্রোতাকে বোকা বানায়। রেডিওতে প্রচার করা হয় যে রিচার্ড নিক্সন আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন।

নিক্সনের স্বর নকল করে তার নির্বাচনি স্লোগান পর্যন্ত প্রচার করা হয়। এই ঘটনা আমেরিকাজুড়ে তোলপাড় তোলে।

#৪

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৯১৫ সালের ১ এপ্রিল একটি ফ্রেঞ্চ যুদ্ধবিমান জার্মান সীমানায় উড়ে গিয়ে বিশাল বোমার মতন কিছু একটা ফেলে আসে। কিন্তু সেটা বিস্ফোরিত না হওয়ায় পরে যখন জার্মান সেনারা ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যায় তারা আবিস্কার করে একটা ফুটবল। আর একটা নোটে লেখা ‘এপ্রিল ফুল’!

#৫

১৯৭৪ সালের ১ এপ্রিল আলাস্কার সিটকা শহরের মানুষ ঘুম ভেঙেই এক ভয়ানক দৃশ্যের মুখোমুখি হয়। তা হল, কালো ধোঁয়ার মেঘ ভেসে আসছে মাউন্ড এজকাম্ব থেকে। দীর্ঘদিনের সুপ্ত আগ্নেয়গিরিকে আবার জেগে উঠতে দেখে সবাই আতংকে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে আসে।

অবশ্য এরপর তারা আবিস্কার করে প্রকৃতি নয়, পর্কি বিকার নামের এক জোকার শত শত পুরানো টায়ার আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে বসে জ্বালিয়েছে।

#৬

নরওয়ের সবচাইতে বড় দৈনিক আফটেনপোস্টেন ১৯৫০ এর ১ এপ্রিলের সংখ্যায় একেবারে প্রথম পৃষ্ঠায় বড় করে একটি খবর প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়, সরকারী ওয়াইন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (ভিনমোনোলেট) এক বিরাট শিপমেন্ট পেয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বোতল না থাকায় সেই ওয়াইন কিছু করা যাচ্ছে না। তাই ৭৫% ছাড়ে ওয়াইন বিক্রি করা হবে। তবে ক্রেতাদের সকলকেই ওয়াইন নেয়ার জন্যে নিজেদের পাত্র নিয়ে আসতে হবে। 

সেদিন ওয়াইনের জন্য বালতি হাতে মানুষের লম্বা লাইন দেখা যায়। 

#৭

১৯৭৮ সালের ১ এপ্রিল সিডিনিবাসী আবিস্কার করে এক দৈত্যাকার আইসবার্গ সিডিনি হারবারে ভাসছে। সিডনীর লোকজন অবশ্য অপেক্ষা করছিল এই দৃশ্যের। ডিক স্মিথ নামের এক ধনকুবের এডভেঞ্চারার তার আগের বেশ কিছুদিন ধরে ঘোষণা করে আসছিলেন যে, তিনি এন্টার্ক্টিকা থেকে আইসবার্গ ভাসিয়ে নিয়ে আসছেন। এবং তিনি সফল হয়েছেন।

তিনি তখন জানান যে, এন্টার্কটিকার অত্যন্ত বিশুদ্ধ পানির এই বরফ থেকে ছোট ছোট টুকরো করে কিউব কেটে নেয়া হবে যা যেকোনো পানীয়ের স্বাদ বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। স্থানীয় সব রেডিও ঘটনাস্থলে চলে আসে এই ঘটনা কভার করার জন্য।

কিন্তু সেই আইসবার্গ পানিতে থাকতে থাকতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে বোঝা যায় সেটি আসলে ফায়ারফাইটিং কার্বন-ডাই-অস্কাইড ফোম এবং শেভিং ফোমের একটি স্তুপ। যা কি না একটি বড় প্লাস্টিক শিটের উপর ছিল।

#৮

এই ঘটনাটি অবশ্য ১ এপ্রিলের না, ৩১শে মার্চ রাতের। ১৯৮৯ এর ঘটনা এটি। লন্ডনের হাইওয়েতে চলাচল করা সব মানুষ দেখতে পায় আকাশ থেকে উজ্জ্বল ঝকমকে একটা ফ্লাইং সসার নেমে আসছে। প্রচুর মানুষ গাড়ি থামিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফ্লাইং সসারটি অবশেষে লন্ডনের শহরতলীর একটি স্টেডিয়ামে অবতরণ করে।

সাথে সাথেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে যখন দেখতে পায় মহাকাশযান থেকে রূপালী পোশাক পরা কেউ নেমে আসছে তখন তারা উল্টোদিকে দৌড়ে পালায়। পরদিন সকালে দেখা যায়, সেটি ছিল আসলে বিশেষভাবে তৈরী একটি হট এয়ার বেলুন।

#৯

১৯৩৪ সালের এপ্রিলে নিউইয়র্ক টাইমসসহ আরও অনেক পত্রিকা অদ্ভুত এক যন্ত্র নিয়ে উড়ছে এমন একজন মানুষের ছবি ছাপায়। আর্টিকেলে বলা হয়, বুকের সাথে আটকে রাখা এ যন্ত্রটি ফুসফুসের বাতাসকে অনেকগুণ বাড়িয়ে উড়তে পারে। প্রতিটি পত্রিকা খুবই বিশদভাবে বর্ণনা করে এই যন্ত্রের কার্যপদ্ধতি।

কিন্তু সত্যিতে ছবিটি নেয়া হয়েছিল একটি জার্মান পত্রিকার এপ্রিল ফুল’স ডে সংখ্যার আর্টিকেল থেকে। একটি সংবাদ সংস্থা সত্যি মনে করে এই খবরটি আমেরিকায় প্রচার করে।

#১০

১৯৫৭ সালের ১ এপ্রিল বিবিসির এক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘প্যানারোমা’য় বলা হয় যে, উপযুক্ত আবহাওয়া সৃষ্টির  মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে স্প্যাগেটির বাম্পার ফলন হয়েছে। দেখানো হয় গাছ থেকে লম্বা লম্বা স্প্যাগেটি ঝুলছে আর কৃষকরা গাছ থেকে সেগুলো পাড়ছে।

প্রচুর মানুষ বিবিসিকে ফোন করে জানতে চায় যে, কীভাবে তারাও নিজেরাই স্প্যাগেটি চাষ করতে পারে। বিবিসির পক্ষ থেকে খুব কৌশলে উত্তর দেয়া হয় যে, একটা স্প্যাগেটি নিয়ে টমেটো সসভর্তি একটি ক্যানে রেখে দিয়ে অপেক্ষা করলেই চলবে।

বিবিসির ডিরেক্টর জেনারেল পরে বলেন যে, তিনিও এটা বিশ্বাস করে ফেলেছিলেন প্রায়। অনুষ্ঠান চলাকালেই তিনি এনসাইক্লোপিডিয়ায় চেক করেন যে স্প্যাগেটি কীভাবে জন্মায় (যদিও এনসাইক্লোপিডিয়ায় খুঁজে পাওয়া যায়নি)।

১৪১৯ পঠিত ... ১৭:৩৭, এপ্রিল ০২, ২০১৮

Top