লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ ডেমোক্রেসি

১৮৯ পঠিত ... ১৬:৫০, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

20 (6)

লাস্যময়ী ডেমি মুর পাড়ার দুষ্টু ছেলেদের অত্যাচারে অতিষ্ট। টেনে কষে গ্রাজুয়েশন করা বেকার ছেলে আওয়ামীউর রহমান; প্রতিদিন বাড়ির সামনে একটি গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ডেমিকে দেবে বলে। ক্যডেট কলেজ থেকে টেনেকষে পাশ করে চুলে জেল দিয়ে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানো জাতীয়তাবাদিউর রহমান প্রায়ই মাঝরাতে তার বাইক নিয়ে গঁ গঁ করে পাক খায়; ডেমির বাড়ির চারপাশে।

কফি ওয়ার্ল্ডে কফি খেতে গেলে পিটার তার গিটার হাতে নিয়ে এসে ফ্লার্ট করে। প্রণয় নামে আরেক কোমল তরুণ এসে মাখো মাখো করে বলে, আমার প্রণব কাকু তোমার মঈন মামুকে ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন। সেটা কি তোমার মনে আছে ডেমি!

ডেমি এইসব বখাটে তরুণের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা দিতে হারুনের ভাতের হোটেলে গেলে; হারুন তাকে ডাল-আলুভর্তা আর মৌরালা মাছের ঝোল দিয়ে ভাত  খাইয়ে সেলফি তুলে বিদায় করে।

শাহবাগের  গানের স্কুলে গিয়ে সংস্কৃতি মামার কাছে ডেমি অভিযোগ করে, এইসব বখাটে ছেলে সম্পর্কে। সংস্কৃতি মামা মুখটা বিদগ্ধ করে বলে, ঐ ফিডব্যাকের মাকসুদ; বখাটে ছেলের ভীড়ে ললনাদের রেহাই নেই গানটি গাওয়ায়; এইসব মুমুর্ষূরে তাপস নিঃশ্বাস বায়ে উড়ায়ে দিতে পারেনি। যত্তসব অপসংস্কৃতি এসে জঞ্জাল তৈরি করেছে। সংস্কৃতি মামার স্ত্রী সংস্কৃতি মামী চা দিতে দিতে বলে, তোমার এই মামা ছিলো বখাটের আঁটি। গান শেখাতে এসে ফুসলিয়ে বিয়ে করে আমার জীবনটাকে ভাজা ভাজা করে ফেললো। এইরকম বদ লোক আমি আর দেখি নাই। পুরুষ মানুষ আবার খালু; এদের কোন বিশ্বাস নাইরে ডেমি।

ডেমি বাধ্য হয়ে মগবাজারে এক ধর্ম মামার কাছে গিয়ে বলে, হুজুর দোয়া পড়ে আমার মাথায় ফুঁ দিয়ে দেন। বখাটেদের যন্ত্রণায় আর বাঁচি না। ধর্ম মামা বলে, পর্দা পুসিদা করো মা। ঢাইকা ঢুইকা রাহো নিজেরে। ধর্ম মামার স্ত্রী ধর্ম মামী এক গ্লাস রুহ আফজা দিতে দিতে বলে, ঐ লোক আমারে পটাইছিলো আমসিপারা পড়াইতে আইসা। যতই মা মা করুক; বিশ্বাস যাইও না; বদ মতলবের লোক একটা।

ডেমি মুর অনাথ মেয়ে। তার বাবা প্লেটো হক মারা গেছে অনেক আগে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা থেকেও নেই যেন। সে তাই নারীবাদী ফুপুর বাড়িতে থাকে। ফুপা এনজিও জমিদার। তাদের এক্টিভিজমের প্রয়োজনে তাকে রোদে দাঁড়িয়ে মানব বন্ধন করতে হয় মাঝে মধ্যে। তখন নাগরিক সমাজের তরুণেরা এসে গান করে, আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না। নাগরিক সমাজ মামারা কেউ কেউ, লালনের সুফিবাদ বোঝাতে বোঝাতে ইসলামের সিলসিলা বোঝায়। মেসো মশয়দের কেউ কেউ শ্রী চৈতন্যদেবের দর্শন জ্ঞান দিতে দিতে হিন্দুত্ববাদের উতকৃষ্টতার গল্প বলে।

মানবন্ধনে এক সাংবাদিক মামা এক মাজারের ঠিকানা দিয়ে বলে, ঐখানে যাও ডেমি; খাজা বাবা কাউকে নিরাশ করেন না; বিরাট দিল দরিয়া মানুষ উনি। তোমাকে রক্ষাকবচ দেবেন উনি।

অবশেষে মেট্রোরেলে চড়ে ডেমি আগারগাঁও-এ ডেমোক্রেসি মাজারের পীর খাজা সিলেকশন চিশতির কাছে যায় তাবিজ নিতে। সেইখানে গিয়ে সে দেখে সেই আওয়ামীউর রহমান খাদেম হয়ে টুপি পরে বসে বসে গান গাইছে, আমায় নহে গো ভালোবাসো মোর উন্নয়ন । সেখানে ডামিউর রহমান নামে আরেক যুবক হেলমেট পরে গান করছে, তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে।

ডেমি মুর ফিরে যেতে চাইলে, পীর সাহেব হাত দিয়ে ইশারা করে। প্রমিত বাংলায় বলে, ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম; উঠে দেখি তুমি চলে যাচ্ছো মাগো। তোমার সমস্যার কথা আমি জানি। তোমাকে রক্ষা করার জন্য গোলাপ হাতে ঐ যুবক আর ঐ হেলমেট পরা যুবক রয়েছে। এরা আমার বিশ্বাসভাজন বরকন্দাজ। দুজনের যে কাউকে বেছে রাখতে পারো তুমি। ওরা ধনাঢ্য। উন্নয়নের তাবাররক পেয়ে ওরা আজ সম্পদশালী। আমার মাজারে যারা আসে, তাদেরকে আমি নিরাশ করিনা। তাই ওদের দুজনকে দোয়া খায়ের করে করে আজ প্রতিষ্ঠিত করেছি। মনে করো এ তোমার স্বয়ম্বর সভা। তুমি বেছে নিতে পারো গোলাপ ফুল অথবা হেলমেট; দুটোই সোনার ছেলে। ওরা অর্জুনের মতো তীর ধনুক চালাতেও পারঙ্গম।

ডেমি মুর উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাবার জন্য সামনে গিয়ে দেখে, সদর দরজা বন্ধ। দরজার ওপাশে কিছু হেলমেট পরা ছেলে হাতুড়ি হাতে পাহারা দিচ্ছে। আর কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে ভক্তিমূলক গান গাইছে, খাজা বাবা বসাইছে প্রেমের মেলা।

পীর সাহেবের পছন্দের দুই গোলাপ ও হেলমেট যুবক এগিয়ে এসে বলে, আমরা তোমার রক্ষক; এতোদিন আমরাই তোমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছি শত্রুদের কাছ থেকে; যারা প্রেমের বিপক্ষের শক্তি। অথচ দুজনের চোখেই ইনডিসেন্ট প্রোপোজালের ললিতলোভনকান্তি মাংসের লোভ।

ডেমি মুর অবাক হয়ে লক্ষ্য করে, সংস্কৃতি মামা হারমোনিয়ামে বসে গাইছে, তোমরা যে বলো দিবস রজনী ভালোবাসা ভালোবাসা সখি ভালোবাসা কারে কয়! যে সাংবাদিক মামা ডেমিকে এই মাজারের সন্ধান দিয়েছিলো, সে বসে বসে কুঁত কুঁত করে জিলাপি খাচ্ছে।

ডেমি কান্নায় ভেঙে পড়ে, তার মনে হয় যেন, চারপাশে সেই আনারকলির মতো দেয়াল তুলে দিচ্ছে এরা সবাই মিলে; তাকে জীবন্ত কবর দিতে।

১৮৯ পঠিত ... ১৬:৫০, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top