ফেসবুক স্পাইডার মেন-উইমেন

২০৬ পঠিত ... ১৮:৩৩, আগস্ট ২৬, ২০২৩

ফেসবুক

ভারতের মহাকাশ কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানীর ছবি দেখে ফেমিনিস্ট আপুনি, সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, রহমত ভাই ও শরিয়ত ভাই ঠিক আলোচনাটাকে মহাকাশ থেকে ধরায় নামিয়ে আনলেন।

এ তো আমার জানাই ছিল; আমাকে বিস্মিত করার ক্ষমতা এই পাতকূয়া সংহতির আর নেই।

এই নারীবিজ্ঞানীরা আসলে সাধক। ছাত্রজীবনে তারা ‘ছাত্রনং অধ্যায়নং তপ:’ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। এরপর তারা গণিতকে ও পদার্থ বিজ্ঞানকে ভালোবেসেছেন। মহাকাশের উদারতাকে মনে ধারণ করেছেন। পার্থিব মোহমায়ার বাইরে এক অন্যরকম আনন্দের জীবন সেটা। আকাশে চোখ পেতে গ্যালাক্সির এন্ড্রোমিডার সৌন্দর্য্য অবলোকনের নান্দনিক অবসর তাদের।

অবসরে তারা গান শোনেন, চলচ্চিত্র দেখেন, বই তো পড়েনই। খুব শখ করে গ্রোসারি শপিং করেন, শিল্পসৃষ্টির আনন্দ নিয়ে রান্না করেন। অফিসের টিফিন বক্সে একটু বেশি করে নিয়ে যান করলা আর আলুর ফ্রাই, পাঁচফোড়ন দিয়ে রান্না করা মশুরের ডাল। অন্য সহকর্মীরা পাঁপড় ভেঙ্গে ডাল দিয়ে খেয়ে প্রশংসা করেন, কেউ কেউ অন্য একটি রান্নার রেসিপি আলোচনা করেন।

নিয়ম করে গৃহকোণের দেবতার মূর্তিতে পূজা দেন, আধ্যাত্মিকতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন। অফিসের ডেস্কে ছোট্ট একটা গণেশ মূর্তি রেখে দেন। নিবিড় গবেষণা আর অংকের আলাপে চন্দ্রযান প্রেরণের দিনটি এলে একটি নারকোল ভেঙ্গে মহাবিশ্বের অধিপতির কাছে প্রার্থনা জানান, এই মিশন যেন সাকসেসফুল হয়।

সপ্তাহান্তের সিনে আলাপে কেউ কেউ আলিয়া ভাটের অভিনেত্রী হয়ে ওঠায় সপ্রশংস হন, কেউ কেউ হৃত্বিক রোশানের সুদর্শন অভিনয়ের ভক্ত হন। কাউকে কাউকে এখনো চন্দ্রমুখী মাধুরী দেবদাস শাহরুখ আকৃষ্ট করে।

এরা বয়েসী বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ির যত্ন নেন। যত ভালো ছাত্র তত বেশি ইকিউ, ততবেশি দায়িত্ববোধ। হাজবেন্ডের সঙ্গে ঝগড়াও হয়, সে নাহলে আর সংসারের আনন্দ কোথায়। মন খারাপ করে ব্যলকনিতে গিয়ে স্বাতী নক্ষত্রের দিকে তাকালে মন ভালো হয়ে যায়। স্বামী কাছের মুদি দোকান থেকে স্ট্রবেরি আইসক্রিম এনে মান ভাঙ্গায়। অথবা এনে দেয় এক গোছা রজনীগন্ধ্যা। পরদিন সেটা খোপায় পরে অফিসে গেলে বোঝা যায় স্বামী-স্ত্রী স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটেছে।

যদিও এই অল রাউন্ডার বিজ্ঞানী নারীরা নিজেরা কখনও আইসিএস পরীক্ষা দিয়ে স্যার হবার আকুতিতে ছিলেন না; তবু সন্তানের সঙ্গে জেনারেশান গ্যাপ হয় তাদের ক্যারিয়ার নির্ধারণী আলাপে। কারণ অভিভাবক প্রজন্মের ক্যারিয়ার যেমন ছক বাঁধা ছিল; নতুন প্রজন্মে তো তা নয়। ওরা নাসার বিজ্ঞানী হবার চেয়ে নার্সিং ট্রেনিং নিতে কিংবা সমুদ্র সৈকত ক্লিনিং-এর কাজটাকে বেশি আনন্দের মনে করে।

মোটামুটি এই হচ্ছে ঐ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের, সিম্পল লিভিং হাই থিংকিং-এর জীবনের চিত্রকল্প।

 

তো এই এভলভলড এনলাইটেনমেন্টের জীবনটাকে ফেমিনিস্ট আপা, সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, রহমত ভাই, শরিয়ত ভাইয়ের পাতকূয়া চিন্তার গ্রন্থিতে বাঁধা অসম্ভব।

ফেমিনিস্ট মানেই রান্না না করা, শ্বশুর শাশুড়িকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিয়ে আসা, ফ্রিদা কাহালো সেজে গ্লোরিয়া জিনসে গ্লোরিয়াস বিপ্লব করা। লোকজনকে ধরে ধরে ধমক দিয়ে দিয়ে পোস্ট ট্রুথ এরার লাইফ স্টাইল শেখানো।

শিবব্রত ইজম মানেই মনের মধ্যে কুঁচকুঁচানি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে মুসলমানদের ঘৃণা করা, চন্দ্র বিজয়ে মোদীকে বিরাট মানবিক নেতা হিসেবে তুলে ধরে ভারতে কট্টর হিন্দু সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে বাংলাদেশে ইসলামি কট্টর সন্ত্রাসবাদকে ‘চ’ বর্গীয় গালি দেয়া।

রহমত ভাই মানেই শাড়ি পরা মহাকাশ বিজ্ঞানী দেখে, ঐ দেখো ওরা জিনস পরে সিগ্রেট খাচ্ছে না; আসলে বড় কাজ করতে ঐরকম আধুনিকা না হয়ে ট্র্যাডিশনাল হলেও চলে। সুতরাং মেয়েদের জিনস পরা ও সিগেরেট খাওয়া অত্যন্ত পচা কাজ।

শরিয়ত ভাইয়ের খারাপ লাগে মহাকাশ বিজ্ঞানীর কপালের ছোট্ট টিপ বা বিন্দিয়া। নিজে কথায় কথায় টেকাটুকা চুরি করে ওমরাহ করতে যায়, আর ক্যান বিজ্ঞানীরা চন্দ্রাভিযান উপলক্ষে পূজা করলো। নিজে কট্টর ইসলামি সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করে, সমালোচনা তোলে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসের। নিজের দেশে জামায়াত সমর্থন করে এমেরিকা-ক্যানাডায় করে লিবেরেল পার্টি সমর্থন।

আর সহমত ভাই তো নিজেকে এই চন্দ্রবিজয়ের সহধর্মিনী মনে করে। যেহেতু ভারত স্বামী চন্দ্র বিজয় করেছে; অতএব বাংলাদেশ স্ত্রী চন্দ্র বিজয় করেছে। যুক্তিবিদ্যার কাকতালীয় অনুপপত্তি।

পৃথিবীর যে কোন উচ্চাঙ্গের আলাপকে নিম্নাঙ্গ সংগীতে পর্যবসিত করার যম এই পাতকূয়া সমাজ। আপনি যখন মন দিয়ে একটু সেতার সন্তুরে কান পাতবেন, এরা এসে তখন লাঠি দিয়ে খালি মুড়ির টিন বাজাবে।

আমার বন্ধু সাব্বির খান সমাজ গবেষণা করে এই মনোজগতের নাম দিয়েছেন, ‘বাই ভাড়াডা একটু বাড়ায়া দিয়েন।‘ ন্যায্য ভাড়া দেয়ার পরেও ভাড়াটা বাড়িয়ে দেয়ার যে আবদার; ঐটিই যে কোন ন্যায্য আলাপে, পাতকূয়া দৈন্য টেনে আনার সদৃশ।

 

ফুল থেকে মৌমাছি নেয় মধু; আর ফেসবুক স্পাইডার মেন-উইমেনেরা নেয় বিষ।  

২০৬ পঠিত ... ১৮:৩৩, আগস্ট ২৬, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top