আমরা যারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকি তাদের সবারই প্রতি বছর অক্টোবর মাসব্যাপি নিউজফিডে চলে কালি-কলমের এক অসাধারণ প্রদর্শনী। যাকে আমরা ইংকটোবার বলে থাকি। প্রদর্শনী বলছি, কারণ প্রতি বছরই পেশাদার ও অপেশাদার কার্টুনিস্ট কিংবা আর্টিস্টদের অংশগ্রহণে ও সৃজনশীলতায় অনলাইন মাধ্যমে ইংকটোবার এক দারুণ উৎসবে রুপ নেয়। একের পর এক সব আর্টওয়ার্ক দেখতে থাকলে ইংকটোবারকে অনলাইন প্রদর্শনী বলেই মনে হয়। অনলাইন প্লাটফর্মে চলে আসা এই জনপ্রিয় ইংকটোবার'কে ২০১৮ সালে প্রথমবারের মত সত্যিকার প্রদর্শনীতে রুপ দিয়েছিল চারুকলার একদল ছেলেমেয়ে মিলে নিজ ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণেই৷ তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তিন দিনব্যাপি ‘ইংকটোবার শোডাউন চারুকলা ২০১৯।’
আমেরিকার বিখ্যাত আর্টিস্ট জেক পার্কার ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত ইংকটোবারের প্রবর্তন করেন। অক্টোবর মাসের ৩১ দিনে ৩১টি আর্টওয়ার্ক শুধুমাত্র কালি-কলম দিয়ে এঁকে সেটি ইংকটোবার হ্যাশট্যাগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করাই হল ইংকটোবারের চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর দেশ-বিদেশের অগণিত আর্টিস্ট অফিশিয়াল প্রম্পট লিস্ট কিংবা নিজেদের ইচ্ছেমত থিম বেছে নিয়ে সম্পন্ন করেন ইংকটোবার। অনেকে আবার উৎসাহ নিয়ে ইংকটোবার শুরু করলেও মাঝপথে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। অনেকটা পড়ালেখার মতই আরকি। তাই ইংকটোবারে ক্ষেত্রে অধিক দক্ষতার সাথে কাজ করার থেকেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ৩১ দিন ধরে কাজ শেষ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রসূন হালদার, তরিকুল ইসলাম হিরক, উপমা হায়দার, অসীম ফাইয়াজ, রাফিউজ্জামান রিদম এবং আহসানা অঙ্গনা- চারুকলার এই ৬ জন শিক্ষার্থী মিলে চারুকলা প্রাঙ্গণে শুধুমাত্র ঢাবি চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আর্টওয়ার্ক নিয়ে আয়োজন করে আসছেন ইংকটোবার প্রদর্শনী। গত বছর ২৪ জন আর্টিস্টের ৭৪৪টি আর্টওয়ার্ক প্রদর্শিত হয়েছিল, যেটি এ বছর বেড়ে হয়েছি দ্বিগুণ। এবারের শোডাউনে জায়গা পেয়েছিল ৪৮ জন শিল্পীর ১৪৮৮টি আর্টওয়ার্ক। কেউ কেউ অফিশিয়াল প্রম্পট লিস্ট অনুসরণ করলেও অধিকাংশ আর্টিস্টই নিজস্ব পছন্দের থিমে কাজ করেছেন। জনপ্রিয় সিরিজ কিংবা মুভি ক্যারেক্টার থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পুরনো দিনের অভিনেতাদের স্কেচ কিংবা বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী পোষাক অথবা গ্রামবাংলার লোকমুখে শোনা শাকচুন্নি, পেত্নী, ডাইনী বা আরো সব ভূতের ক্যারেক্টার - নানা ধরনের থিম ব্যবহার করেছেন আর্টিস্টরা। অনেকে আবার দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়ে ব্যাপারগুলোকে বিভিন্ন আকার কিংবা ফর্ম ব্যবহার করে সৃষ্টি করেছেন নতুন রূপ। এমন নানান সৃজনশীল ও আর্টিস্টদের স্বকীয় কাজ নিয়েই অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রদর্শনীটি।
প্রদর্শনীটি ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। জানা গেছে, ওপেন স্পেসে প্রদর্শনী হওয়ায় অনেক দর্শকই চারুকলা প্রাঙ্গণে ঢুকে আর্টওয়ার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে না পেরে আয়োজকদের এক্সিবিশন গ্যালারি কোথায় তা জিজ্ঞেস করে বেড়িয়েছেন। গ্যালারি ছাড়াও যে এক্সিবিশন হয় সেটাই অনেককে আলাদা করে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে আয়োজকরাই হতভম্ব হয়ে গেছেন।
তিন দিনব্যাপী এই শোডাউন শেষ হয়ে গেছে ৫ নভেম্বর। যেহেতু চারুকলায় গিয়ে আর এসব চমৎকার আঁকাআঁকি দেখার কোন সুযোগ নেই, তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে eআরকির পাঠকরা দেখে নিতে পারেন ‘ইংকটোবার শোডাউন চারুকলা ২০১৯’-এর চমৎকার কিছু আর্টওয়ার্ক।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন