একদিন সম্রাট খবর পেলেন, শহরের কোন এক স্থানে দু’জন লোক দুর্ঘটনায় অক্ষম হয়ে গেল। তারা কোন কাজকর্মও করতে পারছে না। উপোস করে করে মরার দশা হয়েছে তাদের।
সম্রাট খুব দুঃখিত হয়ে বললেন, ‘আমি এত বড় আলীশান প্রাসাদে বসে এত ভালো খাওয়া দাওয়া করি। আর আমার রাজ্যে লোকেরাই না খেয়ে মরতে বসেছে। এটা হতে পারে না।’ তিনি ঘোষণা দিলেন, রাজ্যের সকল অসুস্থ ও অক্ষম লোকদের সম্রাট প্রতিদিন দু’বেলা খাওয়াবেন।
ঘোষণা শোনার পর পরই হাজার হাজার লোক এসে জড়ো হতে লাগল প্রসাদের সামনে। কানা, খোঁড়া, বোবা-বধির-সব রকমের অক্ষম লোকের আগমনে প্রাসাদ প্রাঙ্গনে মহা হুলস্থুল পড়ে গেল।
অবস্থা দেখে বীরবল বললেন, ‘এদের মধ্যে খুব অল্প লোকেই প্রকৃত অক্ষম। বিনা পয়সায় দু’বেলা খাবার সুযোগ পেয়ে অনেক ভালো লোকও অক্ষম সেজে এসেছে। এরা অল্পদিনের মধ্যেই রাজকোষ খালি করে দেবে।’
মন্ত্রীরা বললেন, ‘কিন্তু এদের বের করবো কিভাবে?’
বীরবল বললেন, ‘আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।’
তিনি সোজা সম্রাটের কাছে গিয়ে বললেন, ‘জাঁহাপনা, দয়া করে এক্ষুণি খাদ্য বিতরণ আরম্ভ করবেন না। কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করুন।’
সম্রাট রেগে গিয়ে বললেন, ‘কি যা তা বলছ? আমি কি এসব অসুস্থ লোকদের সাথে ঠাট্টা করব?’
বীরবল বহু কষ্টে তাঁকে বুঝিয়ে রাজি করালেন। কিন্তু সম্রাট অবশ্য এ বিষয়টাতে মনে মনে মোটেও শান্তি পাচ্ছিলেন না। বীরবলের চাপাচাপি আর অনুরোধে রাজি হলেন।
দুপুর হয়ে গেছে। তখনও খাবার দেয়া হয় নি। আগত সব মানুষ হৈ চৈ শুরু করল।
‘কি ব্যাপার? আমাদের কি এমনি এমনি বসিয়ে রাখবে?’ বলল কেউ কেউ।
‘আমাদের এভাবে সময় নষ্ট করার মানে হয় না।’ মন্তব্য করল কেউ কেউ।
যখন সবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে লাগল, তখন এক কোনা থেকে খাবার দেয়া শুরু হল। আর যায় কোথায়! দেখা গেল অন্ধ আর অন্ধ নেই, দিব্যি সে খাবারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। খোঁড়া আর খোঁড়া নেই, সে উঠে দাঁড়িয়েছে। সবাই উঠেপড়ে দৌড় লাগল খাবারের দিকে। মাত্র অল্প কয়েকজন চুপচাপ নিজের জায়গায় বসে রইল। রাজভৃত্যরা তাদেরকেই খাবার দিল শুধু। আর বাদবাকি সবাইকে ঘাড় ধরে বেড় করে দেয়া হল।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন