জাতে পাগল তালে ঠিক

৩৪৮ পঠিত ... ১৬:৩২, জুন ০৭, ২০২৩

জাতে-পাগল-তালে-ঠিক (1)

তিন বৃটিশ সাহেব একবার ঈশ্বরদীতে আসেন; রেল-ব্যবস্থাপনা নিরীক্ষণ করতে। সারাদিন ঈশ্বরদী লোকোশেডের তেল চুরির হিসাব নিকাশ করে কর্মক্লান্ত হয়ে পাকশীতে রেল বাংলোতে বিশ্রাম নিতে গিয়ে সারারাত ঘুমাতে পারেন না। দূর থেকে গান ভেসে আসে,

তিন পাগলে হলো মেলা নদে এসে

ওরা কেউ যাসনেরে পাগলের দেশে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন শাহ আর গগণ হরকরা জ্যোতস্না রাতে পদ্মা নদীতে বজরায় ভাসছেন, আর সমস্বরে ঐ গান গাইছেন।

বৃটিশ সাহেবেরা কলকাতা ফিরে রাইটার্স বিল্ডিং-এ রিপোর্ট করেন,

পাবনা এরিয়া ইজ ফুল অফ ম্যাড মেন; ডোন্ট এভার ভিসিট দ্যাট লোকালিটি। ইউ ওন্ট বি এবল টু স্লিপ। ম্যাড মেন সিং দেয়ার সঙস অফ ম্যাডনেস।

সিদ্ধান্ত হয়; পাগলা গারদ প্রতিষ্ঠা করা হবে পাবনায়। বৃটিশ সাম্রাজ্যে কেউ রাতভর গান গাইলেই তাকে পাগলাগারদে রেখে আসা হবে।

পাগলা গারদ প্রতিষ্ঠিত হলে, পাবনা শহরে সুচিত্রা সেনের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে রাতভর গান করা পাগলদের নিয়েই গারদ ভরে যায়।

এরপর যুগে যুগে পাবনা পাগলা গারদে যখনই যে প্রেসিডেন্ট মানবিক পরিদর্শনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে; তখনই পাগলেরা বলেছে, যখনই নতুন কেউ ভর্তি হয় এখানে; নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে পরিচয় দেয়। পাকিস্তান আমলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে দ্বিধান্বিত হন, আমি কী সত্যিই পাগল! রাওয়ালপিন্ডিতে ফিরে গিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর বাকিজীবন একরকম পাগলদশায় কাটিয়ে দেন।

পাবনায় পাগলা গারদ প্রতিষ্ঠার পর ঠাকুর পরিবার ব্যবসার নতুন শাখা প্রতিষ্ঠা করে। পাগলের ওষুধ তৈরি শুরু হয়; পাবনার অদূরে শিলাইদহের কুঠি বাড়িতে ও শাহজাদপুরে। রাত জেগে কবিগুরু পাগলদের জন্য গান লেখেন। তাতে আইরিশ সুর বসিয়ে দিয়ে পাগলের বিশ্বায়ন করতে থাকেন। নিজে মডেল হন পাগল রোগের মহৌষধের বিজ্ঞাপনে।

সমাজের অত্যন্ত সুস্থ কেরানিদণ্ড দেখে দেখে পাগল হয়ে যান নজরুল। জীবনানন্দ দাশ ট্রাম লাইনে মাথা দেন মোহর পাগলদের দৌড় দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে। ওদিকে দেশবিভাগের পাগলামি দেখে উন্মাদ হয়ে পড়েন মান্টো।

অনেক পরে কবি আবুল হাসান, স্বাধীন দেশের চোরের খনি উপনিবেশের অত্যন্ত সুস্থ চাটার দলের সাফল্যগাথা দেখে আর্তনাদ,

এইদেশে গীতিকার গায়ক পাখিদের

গলাডানা শব্দের স্বরলিপি আর পালক ভেঙ্গে দিয়ে

ভিক্ষুক পাগল আর উন্মাদ বানানো হবে।

আরোপরে বাংলাদেশ উপনিবেশে অত্যন্ত সুস্থ দ্বিদলীয় শোষণযন্ত্র তৈরি হলে; সহমত ভাই ও রহমত ভাইয়েরা দিকে দিকে ছুটে বেড়িয়ে; একে ওকে জাপটে ধরে জিজ্ঞেস করে, আন্নে কী আম্মা লীগ নাকি খাম্মা দল। কারণ নিরপেক্ষ মানুষ হইতে পারে না। আন্নের অবস্থান এক্কুনি পশট করুন।

খাম্মা বলেন, পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।

আম্মা বলেন, আমাদের উন্নয়ন দেখে হিংসায় স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি পাগল হয়ে গেছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাগলের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকে। স্থান সংকুলান হয় না!

রাস্তায় দুই দল অত্যন্ত সুস্থ মানুষ "কৌন বানেগা গালিপতি", তা নির্বাচনের জন্য হাতাহাতি শুরু করে। সহমত ভাই বলে, নির্বাচনের চিন্তায় রহমত ভাইদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রহমত ভাই পালটা বলে, নির্বাচনের দুঃশ্চিন্তায় সহমত ভাইয়ের ঘুম হারাম। শুরু হয় ঘুমের ওষুধ বিক্রি। ঋষি- পাগল-দরবেশের ঘুমের ওষুধের কোম্পানির শেয়ার ভ্যালু লাফ দেয় মতিঝিলে।

রাস্তায় দুদল লোকের এমন অপ্রকৃতস্থ আচরণ দেখে ওয়াশিংটন ঘোষণা করে, বাংলাদেশের সহমত ও রহমত পাগলদের ওপর ভিসা স্যাংশন দিচ্ছি। খবরদার ঐসব পাগল যেন এদেশে না ঢোকে। আগে যারা ঢুকেছে; সেইসব পাগল বিশ্বব্যাংক অফিসের সামনে হাডুডু খেলেছে কয়েকদিন আগে। স্থানে স্থানে এইসব পাগল বিশৃংখলা সৃষ্টি করে।

 টোকিও, ওয়াশিংটন ও লণ্ডনের পক্ষ থেকে  মন্তব্য করা হয়, চার্টার্ড বিমানে করে চাটার দল পাগল ভরে নিয়ে এসে তাদের দর্শক বানিয়ে বিদেশে পাগলসভা করে ঐ দেশের পাগলাচার্যেরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপান; বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। এদের মধ্যে যে সহমত ও রহমত পাগল আছে; তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে আফ্রিকার পাগল ডিটেনশন সেন্টারে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাগলদের ব্যাংক একাউন্ট ও সেকেন্ড হোমের তালিকা তৈরি শুরু। এদের ফাইলের ওপর লেখা হয়, জাতে পাগল তালে ঠিক।

ঢাকা পাগল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য তার সহমত পাগলদের নিয়ে বিবৃতি লেখেন, পাগল অনুভূতির ওপর সাম্রাজ্যবাদী আঘাতের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

পাগলদের বিশেষায়িত টিভি চ্যানেলগুলোতে বিশিষ্ট পাগলেরা বসে যান, ম্যাডটক শোতে।

ওদিকে দেশপ্রেম পাগল এক যুবক ধর্মপ্রেম পাগলদের সঙ্গে নিয়ে, ধর্মের আলো গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেবার পণ করেন,

এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি,

নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙ্গিন হলো আঁখি।

আরেক ধর্মের পাগলেরা তখন, দম মারো দম, হরে কৃষ্ণ হরে রাম গেয়ে আকুল হয়।

পলকের ঝলকে দিকে দিকে পাগলেরা শ্লোগান ধরে, সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিয়েছি; এবার চাকরি দাও।

 চারিদিকের উন্মাদনা দেখে বারো রকমের বেহেশতের বাগানে বসে অর্থমন্ত্রী পাগলামিতে ভরা নির্বাচনী বাজেট দিতে দিতে গান ধরেন,

এই কীগো শেষ গান, বিরহ দিয়ে গেলে

মোর আরো আরো কথা ছিলো বাকি আরো কথা আরো গান

ক্ষণিকের মালাখানি তবে কেন দিয়েছিলে আনি!

৩৪৮ পঠিত ... ১৬:৩২, জুন ০৭, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top