ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে গিয়ে রাজু ভাস্কর্য আর কার্জন হলে ছবি তোলে না এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। দেশের ইতিহাসের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্যের ইতিহাস। এই ভাস্কর্যগুলো শুধুই যে মূর্তি তা নয়, সেগুলো আমাদেরকে ইতিহাস শেখায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য/স্থাপনাগুলোই তাই দেশের সবচেয়ে চেনা ভাস্কর্য। তবে সেসব বাদ দিলেও, কলাভবনের পাশে ক্যাম্পাস শ্যাডো থেকে শুরু করে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান কিংবা চানখারপুলের তেহারি, ক্যাম্পাসের সবকিছুই যেন ঢাবিয়ানদের নখদর্পণে। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু ভাস্কর্য/স্থাপনা আছে যেগুলোর বিষয়ে খোদ ঢাবিয়ানদের অনেকেও জানে না! বিশ্বাস না হলে দেখে নিন।
১# বেগম রোকেয়ার ভাস্কর্য
রোকেয়া হলের ভেতরে বেগম রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য রয়েছে। বাইরে থেকে দেখা যায় না, তাই অধিকাংশ ছেলেদের (যাদের বান্ধবী রোকেয়া হলে থাকে না আর কি!) এবং হলে না থাকা মেয়েদের ভাস্কর্যটি না দেখারই কথা। তবে নারী জাগরণের অগ্রদূতকে মেয়েদের হলের মধ্যেই আবদ্ধ করা রাখা হয়েছে কেন, তা আমাদের জানা নেই!
২# বিশ্বাস-ই-বিজয় ভাস্কর্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহনেওয়াজ হলের সামনে (নিউমার্কেট-পিলখানা রোড) এই ভাস্কর্যের অবস্থান। জায়গাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের। ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার উদ্যোগে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। শেখ মনিরুজ্জামান, নবেন্দু সাহা ও আশিক রনোর শিল্পনির্দেশনায় ভাস্কর্যটির নকশা করেন ভাস্কর দীপক সরকার ও কামরুল হাসান।
৩# শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এবং পটুয়াশিল্পী কামরুল হাসানের কবর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এবং চারুকলা অনুষদের মাঝের অংশটুকু আমাদের সকলের পরিচিত। এখানেই আছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি। এই সমাধির পাশ দিয়ে কত মানুষ হেঁটে যায়। বেশিরভাগ মানুষ জানে, এটা শুধু নজরুলের সমাধি। ভেতরে যে আরও দুজন মহান ব্যক্তির কবর আছে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। ভেতরে গেলে দেখতে পাবেন, নজরুলের সমাধির বাম পাশে রয়েছে একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শহীদের কবর। আর ডান পাশে রয়েছে আরো দুটি কবর। একটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের, অন্যটি পটুয়াশিল্পী কামরুল হাসানের।
৪) বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম মুসা খাঁ'র কবর
ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খান সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-২৭) বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে সর্বাপাক্ষা শক্তিশালী ছিলেন। পিতা ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর মুসা খাঁ ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সোনারগাঁয়ের মসনদের অধিকারী হন। মুসা খাঁ ১৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত মুসা খাঁ মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে তার সমাধি রয়েছে।
৫) টিএসসির গ্রিক মন্দির
দুটি পামগাছের ছায়ায় আবৃত চৌকোনা ছোট্ট একটি ঘর। অনেকটা পুরোনো দিনের কুঠিবাড়ির মতো দেখতে। এটি গ্রিকদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন। গ্রিক মন্দির। মন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও এটি আসলে একটি গ্রিক পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুস্মৃতি বহন করা স্মৃতিসৌধ। এর ভেতরে ঢোকার দরজার ওপরে গ্রিক ভাষায় যা লেখা আছে তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, 'তারাই আশীর্বাদপ্রাপ্ত, যারা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মৃত্যুর জন্য নির্বাচিত হয়েছে।' আনুমানিক ১৮০০-৪০ সালের মধ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল।
এছাড়া টিএসসির সুইমিংপুলের পাশে শিব মন্দির আছে। তবে এটা নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলে শিব মন্দির, কেউ বলে গ্রিকদের দুর্গ।
৬# মালরো বাগান
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফরাসি লেখক-দার্শনিক আঁদ্রে মারলো গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে এই মহান ব্যক্তির স্মরণে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ চত্বরে মালরো বাগান নামে একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঁলিয়স ফ্রঁসেসে দ্য ঢাকার যৌথ উদ্যোগে এই বাগান তৈরি করা হয়েছে। অনুষদের প্রথম গেইটের সামনের সবুজ চত্বরটিই মালরো বাগান।
৭) শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস, স্যার এ.এফ.রহমান হল
নিউমার্কেট এলাকায় মেয়েদের জন্য ঢাবির দুটি হল আছে। কুয়েত মৈত্রী এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। এই দুই হলের খবর সবাই জানে (মেয়েদের হল বলে কথা!) যেটা অনেকেই জানে না সেটা হলো ওই এলাকায় চারুকলার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস আছে। শাহনেওয়াজ ছাত্রাবাস। এটা স্যার এ.এফ.রহমান হলের এক্সটেনশন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন