বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর প্রতি সহিংসতার যে ৭টি খবর হয়তো আপনার চোখে পড়েনি

১০৬৭ পঠিত ... ১৫:৫২, জুন ০৪, ২০২০

ভারতের কেরালায় একটি সন্তানসম্ভবা হাতিকে আনারসের মধ্যে বাজিপটকা ভরে খেতে দেওয়া হয়। পেটে বাচ্চা নিয়ে মারা যায় ১৫ বছর বয়সী হাতিটি। এই খবরে ভারত ও পরে বাংলাদেশ জুড়ে ইন্টারনেটে রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। যদিও পরবর্তী খবরে জানা যায়, ঐ হাতির মৃত্যুতে মানুষের কোনো হাত-ই নেই! আনারসের মধ্যে থাকা ঐ বাজি পটকা তাকে কেউ খেতে দেয়নি, সে নিজেই খেয়েছিল। তবে সে যাই হোক, বন্যপ্রাণীর প্রতি বর্বরতা ও হিংস্রতা তো নতুন কিছু নয়, তা তো আমরা সকলেই কমবেশি জানি! বরং হাজার বছরের মানব সভ্যতার অন্যতম পুরোনো ‘ঐতিহ্য’ এটাই!

হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস বাদ দেই, অন্যান্য দেশের কথাও থাকুক। চলুন একটু নিজের দেশেরই সাম্প্রতিক অতীতের দিকে ফিরে তাকাই।

তার আগে জেনে নেয়া জরুরি, আইন কী বলে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী, যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ৷ যদি ফরেস্ট অফিস থেকে কোনো বন্যপ্রাণীকে পাগল (অর্থাৎ মানুষকে আক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে) আখ্যা দিয়ে হত্যার নির্দেশনা জারি করা হয়, তাহলেই শুধু সেটাকে হত্যা করা যায়৷ তা-ও গ্রামবাসী না, ফরেস্ট বিভাগের লোকজন অর্থাৎ এক্সপার্টরা সেটাকে হত্যা করবে৷

ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ বন্যপ্রাণীর প্রতি অনেক বেশি নির্মম৷ উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশেই এই নির্মমতা বেশি বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান৷ তিনি বলেন, ‘কোথাও আমরা বন্যপ্রাণী দেখলে সেটাকে হত্যা করতে বহু মানুষ জড়ো হই৷ অথচ সেটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের আগ্রহ অনেক কম৷’

 

১# মার্চ, ২০১১

বাংলাদেশের সুন্দরবন সংলগ্ন একটি গ্রামে একটি বাঘকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বাঘটি সাতক্ষীরা জেলার ঐ গ্রামটিতে ঢুকে একজন যুবককে আক্রমণ করার পর বাঘটিকে পিটিয়ে মারা হয়। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন, এখানে ভুল কোথায়? তাহলে বিবিসির সেই প্রতিবেদনের এই অংশটুকু পড়ুন। সম্প্রতি শ্যামনগরেই একটি বাঘ লোকালয়ে ঢোকার পর বন বিভাগ ও সম্প্রতি গঠিত গ্রামভিত্তিক টাইগার রেসপন্স টিমের সদস্যরা ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে এটিকে অচেতন করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায়। বাঘ রক্ষার চেষ্টায় ঐ ঘটনাটিকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছিল। 

কিন্তু শ্যামনগর এলাকায় গত দুই বছরে চারটি বাঘকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। 

 

২# নভেম্বর, ২০১২ 

লোকালয়ে আসা একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খুলনার দাকোপ উপজেলার পেড়িখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সুন্দরবনের ভদ্রা নদী পার হয়ে বাঘটি রাতে পেড়িখালী গ্রামে চলে আসে। সকাল ছয়টার দিকে এটি পেড়িকাটা খালে মাছ ধরতে থাকা জেলে নির্মল সর্দারের ওপর হামলা করে। এ সময় গ্রামবাসী ছুটে গিয়ে বাঘটিকে পিটিয়ে হত্যা করে। 

 

৩# ডিসেম্বর ৬, ২০১৪

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দুর্বৃত্তরা মাথায় গুলি করে হত্যা করে ৫০ বছর বয়সী একটি হাতিকে। এরপর মৃত হাতিটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে নিচে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলে। স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্ত দাঁতের জন্য গুলি করে বন্য হাতিটিকে হত্যা করে। এরপর হাতির দুটি দাঁত কেটে নিয়ে দেহ পুঁতে ফেলে। বাজারে হাতির প্রতিটি দাঁত বিক্রি হয় লাখ টাকায়।

 

৪# অক্টোবর, ২০১৫

বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি করে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা এলাকায় লোকালয়ে ঢোকা দুটি হাতিকে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়। হত্যার পর হাতি দুটির শুঁড়, দাঁত ও কানও কেটে ফেলা হয়। 

 

৫# জানুয়ারি, ২০২০

এ বছরের ৬ই জানুয়ারি এনটিভির শিরোনাম,কক্সবাজারে হাতিকে গুলি করে হত্যা, শাবক হাতির মাতম। বন্য মা হাতিকে গুলি করে হত্যা করে  দুর্বৃত্তরা। মৃত মায়ের দেহ আগলে রেখে মাতম করছিল একটি শাবক। এই দৃশ্য শত শত মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। শাবক হাতিটির মর্মস্পর্শী এই কাণ্ড দেখে অনেকের চোখে পানি নেমে এসেছিল। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাইস্যাঘোনা এলাকায়।

 

৬# মে ৫, ২০২০ (অর্থাৎ গত মাসের ঘটনা!)

মাদারীপুরে খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে ১৫টি বানরকে হত্যা করা হয়। এলাকাবাসী মতে,  বিকেলে ওই এলাকায় অপরিচিত বেশ কয়েকজন যুবক কলা, মুড়ি, চিড়া খাবার হিসেবে বানরদের খেতে দিয়ে চলে যায়। খাবার খেয়ে মুহুর্তেই বানরগুলোর মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। কিছু সময়ের মধ্যেই ছটফট করে মাটিতে ঢলে পড়ে বেশ কয়েকটি বানর। বিষক্রিয়ার কয়েকটি বানর এদিক-ওদিক চলে যায়। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে ১৫টি বানরের মৃতদেহ।

 

৭# মে ২৯, ২০২০ (গত সপ্তাহ!)

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় ৯টি বন্যপ্রাণীকে পিটিয়ে হত্যা করে এলাকাবাসী। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে এই এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় গত কিছুদিন ধরে জঙ্গলের শেয়াল লোকালয়ে এসে হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় যুবক ও তরুণরা গ্রামের পাশের জঙ্গলে হানা দেয়। এ সময় তারা লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে শেয়াল, বেজি, গন্ধগোকুলসহ ৯টি প্রাণী হত্যা করে।

 

শেষ কথা

খালি চোখে মনে হতে পারে, যে বা যারা হত্যা করছে তারাই হত্যাকারী। আদতে তা না। এটার শেকড় আরও গভীরে। বাঘ কিংবা হাতি বারবিকিউ পার্টি করার জন্য লোকালয়ে আসে না। তারা নিরুপায় হয়ে খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে আসে। আমরা নির্বিচারে বন উজাড় করছি। ছারখার করছি তাদের বাসস্থান আর খাদ্যের জোগান। মূলত হত্যার বীজটা পোতা হয় তখনই।      

১০৬৭ পঠিত ... ১৫:৫২, জুন ০৪, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top