মুহম্মদ বিন তুঘলক: ইতিহাসের প্রথম ইলিশ শহীদ?

১৩৪১ পঠিত ... ১৩:০৩, এপ্রিল ১৬, ২০১৯

 মুহম্মদ বিন তুঘলকই কি ইতিহাসের প্রথম ইলিশ শহীদ?

এটা eআরকি’র কোনো  eআরকিমূলক প্রশ্ন নয় কিংবা তুঘলকী অনুমানও নয়। মুহম্মদ বিন তুঘলক ছিলেন তুঘলক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের বড় ছেলে এবং তুঘলক রাজবংশের ২য় সুলতান। তুঘলক রাজবংশের ২য় সুলতান যে ইলিশ খেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তার সম্ভাবনা প্রবল। প্রথম যদি নাও হয়ে থাকেন অন্তত বিখ্যাততম ইলিশ শহীদ তাকে বলা যেতেই পারে।   

মুহম্মদ বিন তুঘলক earki photo king
সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক  ইলিশ খেয়ে মারা গেছেন এমন দাবি এবং দাবির পক্ষে কিছু যুক্তি হাজির করেছেন বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী। আলী সাহেবের রচনাবলি থেকে eআরকি’র পাঠকদের জন্য প্রাসঙ্গিক অংশটুকু উদ্ধৃত করা যাক: 

"স্থির হলো মুহাম্মদ বিন তুঘলক নৌকায় করে সিন্ধু উজিয়ে উজিয়ে তারই উপনদী দিয়ে লাহোর পৌছবেন। উত্তম ব্যবস্থা, ইতিমধ্যে রোজার মাস বা রমজান এল। হুজুর (তুঘলক) বললেন, 'উপোস করব'। আমির-ওমরাহ বললেন, 'হুজুর একে অসুস্থ, দুর্বল, তদুপরি ভ্রমণকালে উপবাস করা ইচ্ছাধীন---কুরআন শরিফের আদেশ'। হুজুর তেড়ে বললেন, 'যে মুসাফিরিতে তকলিফ হয় আল্লাহ তায়ালা সেটের কথাই বলেছেন। আমরা তো যাচ্ছি নৌকায় করে আরামসে শুয়ে শুয়ে। আমি উপোস করবই।'

পুনরায় গোঁ। তর্ক করবে কে? মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সাথে তর্ক করার মতো শাস্ত্রের এলেম কারো পেটে ছিলো না।

কয়েকদিন পর ধরা পড়ল একটি চমৎকার মাছ। কিন্তু এ জাতের মাছ দিল্লিবাসীরা কখনো দেখেন নি। তারা বললেন, 'যে মাছ চিনিনা সে মাছ খাবো না'। হুজুর বললেন, 'কুরআন, হাদিস কোন শাস্ত্রে এ জাতীয় মাছের বর্ণনা দিয়ে যখন বারণ করা হয়নি তখন আমি এটি খাবই'। আবার গোঁ।

খেলেন। দারুণ তেলওয়ালা মাছ ছিলো। হুজুরের শরীর ছিলো রোগা। রানের (অভিযানের) ধকলে ছিলো দুর্বল। পেট ছাড়লো, কিছুতেই বন্ধ হয় না। বোধহয় তৃতীয় দিন হুজুর ইন্তেকাল করলেন, অর্থাৎ পটল তুললেন। 

ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারানি লিখলেন, 'এই প্রকারে হুজুর তার অবাধ্য প্রজাকুলের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে রক্ষা পেলেন; প্রজাকুলও হুজুরের হাত থেকে নিস্কৃতি পেয়ে বাচলো।'

আলী সাহেবের মনে প্রশ্ন জাগলো সুলতান মৃত্যুবরণ করলেন কী খেয়ে? তিনি খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিলেন। রীতিমত গবেষণা শুরু করলেন। 

আলী সাহেবের ভাষ্যেই বাকিটা শুনুন: 

‘আমি বঙ্গসন্তান। মাছের নামে অজ্ঞান। আমার মনে প্রশ্ন জাগলো বাদশাহ-সালামত কি খেয়ে শহিদ হলেন?

বরানি, মিরাত দিয়েছেন চন্দ্রমাসের হিসেবে তুঘলকের মৃত্যুদিবস। তার থেকে কোন ঋতুতে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তা ধরা যায়না। বিস্তর কেলেন্ডার ঘেটে যোগবিয়োগ করে বের করলুম ঋতুটা৷

আমার এক সিন্ধি দোস্ত আছে। ইতিহাসে তার বড়ই শখ। তাকে গিয়ে শুধালুম।

তিনি বললেন, 'নিঃসন্দেহ বলা যেতে পারে, পাল্লা মাছ'

গঙ্গা উজিয়ে যেটা আসে বা আসতো সেটা ইলিশ---হিলসা। নর্দমা উজিয়ে এই মাছটা যখন আসে তখন ব্রোচের (broach --- ভৃগুকচ্ছ) লোক এটাকে বলে মদার। পার্সিরা বলে বিম। সিন্ধু উজলে এই মাছকে বলে পল্লা।

অনেকেই অনেক কিছু চড়ে স্বর্গে যান; ঐরাবত, পুষ্পকরথ, কতো কি!

শাহ-ইন-শাহ বাদশাহ সালামত মুহাম্মদ বিন তুঘলক ইলিশ চড়ে স্বর্গে গেলেন। স্বর্গে যাবেন না তো কোথায় যাবেন। ইলিশ খেয়ে যে প্রাণ দেয় সে তো শহীদ---মর্টর।

 

[তথ্যসূত্র:   

পঞ্চতন্ত্র / দ্বিতীয় পর্ব

সৈয়দ মুজতবা আলী রচনা সমগ্র/ প্রথম খন্ড - ১৫২ পৃষ্ঠা।

প্রকাশনী: বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র]

১৩৪১ পঠিত ... ১৩:০৩, এপ্রিল ১৬, ২০১৯

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top