করোনার এই ভীষণ দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীরাও পিছিয়ে নেই, সাংবাদিকরাও পার করছেন বিপদসংকুল সময়। এই পেশার মানুষদের প্রতি এই করোনায় আমাদের রয়েছে বুকভরা সম্মান ও সহানুভূতি। কিন্তু এইসব পেশার মানুষ কিংবা মানুষ বাদে, আপনার একেবারেই আশেপাশের কিছু জীবন-সংশ্লিষ্ট বস্তু রয়েছে, যা করোনাকালে প্রচণ্ড খাটছে, কষ্ট করছে, তবু আপনাকে নিরন্তর সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে। বস্তু হলে কী হবে, তারাও তো মানুষ! কিন্তু কারা, সরি, কী তারা? চলুন জেনে নেয়া যাক!
১# বিছানা
সারাদিন শুয়ে-বসে থাকছেন, গড়াচ্ছেন, দুঃখ পেলে কেঁদে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, আনন্দে খলবল করছেন, বিরহে কোলবালিশ জড়িয়ে হাউমাউ করছেন। কিন্তু করছেনটা কোথায়? আপনার বিছানায়! হ্যাঁ, এই সেই বিছানা, যে আপনার ফুলেফেঁপে ওঠা শরীরটাকে বয়েই চলেছে সারাটাদিন, বয়েই চলেছে...
২# মোবাইল ফোন
এতটা টেপাটিপি মনে হয় ইলেকট্রনিক্স জিনিসপাতির গায়ে জড়ানো বাবল র্যাপকেও সহ্য করতে হয়নি! বাপরে বাপ! দিনরাত খালি টেপা আর টেপি! চার্জ শেষ হয়ে গেলে চার্জার লাগিয়ে টেপে। বাংলার প্রতিটা মানুষ এখন টেপাটেপিতে নাপিতের চেয়েও ওস্তাদ!
৩# সিলিং ফ্যান
এক্কেবারে চব্বিশটা ঘণ্টা ঘুরতেই আছে... ঘুরতেই আছে! শাবানাও এভাবে এতবার কোন সিনেমায় মাথা ঘুরে পড়েননি।
৪# লুঙ্গি, ম্যাক্সি
লুঙি-ম্যাক্সি, গেঞ্জি-টিশার্ট তথা ঘরে পরা কাপড়দের এখন রাত নাই, দিন নাই, আহার নাই, নিদ্রা নাই। দুইদিন পর আর এদেরকে ঘর মোছা ত্যানাও বানানো যাবে না। সরাসরি পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে দাঁত মাজতে হবে...
৫# বাসন মাজুনি
ঘরে বসে আর কাজ কী? খাও, ঘুমাও, টেনশন করো, আবার রাক্ষসের মতো খাও। এতো এতো বাসন মাজতে মাজতে আক্ষরিক অর্থেই এদের জীবনের 'লাল সুতা' বের হয়ে গেছে...
৬# ল্যাপটপ
সারাদিন নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্কাইপি, জুম, হ্যাংআউট, অনলাইন ক্লাসে সে নিশ্বাসটুকু ফেলার সময় পায় না। এই কয়দিনে যত জোরে জোরে এন্টার আর স্পেস বাটনে চাপ দিয়েছেন, একবার ভাবুন, সে সহানুভূতি না পেলে আর পাবেটা কে?
৭# ঘরের বারান্দা
বাইরের পৃথিবীর সাথে একমাত্র যোগাযোগের জায়গা। কারও একটু গোপন ফিসফাস, লাজুক প্রেমের মোবাইল আলাপ, চিকনে সুখটান- সবকিছুর জায়গা ঐ একটাই। এতো এতো ডিউটি পালনে বারান্দারও এখন নাভিশ্বাস উঠছে... এই অবস্থার কথা আগে জানলে বারান্দাগুলো কবেই বাসা থেকে পালিয়ে যেত!
৮# দৈনিক পত্রিকা
মানুষ এখন প্রথমে পত্রিকা পড়ে। তারপর রিভিশন দেয়। তারপর মুখস্থ করে। দিনের শেষে সব মনে আছে কিনা সেটা আরেকবার ঝালিয়ে নেয়। এতবার পড়তে পড়তে ঝাঁঝরা পেপার দিয়ে এখন আর ঝালমুড়ির ঠোঙা বানানোও সম্ভব না...
৯# ঘরের টিকটিকি-মাকড়সা-আরশোলা
মানুষজন না থাকলে বা ঘুমালে তারা মনের সুখে ডিমে তা দেয়, জাল বোনে, ফড়ফড় করে ওড়ে। মানুষ তো অষ্টপ্রহর এখন বাসাতেই। আচ্ছা, তা নাহয় থাকলি, তবে রাতের বেলায় ঘুমা! তা না, কারো ঘুমেরই আর টাইমটেবিল নেই! তেলাপোকা, টিকটিকি সমাজের জীবন তাই দুর্বিসহ, ডাইনিং টেবিলে হাটাচলা করার টাইমটাও যেন আজ তাদের নেই!
১০# হ্যান্ড স্যানিটাইজারের টেপার বাটন
টেপাটিপিতে মোবাইলের পরেই এর স্থান। কী এক সময় এলো! মানুষ বাইরে থেকে এসে হাত ধুচ্ছে। কিছু করতে ইচ্ছা না করলে হাত ধুচ্ছে। মন খারাপ থাকলে ধুচ্ছে। মন ভালো থাকলেও হাত ধুচ্ছে। রাগে হাত নিশপিশ করলেও হাত ধুচ্ছে। পাটায়-পোঁতায় ঘষাঘষি, ওদিকের মরিচের কাম শ্যাষ! আই মিন, টেপাটিপিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলের বাটনের জীবন দফারফা!