আর্জেন্টিনা ও জার্মানির ফুটবলার-সমর্থকরা বাকি বিশ্বকাপের অবসর সময় যেভাবে কাটাতে পারেন

৫৪৫ পঠিত ... ১৮:২৬, জুন ৩০, ২০১৮

বিশ্বকাপে চলছে নকআউট, অথচ নেই জার্মানি! এমন ঘটনা ফুটবলবিশ্ব দেখেছে ৮০ বছর আগে! (যারা দেখেছেন তাদের কয়জন বেঁচে আছেন সেটা নিয়ে কথা হতে পারে!) ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপ পর্বেই বাদ পড়ার গত তিন বিশ্বকাপের ধারা অব্যাহত রেখে জার্মানি নকআউট পর্বের আগেই বিদায় নিয়েছে, এটাই অতি নিষ্ঠুর বাস্তবতা! আবার আর্জেন্টিনাও বিশ্বকাপকে বিদায় জানিয়েছে সেকেন্ড রাউন্ডে ফ্রান্সের সাথে হেরে। ২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও পরের বিশ্বকাপগুলো বেশ ভালোই খেলেছিল দলটি। এর মাঝে গত বিশ্বকাপে তো শিরোপার একেবারে কাছে গিয়ে মারিও গোটশের গোলে বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখতে পারেনি মেসিবাহিনী। 

জার্মানি-আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের মতো সমর্থকদের জন্যও বিশ্বকাপ একরকম শেষ (যারা বেলজিয়াম-স্পেন ইত্যাদি দলের দিকে এগিয়েছেন, তারা বাদে!)। এই অবসর সময় খেলোয়াড়রা কীভাবে কাটাবেন? সমর্থকরাই বা কী করবেন বিশ্বকাপের বাকি সময়গুলোতে পাওয়া এই অখন্ড অবসরে? আর্জেন্টিনা-জার্মানি সমর্থক বন্ধুদের জন্য তা ভাবতে বসেছিলো eআরকির একদল ব্রাজিল সমর্থক ফুটবল বিশারদ। 

 

খেলোয়াড়েরা যা করতে পারেন


১# অন্যান্য বছর এই সময়টাতে ফুটবলাররা একদম ফ্রি থাকেন। ক্লাব ফুটবল শেষ হয়, তারা পরিবারের সাথে সময় কাটায়, পরের মৌসুমের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এবারের বিশ্বুকাপের কারণে খেলোয়াড়েরা সেটা পারছিলেন না। কিন্তু প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়ায় মেসি-ওজিলরা বিশ্রামের জন্যে পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন।

 

২# এই বিশ্বকাপটা সত্যিই দুর্দান্ত হচ্ছে। কিন্তু খেলোয়াড়ের মাঠে খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিশ্বকাপের দুর্দান্ত ম্যাচগুলো দেখতে পারেন না। জার্মান-আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের এখন সেই ঝামেলা নেই, টেনশনও নেই! তারা আরাম করে বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলো দেখতে পারবেন!

৩# ২০২২-এ কাতার বিশ্বকাপের জন্যে দল দুটো এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারে। তারা এমনিতেও এবার যা খেলেছে, তারপর ভালমতো প্রস্তুতি না নিলে ২০২২ বিশ্বকাপেও খুব বেশিদূর যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

৪# খেলোয়াড়েরা প্রায়ই বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মডেল হন। অন্যান্য সময় ব্যস্ততার কারণে মডেলিং-এ বেশি সময় দিতে পারেন না। কিন্তু এখন আর্জেন্টিনা-জার্মানি ফুটবল দল দুটি একদম ফ্রি! তারা সামনের চার বছরের মডেলিং-এর কাজগুলো সেরে নিতে পারেন।

৫# ফুটবলাররা রাশিয়া গিয়েছিলেন বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু তাদের জন্যে রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ, সেই হিসেবে বলা যায় তারা এক প্রকার হুদাই গিয়েছেন রাশিয়া। তাই এই রাশিয়া ভ্রমণ যাতে একবারে বিফলে না যায় তাই রাশিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলো তারা সদলবলে ঘুরে দেখতে পারেন।

৬# এতদিন বিশ্বকাপ নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে দুটি দলের খেলোয়াড়রা একটা ঈদের নাটকও দেখতে পারেননি। এই অবসরে ইউটিউবে বসে বসে এবারকার ঈদের নাটকগুলো দেখে নিতে পারেন।

৭# আমরা বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় দেখি যে বিভিন্ন সাবেক ফুটবল তারকারা বিশ্বকাপ নিয়ে কলাম লিখেন। এই দুটি দলের তারকাদের তো আপাতত কোন কাজ নেই, তারা চাইলে পেলে-ম্যারাডোনার মতো পেপারগুলোতে কলাম লিখে বিশ্বকাপের বাকি সময়টা পার করতে পারেন। 

৮# তাদের হাতে আপাতত কোন কাজ নেই। তারা চাইলে এই সময়টায় বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করে, সেগুলোতে বিশেষজ্ঞ উপস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। দর্শক অন্তত মাছরাঙা টিভির হিল্লোলের বউ নওশিনের ফুটবল নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতের হাত থেকে বাঁচবে।

৯# তারা বিশ্ব ভ্রমণেও বের হতে পারেন। বিভিন্ন দেশে গিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন অবসর। এর মাঝে জার্মান ফুটবলাররা অবশ্যই মেক্সিকো গিয়ে সেখানকার মেক্সিকান পিৎজা, নাচোস ও কোরিয়া এসে কোরিয়ান স্যুপ এসে চেখে যেতে পারে। কিংবা তারা অবসর পালন করতে পারে, মেক্সিকান ও কোরিয়ান মুভি দেখে কে পপ শুনে। আর আর্জেন্টাইন ফুটবলাররা প্যারিস ঘুরে আসতে পারেন। ভ্রমণের জন্য প্যারিসের কোন তুলনা নেই। আইফেল টাওয়ারের সাথে ছবি তুলে ফেসবুক-টুইটারে দিলে আরও নতুন ফ্যান-ফলোয়ার দেওয়া যেতে পারে। আশা করা যায়, তাদের সময় খারাপ কাটবে না।

 

 

সমর্থকেরা যা করতে পারেন

১# জার্মান সাপোর্টাররা প্রথমে তাদের বাসার ছাদে গিয়ে জার্মানির পতাকাটা নামিয়ে সেটাকে সামান্য অল্টার করে তারপর উল্টা করে টাঙ্গিয়ে, ‘আমি তো বেলজিয়ামের সাপোর্টার’ এই মর্মে বাকী বিশ্বকাপ বেলজিয়ামকে সাপোর্ট দিতে পারেন। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা পতাকা দিয়ে কী কী করতে পারেন তার নমুনা এখানে দেখে নিতে পারেন।  

২# আর্জেন্টিনা-জার্মানি বাদ, তাই এই দুই দল নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে তেমন লাইক আর পাবেন না। তাই তারা ব্রাজিল, স্পেন, ফ্রান্স এ সব দল নিয়ে, ‘নেইমার তো একটু টোকা লাগলেই পড়ে যায়’, ‘স্পেনের কুতকুত খেলা ভাল্লাগে না’ এই ধরবনের স্ট্যাটাস দিয়ে বিশ্বকাপের বাদবাকি সময়টা পার করতে পারেন।

৩# তারা চাইলে দেশের বিভিন্ন সমস্যাগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে তাদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তুলে এনে, 'দেশে এত সমস্যা থাকতেও মানুষ কেন বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে পড়ে আছে, এই দেশের মানুষকে দিয়ে তাই কিছু হবে না'- এই মর্মে স্ট্যাটাস দিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে পারেন।

৪# বিশ্বকাপের কারণে অনেকেরই এতদিন অনেক কিছু মিস হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের রাত জেগে খেলা দেখায় ক্লাস মিস হয়েছে, চাকুরিজীবীদের অফিস। তারা এখন তাদের ঐসব দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ দিতে পারে।

৫# মূলত নিজের দল ওয়ার্ল্ডকাপে টিকে থাকলে একটা চাপ থাকে খেলা দেখার সময়। কিন্তু যেহেতু জার্মানি আর আর্জেন্টিনা এখন বিশ্বকাপের বাইরে তাই সমর্থকেরাও নির্ভার হয়ে বিশ্বকাপের বাকি খেলাগুলো আরাম আয়েশ করে দেখতে পারে।

৬# একান্তই যদি তাদের বিশ্বকাপ নিয়ে সকল আগ্রহ চলে যায় তাহলেও তাদের জন্যে একটা রাস্তা খোলা আছে। কয়েকদিন আগেই হয়ে গেল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, দেশে সামনে জাতীয় নির্বাচন সহ আরো নির্বাচন আছে। জার্মানির সমর্থকেরা সেই সব নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।

৭# বিশ্বকাপের শুরু থেকেই জার্মানি আর আর্জেন্টিনা যে চাপে ছিল নিশ্চয়ই তাদের সমর্থকদের এবারের ইদের একটা নাটকও দেখা হয়নি, তারা সেই নাটকগুলো দেখে নিতে পারেন।

৮# বিশ্বকাপের বাদবাকি সময়টা তো তাদের পার করতে হবে, নাকি? ফেসবুকে তো তারা ঢুকতে পারবেন না। এই সময়টায় তারা ফেসবুক টেসবুক সব বাদ নিজের গ্রামের বাড়ি, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ঘুরে আসতে পারেন। কিংবা গেম অব থ্রোন্স, ফ্রেন্ডস, ব্রেকিং ব্যাড ইত্যাদি তুলে রাখা টিভি সিরিজ দেখে বা রিভিশান দিয়ে নিতে পারেন।

৯# তারা যদি খুব বেশি দুঃখ পেয়ে থাকেন, কোনমতেই যদি তাদের সেই দুঃখ না যায় তাহলে তারা নেইমারের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না করতে পারেন। তাতে যদি তাদের দুঃখ একটু কমে!

৫৪৫ পঠিত ... ১৮:২৬, জুন ৩০, ২০১৮

Top