ছোটবেলার ক্রাশের ছেলেকে পেয়ে যে প্রতিশোধ নিলাম

১৫১১ পঠিত ... ১৫:৩০, এপ্রিল ০৯, ২০২৩

ছোটবেলার

 

আমি প্রথম প্রেমপত্র লিখি ক্লাস ফোরে। মেয়ের নাম বৃষ্টি। একই ক্লাসে পড়তাম আমরা।

একবার বৃষ্টি তিন-চার দিনের মতো ক্লাসে এলো না। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, ও ক্লাসে না আসাতে আমার কিছু ভালো লাগছে না। তখনই বুঝে ফেললাম, আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। সিনেমায় দেখেছি, নায়ক-নায়িকা একজন আরেকজনকে কল্পনায় মনে করলেই ভালোবাসা হয়ে যায়।

অবশেষে একদিন বৃষ্টি ক্লাসে আসে। ওকে দেখেই আমার বুক কেঁপে ওঠে। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে যাই—আমি সত্যিই ওকে ভালোবাসি।

এক রাতে বাসার সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে চিঠি লিখতে বসলাম। এক লাইনের ছোট্ট একটা চিঠি—তুমি আমার হয়ে যাও, পৃথিবীর সব সুখ আমি তোমার পায়ের কাছে এনে দেবো।

(পুরোপুরি মনে নেই, তবে এরকমই একটা ডায়ালগ কোনো একটা সিনেমায় নায়ককে বলতে শুনেছিলাম, সম্ভবত মান্নারই ডায়ালগ। সেটাই লিখেছি।)

পরদিন ছুটির সময় দুরুদুরু বুকে চিঠিটা বৃষ্টির হাতে দিয়েই আমি ছুটে পালাই।

তারপর সারাটা দুপুর আমার সে কী উত্তেজনা! কী-না-কী হয়! বৃষ্টি কি আমার প্রস্তাবে রাজি হবে? অবশ্যই হবে। আমি ছেলে ভালো।

সেই সন্ধ্যায় বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে তার মা আমাদের বাসায় উপস্থিত। আমার আম্মার কাছে চিঠি হস্তান্তর করা হলো। আম্মা একচোট ধুনলেন আমাকে। রাতে আব্বা বাসায় ফেরার পর খেলাম দ্বিতীয় দফায় ধুনানি। ভালোবাসা উধাও হয়ে গ্যালো আমার। মনের মধ্যে তখন একটাই কথা, ছেরির ঘরের ছেরি, দেখিস তোরে কী করি!

প্রতিশোধ আর নেয়া হয়নি। ফাইভে উঠেই আমরা দুজনেই স্কুল বদলে ফেললাম। দিনে দিনে ওকে ভুলে গেলাম।

...গত সপ্তাহে, অনেক অনেক বছর পর নিউমার্কেটে সেই বৃষ্টির সাথে দেখা।

এত বছর পরে দেখা, তবু তাকে চিনলাম। কীভাবে চিনলাম, জানি না। মনের টান? হতে পারে। হতে পারে আবার কী? অবশ্যই মনের টান। নয়তো ওর চেহারা দিপু মনির মতো হয়ে যাওয়ার পরেও কীভাবে চিনলাম?

বৃষ্টির হাত ধরে হাঁটছে গাবদা গোবদা একটা ছেলে। হাবভাবে মনে হচ্ছে ছেলেটা বৃষ্টিরই। এই মেয়ে এত বড়ো বাচ্চা পয়দা করে ফেললো কীভাবে কে জানে!

আমি ডাক দিলাম, বৃষ্টি!

বৃষ্টি থমকে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরলো। বললো, এক্সকিউজ মি!

তুমি বৃষ্টি না?

হু! আপনি?

বর্তমান নাম আহমেদ ইশতিয়াক, ক্লাস থ্রিতে আমার নাম ছিলো মুহসিন। পোলাপান শয়তানি করে আমাকে ডাকতো মেশিন। আমরা আল-আমিন প্রি ক্যাডেটে পড়তাম। মনে আছে?

বৃষ্টি ভুরু কুঁচকে আকাশ পাতাল ভাবছে।

আমিও ভাবছি, ভুল করে ফেললাম কি না! এই মেয়ে বৃষ্টিই তো? নাকি সত্যিই দিপু মনি? আমি আশেপাশে সাদা পোশাকের পুলিশের খোঁজে চোখ বোলালাম।

ও আচ্ছা আচ্ছা! মুহসিন! তুমিই সেই শয়তানটা! আগে না চিকনা ছিলা? এত মোটা হইছো কেমনে!

এতগুলো দিন পর দেখা, অথচ বৃষ্টি এভাবে কথা বললো! এই মেয়ের মন বলে তো কিছুই নাই দেখা যায়। আমি বললাম, তুমিও তো আগে কালাকুলা ছিলা, এখন ফর্সা হইছো!

বৃষ্টি খিলখিল করে হাসলো। 

আমরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। ইন্টারের পরেই বৃষ্টি বিয়ে করে ফেলে। তারপরেই বাচ্চা নিয়ে নেয়। এই গাবদাটা ওরই বাচ্চা। নাম, উপন্যাস।

আমি বললাম, নাম তো খুবই এস্থেটিক!

বৃষ্টি বললো, ওর বাবা রাখছে।

আমি মনে মনে বললাম, অথচ আমারই হওয়ার কথা ছিলো এই উপন্যাসের বাপ!

যা-ই হোক, আমরা কথা বলি আর হাঁটি। উপন্যাসও আমাদের সাথে হাঁটে আর কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। ব্যাটা সম্ভবত আমাকে পছন্দ করছে না।

কথাবার্তার এক পর্যায়ে বৃষ্টি বললো, এই, তুমি উপন্যাসকে নিয়ে একটু দাঁড়াও। আমি এই দোকান থেকে আসি। একটু সময় লাগবে।

এই বলে উপন্যাসকে আমার হাতে দিয়ে বৃষ্টি একটা গয়নার দোকানে ঢুকে গ্যালো।

উপন্যাস রোবোটের মতো আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললাম, বাবু, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?

উপন্যাস মুখ শক্ত করে বললো, ক্লাস থ্রি।

আমি নানা কথায় ভাব জমানোর চেষ্টা করলাম ব্যাটার সাথে। আফটার অল, প্রথম যাকে ভালোবেসেছি, তার ছেলে। এর মানে তো আমারও ছেলে।

মজার ব্যাপার, অল্পের মধ্যেই উপন্যাস সহজ হয়ে এলো। কথাবার্তায় বোঝা গ্যালো ইবলিশের পরেই এর অবস্থান।

আমি বললাম, গার্লফ্রেন্ড আছে?

উপন্যাস সাথে সাথে বললো, নট লাইক দ্যাট, বাট আই লাইক হার।

বলো কী!

ইয়াহ!

মেয়ের নাম কী?

আনিকাহ!

প্রপোজ করছো?

নোপ।

করে ফেলো!

আই এম অলসো থিংকিং এবাউট দ্যাট। বাট… হাউ…

আমি মনে মনে বললাম, পাইছি!

আমার ব্যাগে সবসময়ই কাগজ কলম থাকে। আমি একটা পৃষ্ঠায় লিখলাম,  তুমি আমার হয়ে যাও, পৃথিবীর সব সুখ আমি তোমার পায়ের কাছে এনে দেবো।

তারপর কাগজটা ভাঁজ করে উপন্যাসকে দিয়ে বললাম, এই চিঠিটা তুমি তোমার আনিকাহ না কী, ওরে দিবা। তবে কেউ যাতে না জানে। এমনকি তোমার আম্মুও না। ঠিক আছে?

উপন্যাস চিন্তিত মুখে বললো, ওকেহ, বাট…

আমি বললাম, এই চিঠিতে কাজ হবে। বিফলে মূল্য ফেরত। তুমি নিশ্চয়ই চাও, আনিকাহ তোমাকে লাভ করুক?

ইয়াহ!

তাহলে আমি যা বলি, তা করো।

ওকেহ! থ্যাংক ইউ ব্রো।

আমি তোমার ব্রো না, মামা।

ওকেহ, মামাহ!

কসম কাটো, কাউকে বলবা না যে এটা আমি দিছি।

কাসাম কী?

প্রমিজ করো।

ওহ, প্রমিজ!

আরও কিছুটা সময় আমরা একত্রে কাটাই। তারপর বৃষ্টি আসে। আমরা কোল্ড ড্রিংক্স খাই। তারপর একে অপরের মোবাইল নাম্বার নিয়ে বিদায় নেই।

… আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টির ফোন।

ইশতিয়াক, বাজে একটা ব্যাপার হইছে!

আমি চিন্তিত গলায় বললাম, কী হইছে?

উপন্যাস আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের এক মেয়েকে লাভলেটার দিছে। মেয়ের মা আজ সকালেই বাসায় বিচার নিয়ে আসছে। কেমন লাগে বলো!

আমি বললাম, বাপে ধুনছে?

ধুনছে মানে?

মানে ওর বাবা ওকে পিটাইছে নাকি?

না, ও কখনো বাচ্চাকে মারধোর করে না।

ধুরু! তুমি মারছো?

না।

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ওকে জিজ্ঞেস করো, এই লেখা পাইছে কই!

জিজ্ঞেস করছি।

আমি ঢোক গিলে বললাম, কী বলছে?

বলছে, ড্যাডের টেবিলে নাকি পাইছে।

আমি বললাম, লে হালুয়া!

বৃষ্টি বললো, আমার কেমন যেন লাগতেছে। হাতের লেখাটাও তো বড়োদের মতো। রাকিবের লেখার কাছাকাছিই। আচ্ছা, এমন কি হতে পারে, এটা রাকিবই লিখছে? 

রাকিব কেডা!

আরে আমার জামাই, বাল!

আমি মনে মনে কিছু দোয়া-দরূদ পড়ে নিলাম। প্রতিশোধ যেভাবে নিতে চেয়েছি, ওভাবে হয়নি, কিন্তু আমার চিন্তার চাইতেও জটিল প্রতিশোধের ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এরকম সুযোগ সচরাচর পাওয়া যায় না। ছেরির ঘরে ছেরি, বাপ-মার হাতে ছয় কিস্তিতে আমারে মাইর খাওয়াইছিলি, ভুলি নাই আমি। কয়দিন পরে সব বলে দেবো, তার আগে একটু প্যাঁচ খাইয়ে নিই…

আমি বললাম, হতেই পারে। সাপকে পর্যন্ত বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু পুরুষ মানুষের বিশ্বাস নাই। আমি বলি কী, শোনো…

১৫১১ পঠিত ... ১৫:৩০, এপ্রিল ০৯, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top