আড়াল

২৮০ পঠিত ... ১৫:৪২, মে ১৪, ২০২২

Aral (1)

এখনও বৃষ্টি হলে কাঁথার কথা মনে পড়ে। কাঁথার নিচে স্ত্রীও থাকে। ইশ! কীসব ভাবছি ইদানীং। নিজেকেই নিজে শাসন করে হিমেল।

শহরের বিশিষ্ট তরুণ আইনজীবী হিমেল খান তার চেম্বারে বসে বাইরে তাকিয়ে আছেন। ছোটবেলায় হিমেল বৃষ্টির শব্দ শোনামাত্র কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়তো।

টিনের চালে বৃষ্টির টিপটিপ শব্দ আর মৃদু ঠাণ্ডায় কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে থাকা। আহা! সে এক শৈশব ছিল। স্ত্রী তাকে নাম দিয়েছে 'দ্য হাবাগোবা হিমেল'। রোমান্টিকতার ছিটেফোঁটা নাকি হিমেলের মাঝে নাই। এইতো সেদিন বউকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে গেল। হিমেল শিশুদের মতো বৃষ্টিতে ভিজছে। বৃষ্টির ফোঁটা হাতে নিয়ে লাফালাফি করছে। পাশে যে বউ আছে সে খবর নাই।

হিমেলকে কে বোঝাবে, বউয়ের হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজার পোজ দিয়ে ছবি না তুললে বৃষ্টিতে ভেজার সার্থকতা আর থাকল কই। ফেসবুক আর ইনস্টাতে দিতে হবে। 'হ্যাপি কাপল' লিখে কত মানুষ কমেন্ট করবে। না। এসবে হিমেলের কোনো আগ্রহ নাই।

হাত ধরে ভিজবে, বৃষ্টির গান শোনাবে, কিন্তু শর্ত একটাই, ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া যাবে না। ধুচ্ছাই। আজ ভিজলাম না এই ঘণ্টার বৃষ্টিতে। মাথা গরম করে নেমে যায় বিপাশা।

আজ তেমন ক্লায়েন্ট নাই। হিমেল ভাবল, একটু ফেসবুকে ঢোকা যাক। বিপাশা এক দম্পতির কথা বলেছিল। সুখী দম্পতি। খুবই সুখী।

বিপাশা-হিমেল দম্পতি নাকি তাদের ধারেকাছে নাই। কী যেন নাম? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। সুমী আক্তার। আরে বাপ। হিমেলের চোখ ছানাবড়া। এ দেখি সত্যিই ভয়ানক সুখী দম্পতি। পুরো প্রোফাইল ঝলমলে। সকালের পোস্টটা ভালো করে দেখে। ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক সুমীর স্বামী। হাতে তুলে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। এসব ছবি দেখে বিপাশার মাথা খারাপ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

আলো ঝলমলে ছবি, রোমান্টিকতা আর কৃতজ্ঞতার পোস্টে ভরপুর সুমি-সোহেল দম্পতির ফেসবুক ওয়াল। কী নাই তাদের ওয়ালে। অফিসে যাওয়ার সময় সোহেল সুমির কপালে চুমু খাচ্ছে, সে ছবি। কত সুন্দর আর মায়াময় ছবি। সুমি ক্যাপশন লিখেছে: সকাল শুরু হোক এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি আর ভালোবাসার মানুষের একটি চুম্বনে। শুভ সকাল!

কয়েকটা কমেন্ট পড়ে হিমেল। বেশিরভাগ কমেন্টে দম্পতির প্রতি শুভ কামনা। কিছু আবার আফসোসের কমেন্ট। ইশ! আমার যদি এরকম একটা জামাই থাকতো।

কিছু মজাদার কমেন্ট আছে অবশ্য। ‘এসব ছবি দেখলে মনে হয় আজকেই খাটের অর্ধেক কেটে ফেলে দেই। বাপ বুঝুক ছেলের বিয়ের বয়স হইছে!’

এক ভদ্রমহিলার কমেন্টে নিজের ছায়া দেখতে পেয়ে হাসিতে খুন হিমেল। ‘ভাবী, আর আমি ঘুম থেকে ওঠে দেখি জামাইয়ের লুঙ্গী জায়গামত নাই! শুভ সকাল ভাবী!’

আরেকটা ছবিতে নজর দেওয়া যাক। সুমির ভাষায় এটা ‘কোয়ালিটি টাইম পাস।‘ মা-বাবাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে। সোহেলের মা অর্থাৎ সুমির শ্বাশুড়ি সুমিকে খাইয়ে দিচ্ছে। সুমি ক্যাপশন লিখেছে, ‘এক মাকে ছেড়ে অন্য মাকে পেয়েছি। এখন তো দুই মায়ের মাঝে কম্পিটিশন কে বেশি আদর করতে পারে! হা হা!!’

হিমেলও পরিবারসহ বাইরে খেতে যায়। এভাবে পাবলিকের সামনে ফলাও করার কথা তো মাথায় আসেনি। এইটা নিয়ে একটু ভাবতে হবে। ভালোই তো সাড়া পাওয়া যায়। এরকম সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক দেখে অনেক লোক তাকে চিনবে। ফলোয়ার বাড়বে। তার মানে ক্লায়েন্টও বাড়বে।

‘ছুটিতে কক্সবাজার যাচ্ছি।‘ ‘ছুটিতে সিলেট যাচ্ছি।‘ ‘ছুটিতে ওর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।‘ ‘ছুটিতে আমার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।‘ এসব ক্যাপশনের সাথে ঝলমলে ছবি।

ছবিতে কোন কৃত্রিমতা নেই। লাইক-কমেন্টের ছড়াছড়ি। হিমেলের মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে কেন এভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে না? অথচ সোহেল আর সুমির প্রোফাইল দেখ। যেন ভালোবাসার সাজানো বাগান। প্রতিটি পোস্ট ভালোবাসার রেণু।

পোস্টে লাইক দিলে মনে হয় ভালোবাসার সে বাগানের ফুলের গন্ধ পাচ্ছে। স্নিগ্ধ কোমল স্পর্শ। রাত বারোটা মানে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সোহেল একটা ছবি আপলোড করেছিল। সোহেলের বুকে মাথা রেখে গল্প করছে সুমি। আহারে! মানুষের জীবনে এত সুখ কেন?

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল। যাক, আজ একটা ডিভোর্স কেস পাওয়া যাচ্ছে তাহলে। ‘কাম ইন।‘ দুজন চেম্বারে ঢুকছে। মুখ দুটো খুব চেনা চেনা লাগছে হিমেলের। একি! চমকে ওঠে সে। ফেসবুক মিথ্যাও বলে তাহলে!

২৮০ পঠিত ... ১৫:৪২, মে ১৪, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top