উগাণ্ডায় যেভাবে 'বিজনেস অ্যান্ড সোসাইটি' মেইনটেইন করতে হয়

৫৬২ পঠিত ... ০০:৫৭, মে ০৩, ২০২২

uganda

: বন্ধুর জন্য এই ছোট কাজটা করতে পারবি না?

 : এটা ছোট কাজ? আমি বিপদে পড়ব শালা।

: একটা খুনের দায়ে ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করতে পারবি না?

: মহিলা তো খুন করে নাই।

: খুন না করলেও খুনি বানানো সহজ। শোন, কোনো এক শুক্রবার, মানে যেদিন সবাই বাসায় থাকে, অলিগলি মানুষে মানুষে গিজগিজ করে, ওই রকম একটা দিনে মহিলাকে গ্রেপ্তার করবি।

পুরো মহল্লায় হইহই রব পড়ে যাবে। কী হইছে। কী হইছে। শাবনাজ ম্যাডাম খুন করছে।

: পাগল হইলি তুই? গ্রেপ্তার করলেই খুনি হয়ে গেল?

: আচ্ছা, তুই এরকম বোকাচোদাদের মতো কথা বলিস কেন? আমি জানি ওই মহিলা খুন করে নাই। তুই শুধু গ্রেপ্তার করবি। মামলাজট নিয়ে আমার চেয়ে তুই বেশি জানার কথা।

সে খুন করে নাই, এটা প্রমাণ করতে যে সময় লাগবে, সেই সময়ের মধ্যে সে সমাজের কাছে খুনি তকমা পেয়ে যাবে। আমজনতা তো আর ভেতরের খবরের জানে না।

তারা শাবনাজ শয়তানিটাকে খুনি বানিয়ে দিবে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে অন্তত এক বছর তিনি টক অব দ্য মহল্লা থাকবেন।

তার উপর সফল মহিলা। এমনিতেই মহিলারা তাকে দেখতে পারে না। বাঙালির প্রচুর অলস সময়।

এক বছর শাবনাজ ডাইনিটা ছাড়া না পাইলেই হবে। সমাজ এমনিতেই তারে খুনি স্বীকৃতি দিয়ে দিবে। তারপর বের হয়ে আসলেও বলবে, দেশে কোনো বিচার নাই! টাকা-পয়সাওয়ালা মহিলা হইলে খুন করেও ক্ষমতা ইউজ করে ছাড় পাওয়া যায়!

: সবই বুঝছি দোস্ত। কিন্তু আমারও তো সরকারি চাকরি। বুঝসই তো। ঝামেলা হবে।

: তার মানে সাপটারে মারতে এখন লাঠিই ভাঙতে হবে? লাঠি না ভেঙে মারতে পারব না।

: আচ্ছা, ওই মহিলার প্রতি তোর এত ক্ষোভ কেন? কী করছে তোর?

: মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় না দুই একজন সৎ সরকারি কর্মচারী? এই মহিলা হইছে সেই টাইপ। বালগুলা সিস্টেমের সাথে খাপ খাওয়াইতে পারে না। ঝামেলা হয় আমাদের।

: টেবিলের তলে হাত দেয় না?

: আরে না বাল। আমার ১০০ কোটির প্রজেক্টটা তার জন্য আটকায় আছে। সবকিছু ম্যানেজ করলাম। এখন কি একজন মহিলার কাছে হেরে যাব?

 

: ইউ ক্যান্ট ইগ্নোর উইমেন পাওয়ার, ব্রো!

: রাখ তো তোর বালের নীতিকথা। একটা উপায় বল।

: একটা উপায় অবশ্য….

: ওয়েট। তোরে বলতে হবে না। আমিই পাইছি।

: খুনের আসামির বদলে কি এখন তারেই খুন করবি?

: ঠিক খুন না। তবে খুনের চেয়ে বেশি। বেঁচে থাকবে। কিন্তু মৃত!

: এ কেমন উপায় ভাই!

: আচ্ছা, শোন। আমি দুর্নীতিবাজ। বিরাট দুর্নীতিবাজ। কাশি দিতে হবে না। আমি জানি আমি দুর্নীতিবাজ। তুইও জানিস। মানুষের জমি দখল করলাম। সরকারের কত টাকা লোপাট করছি হিসাব নাই। ঋণখেলাপীর তালিকায় প্রথম দশজনের মধ্যে আমি আছি সিউর। এসব ওপেন সিক্রেট। মানুষ জানে। তবু দেখ মানুষ আমাকে বড় বড় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে। আদর-যত্ন-সম্মানের শেষ নাই। বল তো কী করলে আমাকে আর মানুষ সম্মান করবে না।

: সরকার তোর বিচার করলে?

: ধুর হালা! বিচার করলেও মানুষ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। এ দেশের মানুষ বড়ই কিউট। সবকিছুতে দুই ভাগ হয়ে যায়।

তবে একটা বিষয় আছে। আমার বউ আছে। এই মুহুর্তে যদি কোনো মেয়ে দাবি করে তার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। নিয়মিত হোটেলে যাই। তাহলে আমি শেষ। এতদিনে পাবলিকের কাছে হব আমি চরিত্রহীন!

: হা হা! ফাবলিক বড়ই মারাত্মক!

: এই মেথডটাই শাবনাজ হারামজাদিটার ক্ষেত্রে কাজে লাগাব। শোন, খুনির আসামি বানানো লাগবে না।

জাস্ট গ্রেপ্তার করবি। মানুষ নিশ্চয়ই জিজ্ঞেস করবে, কী হইছে? কী হইছে? মানুষের আবার কৌতুহলের শেষ নাই। তখনই ট্রিকস খাটাতে হবে। তোর জন্য সহজ করে দেই। তখন কিছুই বলবি না।

গলি থেকে বের হয়ে আসবি। মহিলাকে গাড়িতে তুলে পাশের দোকানে চা খাইতে যাবি। চাওয়ালা ফোঁকলা দাঁত বের করে জিজ্ঞেস করবে, ‘কী হইছে স্যার?’

এখানেই বোমটা মারবি। যে বোমা পারমাণবিক বোমার চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গুজব! তুই বলবি ‘মহিলার বদভ্যাস আছে। মাঝেমধ্যে অন্য পুরুষের সাথে হোটেলে যায়। ব্যস। কোনো অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট থাকল না। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে এই খবর ছড়াই যাবে। প্রথমে মহল্লায়। তারপর পাড়ায়। তারপর জাকারবার্গ ব্রোর ফেসবুকের মাধ্যমে পুরো দেশ। মহিলা জেল থেকে বের হয়ে আসল জেলে ঢুকবে। বড়ই কিউট সমাজ আমাদের! হা হা!!’

: শালা মাল রে তুই একটা!

: আচ্ছা। শোন। সরকারি বড় পোস্টে আছে। হ্যান্ডেল করতে পারবি তো?

: সরকারি বড় পোস্টে আছে। কিন্তু মহিলা তো। ব্যাপার না!

: মহিলা দেখতে খুব সুন্দর এবং সফল। এই দুইটাই আমাদের স্ট্রং পয়েন্ট। সমাজের কাছে খারাপ প্রমাণ কর‍তে কোনো কষ্টই করতে হবে না! হা হা!!

পরেরদিন স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী কাজ শুরু হলো। চা-ওয়ালার কাছ থেকে খবরটা ছড়িয়ে পড়ল। মহল্লার মানুষ অনেকদিন পর একটা টপিক পেল। যেন অক্সিজেন।

শুরু হলো আলোচনা। মহিলা মানুষ এত বড় পোস্টে। বসের সাথে না শুইলে কী এরকম হয়।

আরেকজনের বাসা থেকে শোনা যায়, ‘চাকরি করতে পারবা না বলছি তো পারবা না। রাখো তোমার বুয়েটের সার্টিফিকেট। চাকরি করতে চাও? নাকি এরকম বসের সাথে শুয়ে আমার চাইতেও বড় পজিশন হোল্ড করতে চাও? কোনো চাকরি করতে হবে না।‘

ম্যাসেঞ্জারে 'জলদি ন্যুডস দাও' টেক্সট দিয়ে এক তরুণ পোস্ট দিলো, 'নারী জাতিরে বাইরে বের হতে দিছো। এখন ঠ্যালা সামলাও। কথায় কথায় যারা নারীবাদ নারীবাদ বলে চিল্লান, তারা আজ কই। এই মহিলারে কুত্তা দিয়ে **নো দরকার। এতই যেহেতু চাহিদা।‘

শাহনাজ আক্তারের স্বামীকে বন্ধু-বান্ধব ঠাট্টা করে বলে, ‘আরে শালা, তোর সমস্যা আছে। আমারে কইতি। ভালো ডাক্তার এপয়েন্টমেন্ট করাই দিতাম। এইজন্য বউরে বসের কাছে পাঠাবি?’

শাবনাজ আক্তারের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বন্ধু-বান্ধব আড়ালে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। ওর মা নাকি বসের কাছে মজা নিতে যায়। হোটেলেও যায়। বস তো আর একজন না। কোনো ভিডিও নাই রে?

দুদিন পর শাবনাজ আক্তার থানা থেকে ছাড়া পেল। মহল্লার মুখে ঢুকে শুনতে পেল, ‘দেখ, দেখ, এত অকাম কইরা ছাড়া পাইলো। শালি বোধহয় এবার কোনো পুলিশ অফিসাররে খাওয়াইছে। শালা সুন্দর মহিলার কত সুবিধা রে!’

৫৬২ পঠিত ... ০০:৫৭, মে ০৩, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top