যখন ডাক্তার চিনতে আর ভুল হয় না

৫৩৪ পঠিত ... ১৫:১৭, এপ্রিল ২২, ২০২১

Jekhane-Doctor-Chinte

আজ থেকে ১০০০ বছর পরের কথা। ৩০২১ সাল।

বাংলাদেশে তখন প্রায় সারা বছর শীত থাকে। পাখি ডাকে না, শীতের পর বসন্ত আসে না, মানুষ স্যান্ডো গেঞ্জি কিংবা পাতলা জামা কাপড় চেনে না। সারা বছর তুষারপাত হয় এখানে।

প্রত্যেকটি গ্রোসারি দোকানে তখন ফ্রিজের জায়গায় ফায়ারপ্লেস। 'আইসক্রিম' নামের জিনিসটার কথা মানুষ তখন হাজার বছর আগের ইতিহাস বইতে পড়ে। মাঝেমধ্যে ক্লাসিক চলচ্চিত্রে হয়তো বারকয়েক দেখা যায়, এই যা।

তখন রাস্তাঘাটে গাড়ি চলে না। সবাই চলাচল করে আকাশপথে। ছোটো ছোটো এয়ারক্রাফটে।

সেখানে ট্রাফিক পুলিশের জন্য প্লাটফর্ম আছে আলাদা।

ফরচুনেটলি, এখনকার ওভারব্রিজগুলো তখনো বিলীন হয়ে যায়নি। এগুলোকে ওরা বলে 'আন্ডারব্রিজ'। আকাশপথে ভীড় বেশি হলে ট্রাফিক পুলিশরা সাজেস্ট করে নিচু স্থলপথের এই ব্রিজগুলো ব্যবহার করতে।

এরকম শীতের দিনে পান্থপথ এয়ার সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা চিন্তিত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট হঠাৎ খবর পেলো তাঁর স্ত্রী বাসাতেই সন্তান প্রসব করেছে। কিন্তু বাচ্চার সিভিয়ার রকম নিউমোনিয়া, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। পুলিশ তড়িঘড়ি করে বাসা থেকে বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।
.
হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে কোনো ডাক্তার নেই। কিছুক্ষণ পর এক নারী ডাক্তারকে দেখা গেলো ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছেন।

'ডাক্তার, আমার বাচ্চাকে বাঁচান'
'আমি ডাক্তার আপনি কি নিশ্চিত?'
'হ্যাঁ নিশ্চিত, এখন এতো সময় নেই কথা বলার, প্লিজ আমার মেয়েটাকে...'
'ঘাবড়াবেন না। কিভাবে আপনি নিশ্চিত তা আমার জানা জরুরি।'
'আপনি এপ্রন পরা। এপ্রনের নেমপ্লেটে "ডাক্তার সিতারা" লেখা। নিশ্চয়ই আপনি ডাক্তার!'
'এমনও তো হতে পারে আমি ডাক্তার নই। আমার বোন কিংবা ননদ ডাক্তার। আমি টিকটক করতে এসেছি এখানে। হতে পারে না?'
'প্লিজ সময় নষ্ট করবেন না। আর কোনো ডাক্তার নেই এই মুহূর্তে। আশেপাশে আর হাসপাতালও নেই!'
'আমি আপনার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি যে ডাক্তার, এই ব্যাপারটারই তো নিশ্চয়তা নেই। আমি তো নার্সও হতে পারি ডাক্তারের এপ্রোন পরে, তাই না?'

পুলিশ ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।

এপ্রোন পরিহিতা বলতে থাকলো, 'দেখুন,এই হাসপাতালে আমার জয়েনিং আগামীকাল। আজ আমি কর্মস্থল দেখতে এসেছি। সুতরাং আগের কোনো ডিউটি রোস্টারেও আমার নাম নেই। আপনি বরং বসে কিছুক্ষণ আরাম করুন, আমি আইডি কার্ডটা নিয়ে আসি...বাসা বেশি দূরে নয়, মিরপুরেই...'

কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার সিতারা।

পেছনে পুলিশ চিৎকার করছে, 'আমি মুক্তিযোদ্ধার বংশ। আজ থেকে হাজার বছর আগে আমার বংশে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলো...দরকার হলে ফসিল খুঁজে দেখেন...You just don't know how to respect a freedom-fighter...'

ডাক্তার সিতারা হাসতে হাসতে বললেন, 'ওরে বোকা, আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সিতারা বেগম। হাজার বছর ধরে বেঁচে আছি বায়োলজিক্যাল ইম্মোর্টালিটি লাভ করে। আমাকে মুক্তিযুদ্ধ শিখাস?'

ততক্ষণে পুলিশের কোলের বাচ্চাটা বোধহয় নড়াচড়া করছে না। একটু কি ঝিম মেরে গেছে, নাকি মরে গেছে?

এসব ভাবতে ভাবতে পুলিশ ডা. সিতারার গলা শুনতে পাচ্ছে, 'এই প্লেন, মিরপুর যাবা? আবার রিটার্ন করবো, শুধু আইডি কার্ডটা নিয়ে আসবো বাসা থেকে...কতো?'

৫৩৪ পঠিত ... ১৫:১৭, এপ্রিল ২২, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top