ব্যালন ডি'অর জয়ী 'প্যারাসাইট' সিনেমার একটি রিভিউ

২৫৫ পঠিত ... ১৬:৫৪, মার্চ ২৫, ২০২৪

25 (3)

২০২০ সালে বেস্ট পিকচার কোটায় পুরস্কার পায় বং জুন হো'র সিনেমা প্যারাসাইট। সিনেমার পরিচালক বং জুন হো পেশায় একজন ফুল টাইম ফুটবলার। তিনি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়, ফুটবল সম্রাট পেলের বংশধর বলেও জানা গেছে কয়েকটি বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে। ফুটবল খেলার পাশাপাশি সিনেমার দিকেও তার সমান ঝোঁক। মূলত এক ক্লাবের ম্যাচ খেলার সময় মাঠের ভেতর ঘুরতে থাকা একটি প্যারাসাইটকে দেখেই এই সিনেমা বানানোর কথা মাথায় আসে। ম্যাচ শেষেই বাসায় গিয়ে ঝট করে সিনেমাটি বানান তিনি।

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে 'প্যারাসাইট' সিনেমার মূল উপজীব্য  একটি প্যারাসাইটকে (বাংলা-পরজীবী) ঘিরেই। প্রি এবং পোস্ট অ্যাপোক্যালেপ্টিক ওয়ার্ল্ড সারভাইভার এই প্যারাসাইট তার পুষ্টির জন্য হোস্টের উপর নির্ভরশীল হলেও কিছু ক্ষেত্রে সে বাকি প্যারাসাইটের চেয়ে আলাদা। দিনের বেলা সে তার পা দিয়ে মাটিতে লিখতে এবং রাতের বেলা কথা বলতে পারে। এই অদ্ভুত কম্যুনিকেটিভ স্টাইলের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে এক অজানা ভীতি ছড়িয়ে পড়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এক অজপাড়াগাঁয়ে।

ধীরে ধীরে প্যারাসাইটটির সাথে একটি ছেলের বন্ধুত্ব হয়। সে হোস্ট হয়ে প্যারাসাইটকে তার নাভি থেকে রক্ত খেতে দেয় নিয়মিত। ছেলেটির পরিবার তাকে অনেক বাঁধা দিলেও এই বন্ধুত্বের কোনো কমতি হয় না। গ্রামের সবাই ছেলেটিকেও অন্যচোখে দেখা শুরু করে। তাকে এড়িয়ে চলে। এই অবস্থায় বেজে উঠে করুণ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক। এই দৃশ্য দেখে আপনার চোখে পানি আসতে বাধ্য!

.....

সেদিন ছিলো সোমবার। ঝলমলে রোদ বাইরে।

প্যারাসাইটটি মাটিতে লিখে ছেলেটিকে জানায় যে অনেক বড় ঝড় আসছে, পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সবাই প্রস্তুত থাকলে এই ড্যামেজ কমানো সম্ভব, অন্তত প্রাণে বেঁচে থাকা যাবে। ছেলেটি চিন্তায় পড়ে যায়। সে তার আশেপাশের মানুষকে জানায়। বাইরে আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে সবাই হাসাহাসি করে, কেউ কেউ তাকে 'পাগল' ও বলে। সেদিন ঝড়ের টিকিটিও দেখা যায় না। নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে যায় সেই গ্রামের মানুষ।

ঝড় আসে দু'দিন পর, মাঝরাতে। এমন ঝড় আর কোনোদিন দেখেনি পৃথিবীর মানুষ। সেই ঝড়ে সবকিছু ওলট পালট হয়ে যায়। শুধু বেঁচে থাকে সেই ছেলেটি আর তার নাভিতে অবস্থানরত প্যারাসাইট। টানা তিন দিন তিন রাত ঝড়ের পর পৃথিবী তখন অন্ধকার। এ পর্যায়ে স্ক্রিনে নেমে আসে সুনশান নীরবতা।

ছেলেটির যখন জ্ঞান ফিরে সে টের পায় তার শরীর আবদ্ধ হয়ে গেছে ছোট্ট একটি খোলসের ভেতর। মানুষের হাত পায়ের বদলে তার গজিয়েছে ছোট, চিকন হাত পা। পিঠে পাখার মতো কিছু একটাও টের পায় সে। অবাক হয়ে সে যখন নিজেকে দেখছে তখনই খেয়াল হয় কাছেই বসে মুচকি হাসছে পূর্ব পরিচিত প্যারাসাইটটি। তারা ফ্রেশ হয়ে গ্রাম ভ্রমণে বের হয়ে দেখে মাটি থেকে গুটি গুটি পায়ে বের হচ্ছে অসংখ্য প্যারাসাইট। তাদেরকে দেখেই শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ছে বাকিরা। কেউ কেউ আবার পাখা গুটিয়ে স্যালুটও দিচ্ছে। তারা মুচকি আসে। তারা বুঝতে পৃথিবী এখন আর মানুষের নেই।

অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সেই ছেলেটির নাভি থেকে নিউট্রিশন পাওয়া প্যারাসাইটটি ছিলো মেয়ে। পোস্ট আ্যাপোক্যালেপ্টিক ওয়ার্ল্ডে এসে তাদের প্রেম হয়৷ এ পর্যায়ে এসে স্ক্রিনে বেজে ওঠে চমৎকার একটি রোমান্টিক গান। গানের তালে তালে প্যারাসাইটিক ডান্সও লক্ষণীয়। শুধু তাই নয়, বং জুন হো এখানে প্যারাসাইটিক সেক্স সিনগুলোও এক্সপ্লিসিটভাবে দেখিয়ে তার শৈল্পিক মনের পরিচয় দিয়েছেন।

সিনেমাটি শেষ হয় নাটকীয় এক দৃশ্যের অবতারণার মাধ্যমে যার সাথে গেম অব থ্রোনসের সিজন ৬, এপিসোড ৮-এর ব্যাপক সাদৃশ্য লক্ষণীয়। এ ব্যাপারটি অবশ্য পরিচালক বং জুন হো ব্যালন ডি'অর নেবার সময় স্বীকারও করেছেন এবং ধন্যবাদ জানিয়েছেন গেম অব থ্রোনসের পরিচালককেও। যুদ্ধ জয়ের পর ডেনেরিস টার্গারিয়ান যখন সবাইকে ডাকে এবং স্পিচ দেয়, প্যারাসাইট সিনেমায়ও অবতারণা হয় এমনই এক মুহুর্তের। দেখা যায় কোটি কোটি প্যারাসাইট একত্রীভূত হয়েছে একটি  ময়দানে।পিন পতন নীরবতার মাধ্যমে মঞ্চে উঠেছে সেই নারী প্যারাসাইটটি। রাণী হিসেবে মেনে নিয়ে সবাই সমতালে পাখা নাড়িয়ে তাকে বরণ করে নিচ্ছে কোটি কোটি প্যারাসাইট। দুই পা একত্র করে তারা তালি দেবার চেষ্টাও করছে৷ সেই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে লুদভিকো ইনাদীর ইউটোপিয়ান সুর। কি অপূর্ব এক দৃশ্য!

'প্যারাসাইট' সিনেমাটি সিনেমার জগতে এক বৈপ্লবিক ক্যামোফ্লাজের মতো। কেউ একে আখ্যায়িত করছেন সাইভাল সিনেমা হিসেবে, কোনো কোনো সিনেমাপ্রেমী বলছেন শ্রেণীবৈষম্যের ঝান্ডা আবার কেউবা বলছেন নেহাৎই ফেমিনিস্ট প্রোপাগান্ডা!

২৫৫ পঠিত ... ১৬:৫৪, মার্চ ২৫, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top