স্মৃতিগদ্য: বাঙ্গালির হাডুডু কালচার  

১৫১ পঠিত ... ১৭:৪৭, মে ০২, ২০২৩

স্মৃতিগদ্য

গতকাল বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে কাবাডি খেলার দৃশ্য দেখে আমার আর হাসি পেলো না। এরা আমার ন্যাশনাল কাজিন; এদের মুখাবয়বে যেন আমার আত্মীয় স্বজনের মুখখানা দেখি আমি। নিজেকে নিয়ে আর কতো হাসাহাসি করা যায়?

অনেক বছর আগে অস্ট্রিয়া ঘুরতে গিয়ে ঠিক এরকম কাবাডির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।

ভিয়েনার সিটি সেন্টারে এক বিদেশিনী সাংবাদিকের সঙ্গে কফি খেতে খেতে ওর আগ্রহে বাংলাদেশ সম্পর্কে গল্প করছিলাম। আমাদের সঙ্গীত, সংস্কৃতি, সরল নদীমানুষের গল্প শুনে সে মুগ্ধ নীল চোখে তাকিয়ে ছিলো। আমার গ্রামের বাড়ির গল্প শুনে সে তার গ্রামের বাড়ি দেখতে নিয়ে যাবার প্রস্তাব দিলো।

হঠাতই দেখি রাস্তায় দুই দল একে অপরের দিকে তেড়ে আসছে। ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে গেলো বিদেশিনী। জন্মের পর এমন ঘটনা দেখেনি। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনো এমন হাডুডু খেলা ইউরোপে কেউই দেখেনি।

কফিশপের বাইরে বের হতেই ভিয়েনা পুলিশ আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘বলতে পারেন এই বাংলাদেশিরা ঠিক কী নিয়ে মারামারি করছে?’

আমার কাছে এ ছিলো নিত্ত নৈমিত্তিক ঘটনা। বাসার সামনে কলেজ মাঠে হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখেছি। আহত সৈনিকদের তুলে এনে বাসার বারান্দায় ওদের মাথায় পানি ঢালতেন আমার বাবা। আফটার অল এই বীরেরা সবাই উনার ছাত্র ছিলো।

রাজশাহী কলেজে আমরা বড্ড সংস্কৃতি করতাম বলে মাঝে মাঝে ছাত্রশিবির তেড়ে আসতো হারেরেরে করে। জাসদের কাইয়ুম ভাই-বিএনপির মার্শাল মামার কোলে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছি আমরা।

এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এসে মল চত্বরে বন্দুকবাজি দেখলাম ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের। নেহাত সহৃদয় আর্মস ক্যাডাররা বন্ধু ছিলো বলে; অনেকবার ক্রসফায়ারের মাঝখানে পড়ে গেলেও যুদ্ধবিরতি দিয়ে প্রাণে বাঁচাতো ওরা।

সেই থেকে আমি জানি আর্মস ক্যাডারও বন্ধু হয়; তারও একটা সুন্দর মন থাকে; বিতর্কে জিতলে সে মাথায় তুলে দোল দেয়।

এইসব সুন্দর মনের তরুণের জীবনের অপচয় দেখে; শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার প্রতি অনেক অভিমান হয়। সেই থেকে যেন হিরণদাহ-বিজনব্যথা-আগুন হয়ে উনাদের ইতস্তত সমালোচনা করে বেড়াই।

ঘরের কাছের ভারত-পাকিস্তানের প্রবাসীরা পশ্চিমের দেশগুলোতে ওখানকার রাজনীতি করে। প্রধানমন্ত্রী-মেয়র হয়। অথচ আমাদের প্রবাসীরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাখা কমিটি খুলে হাডুডু খেলে; কেউ কেউ দেশে ফিরে মন্ত্রী-এমপি-মেয়র হয়। আমাদের স্বপ্ন যেন এই ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট দেশটার বাইরে বিস্তৃত হতে পারে না কিছুতেই। আমরা আন্তর্জাতিক হতে পারিনা। রয়ে যাই আঞ্চলিক।

অনাবাসের বাংলাদেশীরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে; তাদের সেই কাঁচা টাকা অপচয় হয় এই আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি হাডুডু খেলায়। তাদের পয়সায় ঢাকার নেতারা পশ্চিমে গিয়ে ফূর্তি করে; বিদেশ সফরে সোফার মধ্যে নধর শরীর নিয়ে বসে থাকে পার্টির কাছিম ভাই; আর পেছনে কোন মতে ছবিতে জায়গা করে অনাবাসী সরল মানুষেরা।

শেখ হাসিনা সংস্কৃতিমনা মানুষ; খালেদা জিয়া স্মার্ট মানুষ; অথচ তাদের অনুসারীরা বিদেশের পথে পথে ‘ঝাঁপাইয়া পড়োরে বন্ধু ধইরা থাইকো কইষা’ বলে কাবাডি খেললে উনাদের কেন কিছু এসে যায় না; তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। নিজের ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি রাজবংশের বাতি হয়ে অভিজাত প্রাসাদের সিং হাসনে বসে থাকবে; আর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সন্তানেরা আওয়ামী লীগ-বিএনপি করে মাথা ফাটাফাটি-খুনো খুনি করে বেড়াবে; এই সামন্ত-মানসকে এই হৃদয়হীন দেখেও না দেখার ভানকে ইতিহাস কখনোই ক্ষমা করবে না।

১৫১ পঠিত ... ১৭:৪৭, মে ০২, ২০২৩

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top