শেখ হাসিনা সম্পর্কে আপনি যা নাও জানতে পারেন

৪৪৭৮ পঠিত ... ২০:১৩, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

আজ সেপ্টেম্বর ২৮ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। চলুন জেনে আসি এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনের কিছু অজানা তথ্য।

১# স্বাধীনতার পর শেখ পরিবারের প্রথম যুদ্ধ ছিলো অর্থ সঙ্কটের। তার ওপর কেউ আশ্রয় দিতে ভয় পায়, কেউ রাখতেও চায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, 'প্রধানমন্ত্রী হয়েও সন্তানের পড়ার খরচ দিতে পারিনি। আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার দ্বিধা হলো- কাকে বলবো টাকা দিতে বা কীভাবে আমি টাকা পাঠাবো বুঝতে পারিনি। কার কাছে দেনা করবো। আমার কারণে তাঁর পড়া হলো না। দুটো সেমিস্টার করে তাকে বিদায় নিতে হলো। তারপর সে চাকুরিতে ঢুকলো।'

নিজেদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্য কষ্ট করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করেছে, চাকুরি করেছে। পড়ার মধ্যে গ্যাপ দিয়ে চাকরি করে আবারও লেখাপড়া করেছে। একবার গ্রাজুয়েশন হয়েছে, কিছুদিন চাকরি করেছে, স্টুডেন্ট লোন নিয়েছে, সেটা শোধ দিয়েছে।
আবারও ভর্তি হয়েছে, তারপর মাস্টার্স ডিগ্রি করেছে। আবার সেই লোন শোধ দিয়েছে। এইভাবে পড়েছে।'

তাঁর আব্বার এক বন্ধু ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন৷ তিনি না থাকলে হয়তো হাসিনা একা তাঁদের পড়াতে পারতেন না। শেখ হাসিনার বাচ্চারা মিশনারি স্কুলেও পড়েছে। সেখানে সাতদিনের মধ্যে সবসময় সবজি বা ডালভাত খেতে হতো, একটি দিন শুধু মাংস খেতে পারতো। এভাবে কষ্ট করে করে প্রধানমন্ত্রীর সন্তানেরা বড় হয়েছে।


২# ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো বিয়ের জন্য কেমন মেয়ে তার পছন্দ, তখন তরুণ বিজ্ঞানীর উত্তর ছিল, 'মেয়েকে আনস্মার্ট কিংবা কোটিপতির কন্যা হওয়া চলবে না।'
সেই রকম এক মেয়েকে পাত্র যখন দেখলেন ওই মুহূর্তে কলেজ ফেরত পাত্রী এ ঘটনার কিছুই অবগত নয়।


৩# বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন রন্ধনে দ্রৌপদী। লোকজন খাওয়ানোয় বঙ্গবন্ধু দম্পতির আনন্দ। সে বাড়িতে নিত্যদিন কত যে মানুষ পাত পেড়েছে তার হিসেবে নেই। দেশ স্বাধীনের পর ওরিয়ানা ফ্যালাসি নামে সে সময়কার মহিলা সাংবাদিক ৩২ নম্বরে গৃহীত নিজ সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রসঙ্গে বলেছেন মুজিবের স্ত্রী তার কাছে ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলেন রন্ধনশালা থেকে বেরিয়ে আঁচলে রান্নার হলুদের দাগ মুছতে মুছতে!

মেয়ের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম যায়নি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একবার নিউইয়র্কের অভিজাত হোটেলে শেখ হাসিনার রান্না করার খবর ছাপা হয়েছিল বাংলা সাপ্তাহিকীগুলোতে।

নিউইয়র্কের যে অভিজাত হোটেলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা উঠেছেন সেখানে তিনি রান্না করার উদ্যোগ নিচ্ছেন নিজ হাতে। সেই উপলক্ষে সবজি, চাল, তেল, মসলা, লবণ, মাংস ইত্যাদিসহ প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ কেনা হয়েছে। ছুরি দিয়ে নিজ হাতে পেঁয়াজ কেটে চোখের জলে ভাসতে ভাসতে আর চামচ-খুন্তি হাতে প্রধানমন্ত্রীর রান্নার বিস্তারিত খবর নিয়ে কমিউনিটিজুড়ে শুরু হলো হৈ হৈ রৈ রৈ উত্তেজনা। অতঃপর সে রান্না আরাম করে খেয়েছিলেন সব সফরসঙ্গী এবং প্রবাসের হেনো-তেনোরা পর্যন্ত!

৪# কোন এক সিনিয়র একজন নেতাকে নিয়ে এলাকায় সমস্যা হচ্ছে। লোকজন এলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ নিয়ে। যারা এলো, তাঁদের একজনকে প্রধানমন্ত্রী বললেন, সমস্যা তো সে নয়, সমস্যা তুমি। অমুক দিন তুমি মিটিং করে তাঁর বিরুদ্ধে কেন কথা বললে।
প্রতিদিন এরকম ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিশক্তি, চিন্তা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই গুণটি ছিল বঙ্গবন্ধুর। জাতির পিতা কাউকে একবার দেখলে, বহুবছর পরও তাঁকে নাম ধরে ডাকতে পারতেন। অনেক সময় ভরা মজলিশে বঙ্গবন্ধু কারো নাম ধরে ডেকে, তাঁকেই চমক দিতেন। শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার সূত্রে বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো গুণই পেয়েছেন, কিন্তু একটা গুণ অনেক বেশি পেয়েছেন, তা হলো স্মৃতিশক্তি।

৫# সমরেশ মজুমদার 'গর্ভধারিণী' উপন্যাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সমরেশ মজুমদার বলেন, 'শেখ হাসিনার সাথে যখন আমার পরিচয় তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। তো একদিন তিনি উনার বাসায় দাওয়াত দেন।'

চা খাচ্ছি এমন সময় শেখ হাসিনা বলে উঠলেন, 'আপনি তো একজন সরকারি কর্মকর্তার মেয়েকে নষ্ট করেছেন।'

আমি আশ্চর্য হলাম। আবারো জিজ্ঞেস করলাম, 'আমি নষ্ট করেছি!'

তিনি বললেন- 'হ্যাঁ। আপনার গর্ভধারিণী বই পড়ে ওই সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে। কারণ সে জয়িতা হতে চায়। মেয়েটিকে এখন তার তার বাবা মা বাসায় বন্দি করে রেখেছে!'


৬# রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান প্রাথমিকভাবে তাঁদের বিয়ের ঘটকালি করেন। বিয়ের পুরো প্রক্রিয়াতেই তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন।
লন্ডন থেকে মাত্র পিএইচডি শেষ করে ড. ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং আণবিক শক্তি কেন্দ্রে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে যোগ দেন।
এমন সময় মতিউর রহমান নিজের গুলশানের বাসায় তাঁকে ডেকে নিয়ে জানতে চান, শীঘ্রই বিয়ে করার পরিকল্পনা আছে কিনা তাঁর। ওয়াজেদ মিয়া জানান, তিন মাসের মধ্যে বিয়ে করতে চান তিনি।
এর ১০ দিন পর মতিউর রহমান ড. ওয়াজেদ মিয়াকে আবার বাসায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি মুজিব ভাইয়ের মেয়ে হাসিনাকে দেখেছো? আমার মনে হয়, ওর সঙ্গে তোমাকে খুব মানাবে।’
প্রথমে এই প্রস্তাবে অস্বস্তিতে পড়ে যান ওয়াজেদ মিয়া।
কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি ভাই বলে ডাকতেন। তবে মতিউর রহমান তাঁকে বলেন, 'সেটা রাজনৈতিক সম্পর্ক।'

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, অনেকেই জানেন না যে ছাত্রাবস্থা থেকেই ওয়াজেদ মিয়া রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং সংগঠক হিসেবেও ভালো ছিলেন।

মতিউর রহমানের প্রস্তাবের দুদিন পর ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় মতিউর রহমানের বাসায় আসেন শেখ হাসিনার মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ শহীদ ও একজন মুরব্বি। সেখানেই ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিচয় হয়।
বেগম মুজিব ওয়াজেদ মিয়াকে বলেন, জেলগেট থেকে এ বিয়েতে সম্মতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেদিনই বিয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দেন ওয়াজেদ মিয়া। এরপর হাসিনার হাতে আংটি পরিয়ে দেন তিনি। বায়তুল মোকাররম থেকে কেনা ওই আংটিটি শেখ হাসিনার আঙুলের মাপের চেয়ে বেশ বড় ছিল।
আজকাল সবাই বিয়ে ঠিকঠাক হলেই শপিং করতে বিদেশ ছোটেন কিংবা দেশ থেকেই লাখ লাখ টাকার শপিং করেন।
কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার বিয়েতে জমকালো কোনো শপিং হয়নি। বিয়ের দিন ড. ওয়াজেদ মিয়া স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে একটি লাল-গোলাপি শাড়ি, মাঝারি আকারের ক্রিম রঙের নতুন ডিজাইনের একটি স্যুটকেস এবং এক জোড়া স্যান্ডেল কিনেছিলেন।

ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে কোনো টাকা না থাকায় সব জিনিসপত্রের দাম দেন মতিউর রহমানের স্ত্রী। সেদিন রাত সাড়ে ৮টায় মতিউর রহমান দম্পতি ওয়াজেদ মিয়াকে নিয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর বাসায় যান।
রাতটি ছিল শবে বরাতের রাত। সে রাতেই বিয়ে পড়ানো ও কাবিননামা স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ড. ওয়াজেদ মিয়া স্যুট পরে বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়েছিলেন। বিয়ের সিদ্ধান্তের পর তিনি একটি টুপি চেয়ে নেন। এরপর ২৫ হাজার টাকা দেনমোহরে শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ মিয়ার মধ্যে বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়।
জাতির পিতা শেখ মুজিব কারাগারে থাকায় বড় মেয়ের বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি তিনি। বিয়ের পরদিন বিকেলে জেলগেটের কাছে একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ওয়াজেদ মিয়ার দেখা হয়।

বঙ্গবন্ধু তাঁকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন এবং তাঁর হাতে একটি রোলেক্স ঘড়ি পরিয়ে দেন।


৭# শেখ মুজিব বলেছিলেন হাসুর ছেলে হলে 'জয়' আর মেয়ে হলে 'মুক্তি' নাম রাখতে। প্রথম পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হবার পর বেগম মুজিব বললেন, 'ও আমাদের সজীব করেছে।'
বাবার নাম ওয়াজেদ, সব মিলিয়ে ছেলের নাম রাখা হলো সজীব ওয়াজেদ জয়।

৮# এরশাদের পদত্যাগের দাবি-মিছিলে নূর হোসেনকে প্রথম দেখেন শেখ হাসিনা। বুকে পিঠে লেখা 'স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক'।
তিনি নুর হোসেনকে বলেছিলেন, "জামাটা গায়ে দাও, একি সর্বনাশ করেছো, ওরা যে তোমাকে গুলি করে মারবে!" জবাবে নুর হোসেন হাসিনার দিকে মাথাটা এগিয়ে দিয়ে বলে, 'জান দিয়া দিমু আপা, শুধু মাথায় হাত বুলাইয়া দ্যান।'
শেখ হাসিনার মধ্যে তখন প্রকাশ পায় মমতাময়ী রূপ। তিনি উত্তর দেন- 'না, জীবন দেবে কেনো, আমি আর শহীদ চাইনা, আমি গাজী চাই।'

পুলিশের গুলিতে সেদিন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল নূর হোসেন।

৯# শেখ হাসিনা জন্মদিন খুব সাধারণভাবেই কাটান। এতো হৈ হুল্লোড়, আড়ম্বর ছেড়ে তিনি ফুল এবং শুভেচ্ছাবার্তা গ্রহণ করেন। একবার তাঁদের পরিবারেই পরিচিত একজন জন্মদিনে গিয়েছেন হাসিনার সুধাসদনে। ওয়াজেদ মিয়া মারা যাওয়ার ২-৩ বছর আগের ঘটনা। তখনও শেখ হাসিনা নিচে নামেননি। ওয়াজেদ মিয়া নেমেছেন।
ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জন্মদিনের পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হলো। তিনি হাসিমুখে বললেন, 'ঘুম থেকে উঠেই হাসুকে একটা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেলেছি।'

১০# 'Hasina: A daughters tale' ডকুমেন্টারির পরিচালক পিপলু খানের সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় আলাপে আলাপে প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন "এই জানো, আমি রেহানা একে অন্যের শাড়ি ভুল করে পরে ফেলি!'

১১# স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য শিরোনামের দ্বিতীয় প্রবন্ধে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে নিজেকে এক অদ্ভুত সাযুজ্যের বন্ধনে খুঁজে পেয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশজননীর ভাষ্যমতে, 'জাহানারা ইমাম এক সন্তান হারা মা আর আমি এক মা-বাবা-ভাই হারা। স্বজনহারার ব্যথায় ব্যথিত আমি বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলাম, তিনি সন্তানহারা বেদনায় জর্জরিত।'
জাহানারা ইমামের প্রতি যে শেখ হাসিনার কতখানি শ্রদ্ধা ছিল তার প্রকাশ ঘটেছে ছোট্ট একটি মন্তব্যে।তিনি বলেছিলেন, 'একদিন আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাই একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে দেখাবার জন্য। এই মুক্তিযোদ্ধার মা ছিলেন জাহানারা ইমাম। তাঁকে বাঙালি জাতি সম্মান দিয়েছে শহীদজননী হিসেবে। মুক্তিকামী মানুষ তাঁকে সম্মান দিয়েছে হৃদয়ের গভীর উষ্ণতায়।'

১২# 'The Rape of Bangladesh' বইয়ের লেখক এ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস ২০০০ পাউন্ডে সিঁড়ির ওপর বঙ্গবন্ধুর গুলিবিদ্ধ শরীরের ছবি শেখ হাসিনার কাছে বিক্রি করেন।

৪৪৭৮ পঠিত ... ২০:১৩, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top