এরশাদ-বচন: হু মু এরশাদের ৬টি 'অমর' উক্তি

২৭৫৪ পঠিত ... ১৯:৪৩, জুলাই ১৪, ২০২০

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত চরিত্রের নাম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আলোচনা কখনো জন্ম নেয়, আর না নিলে তিনি নিজেই আলোচনার জন্ম দেন। কেউ বলেন পল্লীবন্ধু, রাজনীতির ভাঁড়, কেউ বলেন বিশ্ববেহায়া। যে যাই বলুন না কেন, বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ যুগে যুগে এরশাদকে নিয়ে একবার হলেও আলোচনা করেছেনই।

অথবা বলা যায়, আলোচনা না করার সুযোগ কেউ কখনো পাননি! কখনও হাস্যকর, কখনও উদ্ভট, কখনও আইরনিপূর্ণ নানান বক্তব্য দিয়ে মিডিয়া, আলোচক ও সমালোচকদের সবসময় মাতিয়েই তো রাখতেন তিনি। একটা সপ্তাহ তাকে নিয়ে কার্টুন না আঁকার অবকাশ দিতেনি না কার্টুনিস্টদের! সে যাই হোক, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ বিনোদনমূলক ব্যক্তির মৃত্যুদিনে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি তার ৬টি অমর উক্তি, যেগুলোর কথা ভাবলে কখনও হাসি পায়, কখনও কান্না, কিংবা কখনও একসাথে দুটোই!

কার্টুন: আরাফাত করিম

 

১# পুরুষ মানুষের বয়স হয় না, মনোবলটাই আসল।

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সালে রংপুর পর্যটন মোটেল হলরুমে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা ও ২ মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং সম্পাদকের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সবাই আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে আমার নাকি বয়স হয়েছে। বয়স আবার কী, মনোবলটাই আসল। এটা সবার জানা দরকার যে, পুরুষ মানুষের বয়স হয় না।

তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক ইনকিলাব

কার্টুন: আরাফাত কিরিম

 

২# দেয়ার ইজ নো সংকট ইন জাতীয় পার্টি!

১৮ জুন, ২০১৬ সালে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন এরশাদ। দলে কোনো সঙ্কট নেই দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, অসম্ভব... অসম্ভব... দেয়ার ইজ নো সঙ্কট ইন জাতীয় পার্টি। আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি জাতীয় পার্টিতে কোনো সংকট নাই। নো ওয়ান কুড ব্রেক ইট।

তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, দৈনিক ইত্তেফাক

 

৩# আমরা মানুষ খুন করিনি। আমাদের হাতে রক্তের দাগ নেই।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন সিটির এক্সপো জোনে আয়োজিত দুদিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তৃতায় এরশাদ বলেন, আমরা মানুষ খুন করিনি। আমাদের হাতে রক্তের দাগ নেই। তাই দেশের মানুষ আমাদের ভালোবাসে, মানুষ আবারও জাতীয় পার্টির শাসনামল ফিরে পেতে চায়।

তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

কার্টুন: খলিল রহমান

 

৪# আমি দেশের জন্য এত করি, এটুকু কি আপনি দেবেন না আমাকে?

১৯৮৩ সালের অক্টোবর মাস। জেনারেল এরশাদ তখন বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। মাত্র তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। সংসদ ভবনে তখন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দফতর (সিএমএলএ)। সেখানে রীতি অনুযায়ী এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদ কথা বলবেন তার যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে।

জাহাঙ্গীর হোসেন তখন সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস এর কূটনৈতিক সংবাদদাতা। তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি ক্ষমতায় আসার আগে কেউ জানতো না আপনি একজন কবি। এখন সব পত্রিকার প্রথম পাতায় আপনার কবিতা ছাপা হয়। পত্রিকার প্রথম পাতা তো খবরের জন্য, কবিতার জন্য নয়। বাংলাদেশের প্রধানতম কবি শামসুর রাহমানেরও তো এই ভাগ্য হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপানোর জন্য কী কোন নির্দেশ জারি করা হয়েছে?’

 এরশাদ প্রশ্নকারী সাংবাদিককে বললেন, আমি দেশের জন্য এত করি, এটুকু কি আপনি দেবেন না আমাকে?

জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, 'প্রশ্ন করার অধিকার আমার, উত্তর দেয়ার অধিকার আপনার। কিন্তু আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। আমার প্রশ্নটি হচ্ছে, আপনার কবিতা প্রথম পাতায় ছাপানোর জন্য কী কোন নির্দেশ জারি করা হয়েছে?'

এবার জেনারেল এরশাদ বললেন, আপনি যদি চান, আর ছাপা হবে না।

এরপর পত্রিকার প্রথম পাতায় জেনারেল এরশাদের কবিতা ছাপা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার কবিতা প্রথম পাতা থেকে চলে গিয়েছিল ভেতরের পাতায়। তবে এর পরিণাম ভোগ করতে হয়েছিল জাহাঙ্গীর হোসেনকে। তাঁকে চট্টগ্রামে জোরপূর্বক বদলি করা হয়। দু’বছর সেখানে কাজ করে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন তিনি।

তথ্যসূত্র: এরশাদ: কবিখ্যাতি পাওয়ার জন্য ব্যাকুল এক সেনাশাসক, নিষিদ্ধ কবিতা এবং একটি সংবাদ সম্মেলন- বিবিসি বাঙলা  

কার্টুন: তন্ময়

 

৫# ইচ্ছা ছিল না, জাস্টিস সাত্তারের অনুরোধে দেশের দায়িত্ব নিয়েছি।

১৯৯০ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন, তাঁকে কেন স্বৈরাচার বলা হয়, তা তিনি খুঁজে পান না। তাঁর রাষ্ট্রের দায়িত্ব (ক্ষমতা) নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের অনুরোধে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানীতে জাপার চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক যোগদান এবং জাপা-সমর্থক পেশাজীবী সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে এরশাদ এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, অনেকে আমাকে স্বৈরাচার বলেন, কিন্তু কী স্বৈরাচারী করেছি আমি খুঁজে পাই না। আমি কখনোই স্বৈরাচার ছিলাম না। আমার রাষ্ট্রের দায়িত্ব (ক্ষমতা) নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। জাস্টিস সাত্তারের অনুরোধে দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তিনি তখন দেশ চালাতে অপারগ ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নির্বাচন দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই ভোট বর্জন করল। আমাকে বাধ্য হয়ে দল গঠন করতে হয়েছে।

তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

 

৬# কোনো চালাকি করলে চারটা পিস্তল আছে, আমার কাছে যাওয়ার আগেই এগুলো দিয়ে আমি সুইসাইড করব। দিস ইজ মাই প্রমিজ।

৫ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তৎকালীন আসন্ন নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে এরশাদ বলেন, এই মুহূর্তে আমি আমার দলের প্রার্থীদের ঘোষণা দিচ্ছি, তোমরা মনোনয়নপত্র তুলে নাও। তোমাদের জীবনকে বিপন্ন করো না।

তিনি আরও বলেন, র‍্যাব-পুলিশ আমার গায়ে হাত দেওয়ার আগে আমি মরে যাব। সরকারকে বলে দিয়েছি, কোনো চালাকি করলে চারটা পিস্তল আছে, আমার কাছে যাওয়ার আগেই এগুলো দিয়ে আমি সুইসাইড করব। দিস ইজ মাই প্রমিজ। 

তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

২৭৫৪ পঠিত ... ১৯:৪৩, জুলাই ১৪, ২০২০

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top