প্রায়শই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের একটি সুপ্রাচীন ছবি ফেসবুকে ঘুরতে দেখা যায়, যা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তির (খানিকটা হাস্যরসেরও!) । ছবিতে দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সহঅধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের পাশে। এ সময় তার কোমরে পিস্তল ঝুলে ছিল এবং পাশে সারিবদ্ধ আরো কয়েকজন মানুষকে দেখা যায় বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে।
তবে কি মাহমুদুল্লাহ সেই ৭১ সাল থেকেই ভিন্ন এক প্রকার দলের হয়ে খেলছেন বাংলাদেশের পক্ষে? সত্যিই কি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টাইম মেশিনে চড়ে একাত্তরে গিয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন? নাকি ছবিতে ছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পূর্বপুরুষদের কেউ? এমন বিতর্কও শুরু হয়ে গিয়েছে ফেসবুকে। এই বিতর্ক নিয়ে যেন দেশবাসী আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে না পড়ে তার জন্যেই eআরকির অনুসন্ধানী দল খুঁজে বের করেছে ছবিটির সত্যিকারের পটভূমি।
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল, মুক্তিযুদ্ধকে সাংগঠনিক উপায়ে পরিচালিত করার জন্যে এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনসমর্থন তৈরি করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার বা মুজিবনগর সরকার। আর ১৭ই এপ্রিল ঐ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ শপথ গ্রহণ করেন মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার (পরে মুজিবনগর নামকরণ হয়) এক আম বাগানে। আলোচিত ছবিটি আসলে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের। ছবিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অফ অনার দিচ্ছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। আর নজরুল ইসলামের পাশে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন যে সুদর্শন পুরুষ, যার সাথে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের চেহারার অদ্ভুত মিল, তিনিই ছিলেন সেই ঐতিহাসিক গার্ড অফ অনারের নেতৃত্বে। তৎকালীন ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক (এসডিপিও) মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম।
১৯৬৭ সালে পুলিশে যোগ দেয়া মাহবুব উদ্দিন আহমদ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৭ই এপ্রিলের আগেই সরাসরি সম্মুখসমরে পাকিস্থানী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। একাত্তরের ২০ সেপ্টেম্বর হানাদার বাহিনীর বৈকারী ঘাঁটি আক্রমণে অংশগ্রহণ নিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ব্যারাকপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এই অদম্য সাহসী যোদ্ধা ১৬ই অক্টোবর আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে আসেন।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন