রবীন্দ্রনাথ: হিরো! মন খারাপ করিস না। তোকে কিন্তু আমার ভালোই লাগে! তুই যে আমার গান গাইতি, আমি কিন্তু খুশিই হয়েছি। চেষ্টা করছিস। হয়তো অন্যদের মতো হচ্ছে না। কিন্তু চেষ্টাটা তো ছিল। চেষ্টাটাই আসল।
হিরো আলম: আপনি আর কথা বলবেন না। আপনার জন্যই আমার আজ এ অবস্থা! লজ্জায় সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবো না।
রবীন্দ্রনাথ: আমি আবার কী করেছি?
হিরো আলম: আপনি যে আপনার গানের দেখভালের দায়িত্ব পুলিশের কাছে দিয়ে গেছেন, এটা তো কাউকে বলে যাননি?
রবীন্দ্রনাথ: কিন্তু আমিতো আমার সজ্ঞানে, আমার জানামতে আমার কোনো গানের দায়িত্ব কোনো পুলিশকে দিয়ে যাইনি। শুধু পুলিশ কেন, আমার কোনো ক্রিয়েটিভ ওয়ার্কের দায়িত্বই আমি কাউকে দিয়ে যাইনি। না কোনো ব্যক্তিকে, না কোনো রাষ্ট্রকে! আমার কাজ মানুষের জন্য। এগুলো এখন মানুষের, সবার। তোরও। তুই একটা স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ।
হিরো আলম: তাহলে পুলিশ কেন আমাকে মুচলেকা নিলো?
রবীন্দ্রনাথ: আমিও তো সেটাই ভাবছি! ওদের তো এটা করার কথা না। মোরাল পুলিশিং তো পুলিশের দায়িত্ব না।
হিরো আলম: আমি তো ঠিক বাংলায় কথাও বলি না, তাহলে কি আমাকে এটার জন্যও মুচলেকা দিতে হবে?
রবীন্দ্রনাথ: এখন যে অবস্থা আমার তো মনে হয় দিতে হতে পারে। আমাকেও হয়তো দিতে হবে!
হিরো আলম: আপনাকে কেন?
রবীন্দ্রনাথ: নৌকা ডুবি উপন্যাসের জন্য যদি আমাকে মুচলেকা দিতে বলা হয়!
হিরো আলম: আপনি টেনশান কইরেন না, আপনি দুদিক ব্যালেন্স করেই লিখেছেন। আপনি অনেক হিসেবি ছিলেন। আপনার কিচ্ছু হবে না। আপনি সোনার তরীও লিখেছেন। সেখানে ভারা ভারা ধান কাটা হলো সারাও লিখেছেন। টেনশান নাই।
রবীন্দ্রনাথ: কিচ্ছু বলা যায় না। আমি তো সাধু ভাষায় লিখেছি। এখনো তো সাধু-ভাষায় কেন, কোথাও নেই। সব অসাধুতে ভরা।
হিরো আলম: এটা অবশ্য আপনি মারাত্বক ভুল করেছেন। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে লেখা উচিত ছিলো। অনেক কঠিন কঠিন জিনিসও লিখেছেন! সেগুলোও তো কেউ বুঝে না।
রবীন্দ্রনাথ: একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকে না। দেশের টাকা বিদেশ পাচার হয়, বড় বড় প্রজেক্টে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট-পাট হয়, পুলিশের কাজতো তাদের ধরা, তাদের না ধরে তোকে কেনো মুচলেকা দিতে গেল? তুই তো কোনো ফৌজদারি অপরাধ করিসনি!
হিরো আলম: আজ আমাকে মুচলেকা দিয়েছে, এদেশের মানুষ খুব হাততালি দিয়েছে। আমি ভাবছি ভবিষ্যতের কথা! ভবিষ্যতের কথা ভাবতেই আমার খুব হাসি পাচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ: কেন? ভবিষ্যতের আবার কী হলো?
হিরো আলম: আজ যারা আমাকে নিয়ে হাসছে, তারা বুঝতেছে না। এটার ভবিষ্যৎ কী! পুলিশ এরপর লম্বা চুল রাখার জন্য মুচলেকা দিবে, শার্টের বোতাম না লাগানোর জন্য মুচলেকা দিবে, ফাটা প্যান্ট পড়ার দায়ে জেলে নিবে! এমনকি দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্যও হাতকড়া পরাতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ: কী বলছো এসব! আমার তো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
হিরো আলম: আপনি প্লিজ ওসব দাঁড় করাতে যাবেন না। আপনার শুধু মুখের দাড়িটা এদিক-ওদিক হলে আপনাকে আর চেনা যাবে না।
রবীন্দ্রনাথ: আচ্ছা পুলিশ কি একটা পাগলকেও মুচলেকা দিবে? কারণ সে যা করছে, সেটাও তো স্বাভাবিক না। অস্বাভাবিক। অনেক সময় অশ্লীলও। সমাজের যাবতীয় অসংগতি-অশ্লীলতা দূরীকরণের দায়িত্বও তো তার। সোশ্যাল পুলিশিং কাম মোরাল পুলিশিং।
হিরো আলম: এটা কী বলছেন গুরু? আপনার গানের সাথে পাগলকে মেলালেন?
রবীন্দ্রনাথ: গানের সাথে মেলাইনি! মিলিয়েছি ওদের রিঅ্যাকশানের সাথে!
হিরো আলম: কিন্তু ওস্তাদ, আমার কষ্টটা অন্য জায়গায়! আমি তো এখন চাইলে আর জাতীয় সংগীতও গাইতে পারবো না!
রবীন্দ্রনাথ: কেন? ওটাতো তোর বার্থরাইট! জন্মগত অধিকার। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ তুই।
হিরো আলম: সমস্যাতো সেখানেই। প্যাঁচ তো লাগাইছেন ওস্তাদ, আপনি নিজে। জাতীয় সংগীতটাওতো আপনি লিখেছেন! বলা যায় আরেকটা রবীন্দ্র সংগীত।
রবীন্দ্রনাথ: লোকে তোকে নিয়ে হাসাহাসি করলেও তোর মাথায় কিন্তু বুদ্ধি ভালোই আছে। বিষয়টা চিন্তার। আর যদি জাতীয় সংগীত গাইতে না পারিস, তাহলে কি তোর জাতীয়তা থাকবে?
হিরো আলম: ওস্তাদ, আমি কি তাহলে এখন এদেশের নাগরিক আছি?
রবীন্দ্রনাথ: এটা অবশ্য আমি বলতে পারছি না। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে!
হিরো আলম: এই যথাযথ কর্তৃপক্ষটা কে?
রবীন্দ্রনাথ: আমিও চিনি না রে এদের।
হিরো আলম: আচ্ছা আজ তাহলে আমি যাই!
হিরো আলম চলে যেতেই বাসার সামনে বিশাল লম্বা লাইন। সবাই রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে এসেছে। মাহফুজুর রহমান, অনন্ত জলিল সহ অসংখ্য সেলিব্রেটি, লেখক, উপন্যাসিক, কবি, আঁকিয়ে, গায়ক, নৃত্যশিল্পি ! সবাই জানতে এসেছে কী কথা হলো তাদের।
রবীন্দ্রনাথ সবাইকে শুধু একটা কথাই বলল!
রবীন্দ্রনাথ: হিরো আলমের মুচলেকা নেয়ায় যারা যারা খুশি হয়েছেন, কাজটা ঠিক করেননি। বিষয়টা হিরো আলম না। বিষয়টা সিস্টেম। অবস্থা খুব একটা ভালো ঠেকছে না। একে একে সবার সিরিয়াল আসতেছে। এদেশে থাকলে সম্ভবত সবাইকে মুচলেকা দিয়েই থাকতে হবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন