আমের প্রতি বিদায়ী মানপত্র

৬৩৩ পঠিত ... ১৮:০০, জুলাই ২১, ২০২২

Amer-bidayee-manpotro

হে মধুর দিশারি,

গ্রীষ্মের অগ্নিস্নান যখন সূচি হলো এ ধরায়, তখনই নীরস সময়টাকে মধুর করে তুলেছিল তোমার আগমন। শ্রাবণের করুণ বারিধারাতেও পেয়েছিলাম তোমার কাছে স্বস্তি। কিন্তু সহসাই যেন বেজে উঠলো তোমার বিদায়ের সকরুণ ধ্বনি, তোমার অবসরক্ষণ ঐ এল যে! বর্ষার আকাশ পরিষ্কার, কারণ আকাশের সকল কালো মেঘ যে আমার মনে! বিদায়ের এ মুহূর্তে হৃদয়মাঝে ঝংকারিত হচ্ছে--

'যেতে নাহি দিব হায়,

তবু যেতে দিতে হয়,

তবু চলে যায়।'

 

হে শোভাবর্ধনকারী,

আজ এ বিদায়বেলায় মনে পড়ে যাচ্ছে বিগত দিনের কত অফুরন্ত স্মৃতি। মনে পড়ে যাচ্ছে এ বছর যখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম বাড়ির পাশের গাছটিতে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে বেড়ে উঠতে। তোমার উপস্থিতি মূহুর্তের মাঝে বাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের ফ্রিজের শোভা। তোমার মিষ্টি গন্ধে ভরপুর থাকায় কারো দরকার হতো না ডিওডোরেন্টের। কেটে খাই কিংবা চুষে, আমের আঁটিটাও যে আমার থেকে বেশি কেউ পরিষ্কার করতে পারতো না। অনন্ত জলীল বিলেত বসে তার বউকে অরেঞ্জজুস খাওয়ালেও আমাদের জুসের আধার ছিলে শুধুই তুমি।

 

হে আন্তর্জাতিক মানের ফল,

ফলের রাজা, স্বাদের রাজা তুমি। হতে পারতে দেশের জাতীয় ফল-ও। কিন্তু দেশ তোমার কদর না করতে পারলেও অন্য অনেক দেশ দিয়েছে তোমায় জাতীয় ফলের খেতাব। তোমার গুণের প্রসংশা করে গেছেন বিখ্যাত আন্তর্জাতিক কবি মির্জা গালিব, মোঘল সম্রাট বাবর। তোমার মাঝে কতজনে দেখলো অদেখাকে।

 

তোমার টুসটুসে রসের স্বাদে মাতোয়ারা হয়ে কবি লিখে গিয়েছিলেন,    

আমার সকল রসের ধারা

           তোমাতে আজ হোক-না হারা ॥

জীবন জুড়ে লাগুক পরশ, ভুবন ব্যেপে জাগুক হরষ,

      তোমার রূপে মরুক ডুবে আমার দুটি আঁখিতারা ॥

 

হে আমাদের সকাল-বিকাল-রাতের সঙ্গী,

তোমায় সঙ্গে নিয়ে কাটিয়ে দিলাম কতগুলো দিন। করেছি আঁটির পর আঁটি শেষ, এখনো কাটেনি তৃপ্তির রেশ। ভাত না খেয়েও খেয়েছি আম, ফিরিয়ে দিয়েছি লিচু, তরমুজ, আনারসকেও। শয়নেস্বপনে দেখেছি শুধুই তোমায়।

প্রতি বছর তোমার স্বল্প সময়ের আগমন বাঙালি ফলপ্রেমীদের মনে দেয় রসের আন্দোলন। প্রতিক্ষার নতুন পালা শুরু হতে যাচ্ছে। আসছে বছর ফিরে এসো আরো রসালো, মধুময় ও সুগন্ধী হয়ে।

 

তোমার গুণমুগ্ধ আমজনতা

৬৩৩ পঠিত ... ১৮:০০, জুলাই ২১, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top