ফ্লোরাল প্রিন্টের কাপড় পরে আমরা যে কারণে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে গেলাম

৪৮৯০ পঠিত ... ১৩:২৭, মার্চ ১০, ২০১৭



আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। একদিন নতুন একটি জামা পরে ক্লাশে গেলাম। মনটা বেশ খুশি খুশি। কারণ সেইসময়ে নতুন জামা পাওয়াটা ব্যাপক আনন্দের একটা ব্যাপার ছিল। দুটি ঈদ, জন্মদিন আর তেমন কোন উৎসব ছাড়া নতুন জামা কাপড় পাওয়া হয়ে উঠতো না। আমার বন্ধু সুমির মা, মানে মালেকা খালাম্মা আমাকে এই জামার কাপড়টা উপহার দিয়েছেন। সাদার মধ্যে প্রিন্টেড কাপড়টা বন্ধুমহলে বেশ প্রশংসিত হলো বলে মনটা আরও খুশি হল ।


এগারোটার দিকে ক্লাশ থেকে বের হয়ে সেমিনার রুমে গিয়ে দেখলাম ওখানে সুমি বসে আছে। পরনে একই কাপড়ের জামা। সুমি তখন ঐ বিভাগেরই থার্ড ইয়ারে পড়তো। সুমি আর আমি থাকতাম নিউ কলোনির পাশাপাশি ভবনে। নিত্যদিনের যাতায়াত। আমাদের কাছে ওর বাসা, আমার বাসা আলাদা কিছু ছিল না। খালাম্মা যখন কিছু কিনতেন তখন সুমির বন্ধু এবং ওই বাড়ির অলিখিত সদস্য হিসেবে আমিও একটা ভাগ পেতাম। বুঝলাম খালাম্মা এই কাপড়টা সুমিকেও কিনে দিয়েছেন।

সুমির বাবা ছিলেন একই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক। দুপুরে এডিটিং ক্লাশে গিয়ে দেখি সাখাওয়াত স্যার, মানে সুমির বাবাও ওই একই কাপড়ের একটি শার্ট পরে ক্লাস নিতে এসেছেন। এবার তো আমার ফিট হয়ে যাওয়ার অবস্থা। সবাই বেশ কানাঘুষা শুরু করলো। কেইসটা বোঝার চেষ্টা করছে। সুমি এই প্রিন্ট পরেছে, পরেছে কিন্তু তাই বলে সাখাওয়াত স্যারও! যাহোক কোনো উপায় তো নাই আমার--ক্লাশও বাদ দেয়া যাবে না এখন বা জামাও বদলানো যাবে না। অগত্যা ক্লাশেই থাকলাম। স্যার এইসব বিষয়ে খুবই উদাসীন, তাই তিনি ব্যাপারটা ধরতেই পারলেন না।

বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চৈতালি’ বাসে বাসায় ফিরবো বলে আমি আর সুমি ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ওই রুটের বাকিদের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা অনেকেই একসাথে বাসে ফিরতাম। হঠাৎ দেখলাম চারতলা থেকে নেমে এলো আমাদের কুটি খালা, মানে সুমির ছোট খালা। ও ফিন্যান্সে পড়তো সুমির আগের ব্যাচ। ও এসেছে আমাদের সাথে বাসায় ফিরবে বলে। পরনে সেই একই কাপড়ের জামা! এবার আমি আর সুমি সত্যি সত্যিই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। কীভাবে এখন বাসে যাবো? তিনজন একই কাপড়ের জামা পরা এবং নামবোও একসাথে আসাদগেটে।


ওহ না, খালাম্মাকে এর জবাব দিতে হবে। একে কি আমরা কাকতলীয় বলবো? কেন আমাদের চারজনকে একই প্রিন্টের জামার কাপড় দিলেন তিনি?কেন আমরা একই দিনেই সেটা পরলাম? কুটি খালা জানালো সুমির ভাই উপলকেও নাকি তিনি একই কাপড়ের শার্ট পড়ে বের হতে দেখেছেন।

ঘটনার শেষ কিন্তু তখনও হয়নি। প্রতিদিনের মতই ব্যাগটা বাসায় রেখে সুমিদের বাড়ি গেলাম আড্ডা দিতে। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম, নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। খালাম্মা শুধু আমাদের একই কাপড় পরিয়ে খ্যান্ত হননি। ওনার ঘরের বিছানার চাদর, বালিশের কভার সব ওই একই প্রিন্টের!

সন্ধ্যায় খালাম্মা বাড়ি ফিরে এলে আমরা চেপে ধরলাম। এর মানে কি? উনি খুব নিরীহ একটা হাসি দিয়ে বললেন, 'তোমাদের নূরজাহান খালাম্মা দোকানের জন্য কাপড়ের একটা লট এনেছিলেন। সব কাজে লাগেনি। ওর লস হচ্ছিল, তাই আমি একটা লট কিনে নিলাম, যাতে ওর উপকার হয়। এত কাপড়, তাই তোমাদের সবাইকে দিয়েছি।'

আমরা হতবাক। এর কি কোন উত্তর হয় ? 

৪৮৯০ পঠিত ... ১৩:২৭, মার্চ ১০, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top