বৃষ্টির খ্যাতা পুড়ি

৩৭০ পঠিত ... ১৭:২০, মে ৩০, ২০২২

Bristir-kheta-puri

বৃষ্টি নিয়া বাঙ্গালদেশের মানুষদের আদিখ্যেতা যে কতো আগ হইতে শুরু হইয়াছে তাহা আমার জানা নাই। আমার জন্ম এই ইনস্টার যুগে, এখন এই আদিখ্যেতার গন্ধ আমি পাই মুখ কষ্টা করা এস্প্রেসোর দোকানে বসিয়া থাকা স্বঘোষিত (বলুন 'স্বPro’, পৃথিবী ছোট হইয়া আসিতেছে যেখানে সেখানে আপনার এত মুখের কসরত করিবার কী প্রয়োজন?) প্রগতিশীল নারীদের স্থিরচিত্রে কিংবা পেনসিল হিলের দাগ বসানো কোনো হৃদয়ধারীর নীল দুনিয়ার দেয়ালে৷ সেইদিন, এমনই এক বেগানা স্বPro নারীর বৃষ্টির মধ্যে হাতের স্থিরচিত্র তুলিয়া দিতে দিতে যখন আমার প্রায় সোয়া এক কেজি ওজন কমিয়া যাইতেছিল, পিঠ কোঁকাইয়া তারস্বরে চিৎকার করিতেছিল, 'ছেড়ে দে মা! কেঁদে বাঁচি!’  তখন আমি হঠাৎ করিয়াই আনমনা হইয়া গেলাম। জানেনই তো, ব্যথা পাইতে পাইতে যখন অভ্যস্ত হইয়া যাইবেন তখন তাহা ভুলিতে মস্তিষ্ক নানা প্রকারের কারিশমা দেখায়। অর্থ খরচ করিয়া ম্যাজিক শো আপনারা বেহুদাই দেখিতে যান! আসল ম্যাজিশিয়ান তো মাথায় লইয়া ঘুরিতেছেন। হায়রে গৃহপালিত পশুর দল!

যাহা হউক, তখন আমি ভাবিতে লাগিলাম, আজকাল আমরা ঠিকমত বৃষ্টিতে ভিজিও না। আমাদের আদিখ্যেতা ওই নীল দেয়াল পর্যন্তই। আপনার ক্যামেরাম্যান যদি আদিখ্যেতা প্রকাশক স্থিরচিত্র তুলিতে আমার পর্যায়ে পারদর্শী হোন, তাহলে এই ধরিয়া লন আপনার দেহের প্রায় পাঁচ ভাগের তিনভাগ অংশ ভিজিয়া যাইবে একভাবে খাড়াইয়াই। আর যদি না থাকে সেরকম গুণ, তাহলে এই যাত্রায় বাঁচিয়া গেলেন বৈকি!

অধিক কৃপণতা নহে, পকেটে বাতাস নিত্যসঙ্গী হওয়াতে ন্যাদাকাল হইতেই বাসে চলাচল করিয়া আসিতেছি। এই বাস হইতে বৃষ্টি দেখা অনেকটা ভুখা পেট আর ফাঁকা পকেট লইয়া খাবারের দোকানের বাহিরে খাড়াইয়া থাকিবার মতো, যদি আপনি বৃষ্টিপ্রেমী হইয়া থাকেন। নীল দেয়ালে দেখানোর মতো আদিখ্যেতা থাকিলে বাস থেকে নামিয়া যাওয়াই শ্রেয়। কারণ জানালা খোলা রাখিয়া আপনি যেই আপনার ইয়া বড় হস্তখান বাহির কইরা নামও শুনেন নাই এমন কবিদের কবিতা যোগ করিয়া নান্দনিক সাজিবেন নীল জগতে, এমন কোন সুযোগ নাই। একেতো বাহির করিবার কয়েক মিনিটের মধ্যে হাত লইয়া যাইবে অন্য কোন যানবাহন, না হইলে কনডাক্টর আসিয়া হলুদ দন্তপাটি দেখাইয়া আস্তে করিয়া জানালাটা মুখের উপর বন্ধ করিয়া দিবে। মাথার উপরে টিনের ছাদ বাইয়া এক আধটা বৃষ্টির ফোঁটা ঘাড়ে পড়িলেও, চোখ দিয়াই বাকি কাজ সারিতে হইবে। বৃষ্টিতে বাসে আটকাইয়া থাকা মনুষ্যকূল হইলো এই ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। পেট ভরে না এদের, তবে মনে শান্তি আছে।  

এরচেয়ে আপনি সারাবছর ধরিয়া নাক সিঁটকায়া আসা রিকশাতে উঠুন। বহু নারীকে দেখি কহেন, তাহাদের প্রেমিকের সহিত ঢাকনা ফালাইয়া দিয়া রিকশায় ভিজিবার বহুত শখ। আপনার যদি বহু অর্থ খরচ করিয়া এক্সরে করিবার প্রয়োজন হয়, তবে এই কাজ করিতে পারেন। এইখানের মানুষ শাকাহারী না হইলেও এইসকল সময় তাদের চক্ষু বেশ কাজ করা শুরু করে। বৃষ্টির মধ্যে মুখের লালা পড়িবার দৃশ্য দেখা যায় না, না হইলে তাহাও দেখিতে পারিতেন! তবে আপনার যদি পুচ্ছদেশে অন্য লোকে হাত লাগাইয়া সুরসুরি না যোগাইতে পারে, তবে বড়লোকি এই হালে ভেজাটাই উত্তম হইবে।

সব থেকে দরিদ্র হইলো এইসময়ে গাড়িতে থাকা লোকগুলো। পাজেরোর ভিতরে মুখখানা দেখিলে মনে হয় পানি না পাইয়া শুকাইয়া গিয়াছে। কিন্তু ভাব তো দেখাইতেই হয়! বাঙ্গালী বলিয়া কথা!

বৃষ্টি থামিবার সাথে সাথেই দেখিবেন ইহারা ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠে কী করিয়া রাস্তার পানি আপনার পেটের ভিতর ঢুকানো যায়, সেই কর্ম সাধন করিতে। হুশ হুশ করিয়া বেহুশের মতো চাকা গড়াইয়া লইয়া এরা আপনের সাদা জামা লাল করিতে বেশি সময় লইবে না। (সময় পাইলে ওভারব্রীজে উঠিয়া এদের উপর ছ্যাপ ফালাইবেন। একজনকে মারা মানেই, সকলকেই মারা। লেট দেয়ার বি হেইট্রেড।)

আরো কিছু বলিবার ইচ্ছা ছিল, তবে জানালা বন্ধ করিয়া দিয়াছে শালা কন্ডাক্টর। নামিয়া আজ ইচ্ছামতো ভিজিবো। কোন শালা আটকাইবার চায় দেখি!

(বৃষ্টিতে ভিজিতে ভালো লাগলেও মনে করিবেন না লেখিকার কদম ফুল পছন্দ। এইসব মাকাল ফুল লইয়া লেখিকার সামনে আসিলে আপনাদিগের শ্রবণশক্তি কমিয়া যাইতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করিয়াছেন তিনি।)

 

৩৭০ পঠিত ... ১৭:২০, মে ৩০, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top