যেভাবে আমিও রেলমন্ত্রীর আত্মীয়

৩৪৮ পঠিত ... ১৬:১৮, মে ০৯, ২০২২

AmioMontrir-attio

সকাল সকাল গরম খবর। রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় ট্রেন টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম বরখাস্ত।

এই খবর দেখে মাথা ঠিক রাখা যায় না। দেশটা কি মগের মুল্লুক হয়ে গেল? রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে তাঁরা কি বিনা টিকিটে ভ্রমণ করবে? রেলমন্ত্রীর আত্মীয় আবার কেমন পরিচয়? মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনের জন্য কি আলাদা জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করতে হবে? দিন দিন পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছি দেখছি।

মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনও কি নিজেদেরকে মন্ত্রী ভাবা শুরু করেছে? তাঁদেরকেও কি ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে? কী আজব দেশ রে ভাই! জমি একজনের। আর যথাযোগ্য মর্যাদায় চাষবাস করতে চায় আরেকজন।

আত্মীয় রেলমন্ত্রী বলে আপনারা যা ইচ্ছা তা-ই করবেন? আপনাদের কোনো লাজ-শরম নাই? সব শালা উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।

পুরো সিস্টেমটাই উল্টাপাল্টা। সব জায়গায় দু’নম্বরিতে ভরা। এজন্যই হয়তো হুমায়ুন আজাদ বলে গিয়েছেন, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।‘ এই আত্মীয়রা নষ্ট। আত্মীয়দেরকে লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছে যারা, তারা আরও বেশি নষ্ট।

স্ট্যাটাসটা ফেসবুকে পোস্ট করলাম। শান্তিতে কমেন্ট দেখতে পারলাম না। তার আগেই মোবাইল বেজে উঠল। বন্ধু কল দিয়েছে।

'দোস্ত, কাজটা তো হলো না।'

'হবে না কেন? তোর বাপ না ওই ভার্সিটির প্রফেসর?'

'হ্যাঁ, কিন্তু আব্বা বলছে সম্ভব না। কোয়ালিফিকেশন ম্যাচ করে না।'

'তোর বাপ ভার্সিটির প্রফেসর। আর সিস্টেম করে আমার এলাকার একজনরে ভার্সিটির চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বানাইতে পারতেছে না। তাহলে বন্ধুর বাপ এত বড় ভার্সিটির বিশাল বড় প্রফেসর হয়ে কী লাভটা হইলো বাল আমার।'

বন্ধুর কল না কাটতেই মামার কল।  

'ভাগ্নে, তোরা অন্যসময় আয়। এবার কক্সসবাজারে খুব চাপ। কোনো হোটেলে রুম ফাঁকা নাই।'

'কী কও মামা? বন্ধু-বান্ধবকে বলে রাখছি তো।'

'এবার প্ল্যান বাতিল কর।'

'ধুর মামা! বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার মান ইজ্জত রাখলা না। তুমি না ওখানে পর্যটনের বড় কোন পোস্টে আছো? রুম ম্যানেজ করতে না পারলে বড় পোস্টে থেকে লাভ কী হলো তোমার? যেভাবে পারো তুমি রুম ম্যানেজ করো মামা। ভাগ্নের মান ইজ্জত বাঁচাও।'

দেখছেন অবস্থা! আমার মামা পদবীর দাপট খাটানো শেখে নাই। পলিটিকস করেও আমজনতার মতো নিয়ম-নীতি ফলো করে। আরে ভাই, স্যরি, আরে মামা, তুমি বলবা, দলবল নিয়ে চলে আসো ভাগ্নে। কোনো সমস্যা নাই। কক্সবাজারে কোনো আকাম করলেও সেটার ব্যাকআপ দিব আমি। তখন না বুঝতাম আমার মামা পলিটিকসে আছে!

মামার আলাপ শেষ। এবার চাচা কল দিয়েছে। দুইবার রিং হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। তবু ধরি নাই। তাঁকে দেখলেও এখন না দেখার ভান করি। আগে আদর করে চাচ্চু ডাকতাম। এখন আর ডাকি না। ডাকবই বা কেন বলেন?

আমার চাচা ডাক্তার। একটা সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। আমাকে কি না সেই হাসপাতালে গিয়ে অন্য সবার মতো সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে করোনার টিকা নিতে হলো? এই চাচা দিয়ে জাতি কী করবে! গুল্লি মারি এসব চাচার!

মোবাইল স্ক্রিনে ফেসবুক নোটিফিকেশন ভেসে উঠছে। কে কে যেন আমার পোস্টে কমেন্ট করছে। দেখি কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়া যাক।

একজন কমেন্ট করেছে, দেশটা এমপি-মন্ত্রীর আত্মীয়দের নামে লিখে দেওয়া হোক। এসব লিংক লবিং চর্চা বন্ধ হোক।

আমি রিপ্লাই করলাম, ঠিক, যেদিকে যাও শুধু লিংক লবিং! চারিদিকে শুধু সুপারিশ আর সুপারিশ! এসব লিংক লবিংয়ের চর্চা ঝেটিয়ে বিদায় করা হোক!

৩৪৮ পঠিত ... ১৬:১৮, মে ০৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top