রমজানে ব্যবসায়ীরা যেভাবে দ্রব্যমূল্য কমালেন

৪২৬ পঠিত ... ১৬:০৩, মার্চ ৩১, ২০২২

Drobbomullo-thumb

ব্যবসায়ী সমিতির জরুরী মিটিং চলছে। রমজান মাসকে সামনে দ্রব্যমূল্য কমানোর বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। কে কত কমাবে তা নিয়েই মিটিং।

মিটিংয়ে সূচনা বক্তব্য রাখতে উঠলেন ছোলা ব্যবসায়ী আবদুল মতিন। মাত্রই নামাজ পড়ে এসে বসেছেন তিনি। চোখ বন্ধ করে তসবি জপছেন। খেজুর ব্যবসায়ী আবদুর রহমানের ডাকে হুঁশ ফিরলো তার।

: ভাইজান, সূচনা বক্তব্য শুরু করেন।

মতিন মিয়া চোখ খুলে দোয়া পড়ে তসবিটা পকেটে রাখলেন। এরপর দাঁড়িয়ে বলা বললেন, ‘সবাইকে রমজানুল মোবারক।‘

প্রতি উত্তরে বাকিরাও রমজানুল মোবারক বললেন।

মতিন মিয়া ধীরে ধীরে বলা শুরু করলেন, ‘রমজান চলে আসলো। সিয়াম সাধনার মাস। তাই আমরা ঠিক করেছি, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সুবিধার্থে এই মাসে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনবো। সারাবছর তো আমরা ব্যবসা করিই। এই একটা মাস ব্যবসা কম করে করি। মানুষের সুবিধার কথা ভাবি। আপনারা যে যার পণ্যের কেমন দাম কমাতে চান সে অনুযায়ী মূল্য বলেন।’

শুরুতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নুরু মিয়া উঠলেন। বেশ হতাশ তিনি। কিছুটা রাগান্বিতও। তিনি বললেন, ‘গত বছর আমার পেঁয়াজ ২৫০ টাকায় গেছে। এবার তেলের জন্য পারলাম না। এখন দাম ৩০-৩৫ টাকা। সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। আমি ২০ টাকা দাম কমিয়ে ১৮০ রাখতে চাই। তাই আজকের সভায় আমি পেঁয়াজের মূল্য প্রস্তাব করছি ২০০ টাকা কেজি।

বেসন ব্যবসায়ী বেসনের দাম প্রস্তাব করলেন, ১৮০। বর্তমান বাজার মূল্য ৬০-৮০ টাকা।

এরপর উঠলেন খেজুর ব্যবসায়ী রহমত মিয়া। তিনি বললেন, ‘খেজুর ছাড়া ইফতার হয় না আপনারা তো জানেনই। তাই আমি ঠিক করেছি এবার খেজুরের দাম রেকর্ড পরিমাণ কমাবো। সেজন্য বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ৩০০ টাকা বাড়াতে চাই। ৯০ টাকা কেজি খেঁজুরের নতুন দাম নির্ধারন হলো ৩৯০টাকা।  

বেগুন ব্যবসায়ীও দাম কমানোর লক্ষে ৪০ টাকার বেগুন ১২০ টাকা দাম প্রস্তাব করলেন।

তেল ব্যবসায়ী কিছুটা ব্যাকফুটে আছেন। ইতোমধ্যে তেলের দাম অনেক। তিনি কী করবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি বললেন, ‘আমি এমনিতে ঝামেলায় আছি। দাম কমানো সম্ভব না। তাও সবাই যখন কমাচ্ছে মানবতার খাতিরে আমিও কিছু কমাতে চাই। এখন তেলের দাম ২০০ টাকা। আমি ৩০০ টাকা নতুন দাম প্রস্তাব করছি।‘

সবার শেষে ছোলা ব্যবসায়ী মতিন মিয়া নিজের কথা বললেন। রমজানের ছোলার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বক্তব্য দিয়ে দাম প্রস্তাব করলেন, ১৫০ টাকা। ছোলার বর্তমান বাজার মূল্য ৬৯ থেকে ৭৫ টাকা।

সবার দাবি মেনে নিয়ে কোন ধরণের বিতর্ক বাদেই সভা সেখানেই শেষ হলো। দেশবাসীকে জানিয়ে দেয়া হলো নতুন মূল্য তালিকা।

পেঁয়াজ ২০০, বেসন ১৮০, খেজুর ৩৯০ টাকা, বেগুন ১২০ টাকা, তেল ৩০০ টাকা, ছোলা ১৫০ টাকা।

তা নিয়ে চারদিকে নানান আলোচনা সমালোচনা। সাধারণ মানুষ ফেটে পরলো প্রতিবাদে। টক শো হলো, সভা-সমাবেশ হলো। মিছিল মিটিং হলো।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসলো দাম কমানো হবে।

ব্যবসায়ী সমিতি রোজার একদিন আগে নতুন মিটিং ডাকলেন। সেখানে কমানো হলো দাম। ২০০ টাকার পেঁয়াজের দাম কমানো হলো ৫০ টাকা। রোজার মাসে মূল্য ১৫০ টাকা। বেসনে ২০ টাকা কমিয়ে ১৬০। বেগুন ৪০ টাকা কমিয়ে ৮০। তেল ২০ টাকা কমিয়ে ২৮০ টাকা। ছোলাতেও কমানো হলো ২০ টাকা, নতুন মূল্য ১৩০ টাকা।

খেজুর ব্যবসায়ীও কথা রাখলেন। তিনি রেকর্ড পরিমাণ ৯০ টাকা দাম কমালেন। বর্তমান মূল্য ৩০০ টাকা।

৪২৬ পঠিত ... ১৬:০৩, মার্চ ৩১, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top