সাহেদের গ্রেফতারের গল্পটা যেমন হলে সবাই খুব থ্রিল খুঁজে পেতো

৯৯১ পঠিত ... ২২:২৫, জুলাই ১৬, ২০২০

যে গরীবি স্টাইলে সাহেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জাতি এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। অলরেডি জল্পনা কল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে, স্ক্রিপ্টটা নাকি ঠিকমতো জমেনি। আসলেও তাই, ডিপজলের সিনেমার মতো সুপারস্টারের মুভি দেখা জাতি এই স্ক্রিপ্ট কীভাবে মেনে নেয় বলুন? সেইসব অনুসন্ধিৎসু ফেসবুক গোয়েন্দাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি স্ক্রিপ্ট প্রস্তাব করা হলো। 

 

১.

রাজশাহী বিমানবন্দর। রাত ঠিক বারোটা বেজে একান্ন মিনিট। শেষ ফ্লাইটটা টেক অফ করেছে আধঘণ্টা আগে। পুরো বিমান বন্দর জুড়ে কবরের নিস্তব্ধতা। শহরের আলোকচ্ছটার বিপরীতে প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ টার্মিনাল ভবনটা। গার্ডরা যার যার রুমে ডিউটি করছে। পুরো ভবন অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে থাকলেও নিচতলার একটা রুমে আলো জ্বলছে। বিমান বন্দরের মহাপরিচালক ইকবাল সাহেবের রূম ওটা। সবকিছু শেষবারের মতো চেক করে রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।     

লবির অন্ধকার অংশটা পার হবার হবার সময় হঠাৎ পিঠে গোলাকৃতির স্পর্শ অনুভব করলেন  তিনি। ঘুরতে যাবেন এমন সময় রাতের নিস্তব্ধতা চিরে একটা কণ্ঠ গমগম করে উঠলো,

- প্লিজ, খুন করে ফেলতে আমাকে বাধ্য করবেন না এখনই। যা বলছি করুন।

 'আমি কে জানেন?' বলতে গিয়েও গিলে ফেললেন পিঠে বেরেটা মেশিন পিস্তলের গুতো খেয়ে। কণ্ঠটা আবার জিজ্ঞেস করলো, 'লাস্ট ফ্লাইট তো চলে গেছে, তাই না?'

- জ...জি স্যার!

- ওসব স্যার ট্যার *দাবেন না দয়া করে। যা বলছি, শুধু তার উত্তর দেবেন। নো টাল্টিবাল্টি! কালকের ফার্স্ট ফ্লাইট কয়টায় শিডিউল করা আছে?

- সকাল আটটা পঞ্চাশ মিনিটে।

- ডোমেস্টিক নাকি ইন্টারন্যাশনাল?

- ডোমেস্টিক। এখান থেকে ছেড়ে যাবে স্যার।

- এয়ারক্রাফট কোথায় আছে এখন?

- এখানেই। সি এস বাংলার হ্যাঙ্গারে।

- পাইলটকে ফোন লাগান।

- ক ক কিহ?

ঘাড়ের পেছনে একটা শক্ত ঠুয়া খেয়ে নিজেকে সামলে নিলেন মহাপরিচালক সাহেব। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন করলেন সিএস বাংলার জিএম কে।

 

২.

জিএম সাহেব কচুর লতি আর ইলিশ মাছের ভুনা দিয়ে ভাত খেয়ে হাতের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে  বেগম সাহেবার পিছনে ঘুরঘুর করছিলেন। ঠিক এমন সময় কোথায় যেন বজ্রপাত হলো। ওহহো, এটা স্যারের ফোনের রিংটোন। বিরক্তির সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে চমকে গেলেন তিনি। কিচ্ছু বলার সুযোগ পেলেন না। শুধু শুনে গেলেন।  শুনতে শুনতেই উনার চুল একবার খাড়া হয়ে আবার শুয়ে পড়লো। গাল বেয়ে চিকন একটা ঘামের ধারা নিচের দিকে চলে গেলো। এতোক্ষণ যা শুনছিলেন, তাতে তাঁর তিনবার হার্ট এটাক হবার কথা ছিল। দ্রুত নিজেকে সামলে নিলেন। বড় বিচক্ষণ লোক তিনি। গুরুত্বপূর্ণ আরো  দুই জায়গায় ফোন করে, বারান্দায় এসে চুরুট ধরিয়ে  শান্ত ভঙ্গিতে পায়চারি করতে লাগলেন।

 

৩.

মহাপরিচালকের অবস্থা বেশ শোচনীয়। দু’হাত বাঁধা। ঘাড়ের পেছনটা চুলকাচ্ছে। কিন্ত তিনি  চুলকাতে পারছেন না। এরচেয়ে বাজে অবস্থা আর কী হতে পারে? চুলকানি ভুলে তিনি সামনের দিকে তাকালেন। তাঁর সামনে বসে আছেন এই মুহূর্তের সবচেয়ে হট টপিক, স্বাস্থরাজ্যের রাজাধিরাজ, এক ও অদ্বিতীয় জনাব সাহেদ। হলুদাভ গ্রে রং এর থ্রি পিস স্যুটে অপূর্ব মানিয়েছে।  ব্যাকব্রাশ করা চুল। পৌরুষ ফুটে বের হচ্ছে চেহারা থেকে। মহাপরিচালকের একটা সেলফি তোলার অনুরোধ করতে গিয়ে মনে পড়লো ফোনটা শাহেদের কাছে। এতো বড় মাপের একজন মানুষের সাথে দেখা হয়েও সেলফি না তুলতে পারার তিক্ততায় ছেয়ে গেলো মনটা।

 শাহেদের ফরসা হাতের শোভা বর্ধন করে আছে কালো একটা বেরেটা অটোমেটিক মেশিন পিস্তল। নলটা তাকিয়ে আছে ইকবাল সাহেবের দিকে।

কব্জিতে আঁটা রোলেক্স ঘড়িতে সময় দেখলো সাহেদ। একঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। পিস্তল নাচিয়ে প্রশ্ন করলো, 'আর কতক্ষণ?'

- এইতো এলো বলে, স্যার!

সাহেদ কটমট করে তাকালো। স্যুটের ভেতরের পকেট থেকে একটা পাইট বের করে একটা সিপ  নিলেন। ইকবাল সাহেবের লোভাতুর দৃষ্টি উপেক্ষা সাহেদ আরো দুই সিপ মারলো। ভেতরে ভেতরে চাপা একটা অস্থিরতা কাজ করছে তার। গুনগুন করে আবৃত্তি করতে শুরু করলো,' আবার আসিব ফিরে, এই ধানসিঁড়িটির তীরে...'

 

৪.

আকাশে নিঃসঙ্গ এক ফালি চাঁদ ঝুলে আছে।

সেদিকে তাকিয়ে করুন সুরে ডেকে উঠলো একটা কয়োট।  

শহরের বাইরের আকাশে চক্কর কাটছে এয়ারফোর্সের একটা চপার। ভেতরে পাইলট ছাড়া ছয়জন। ভারি অস্ত্রে সজ্জিত। প্রত্যেকের হাতে একটা করে সাবমেশিনগান, কোমরে গোঁজা পিস্তল আর ওয়রব্যাগ ভরতি এম্যুনিশন। মাতৃভূমি রক্ষা করার স্পৃহা প্রত্যেকের দৃপ্ত চাহনীতে। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন সরকার শেষবারের মতো সবাইকে অপারেশনের প্ল্যান বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, 'আর ইউ রেডি বয়েজ?'

সকলে সমস্বরে উত্তর দিলো, 'ইয়েস স্যার!' অতঃপর তিনি শরীরের সমস্ত শক্তি গলায় জড়ো করে বললেন, 'অ্যাকশন!' মুহূর্তের মধ্যে একে একে সবাই ঝাঁপ দিলো দেশমাতৃকাকে শত্রুর কালো থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য।  

 

৫.

অতি সন্তর্পণে এয়ারপোর্ট এরিয়াতে ল্যান্ড করলো চৌকস কমান্ডো দলটি। ক্যাপ্টেনের নির্দেশে পায়ে পায়ে এগুচ্ছে সবাই মুল ভবনের দিকে। নিজেদের মধ্যে সাঙ্কেতিক ভাষায় কথা বলছে ওরা। হাতে উদ্যত অস্ত্র আর বুক ভরা সাহস নিয়ে দলের শেষ জওয়ানটি একজন অসচেতন যাত্রীর ফেলে যাওয়া কলার খোসায় পিছলা খেয়ে তাল হারিয়ে আছরে পড়লো শক্ত কংক্রিটে। ট্রিগারে চাপ লেগে এক পশলা বুলেট আকাশের ঠিকানা খুঁজতে চলে গেলো।

 

৬.

লাফিয়ে দু’হাত উপরে উঠে গেলো সাহেদ। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন ইকবাল সাহেব। এই  শরীর নিয়ে একজন মানুষ এভাবে লাফাতে পারে এটা তাঁর কল্পনার বাইরে ছিলো। লাফিয়ে ওঠা অবস্থাতেই অবিশ্বাস্য দ্রুততায় পিস্তল তুলে গুলি করলো সাহেদ। ইকবাল সাহেব সরে যাওয়ায় সোফায় লেগে তুলো উড়ালো বুলেট। বাইরে ভারী বুটের শব্দ দ্রুত এগিয়ে আসছে। সাহেদ সাহস  হারালো না। পজিশন নিয়ে দাঁড়ালো। লড়বে সে। গুনগুন করে বলে উঠলো, বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সুচাগ্র মেদিনী...'

বিরক্ত হলো সাহেদ। টকশোর কুফল এগুলো। দরজায়  বুটের লাথি সাহেদকে বাস্তবে নিয়ে এলো। সাহেদ একটা রণ হুংকার দিয়ে গুলি ছুঁড়লো। উত্তরে ধেয়ে এলো এক পশলা বুলেট। ট্রিগারে চাপ দিয়ে তার মনে পড়লো, দ্যাটস ওয়াস লাস্ট ও্যান। সাহেদের ভিতরে থরহরিকম্প শুরু হলো। বাইরে থেকে আবারো ধেয়ে এলো কিছু বুলেট।

শেষ তব দুনিয়া? বাটপারিটা কি আর হবে না কখনও? অভিমানে সাহেদের গলা বুঁজে এলো। এ পৃথিবী তার প্রতিভার মূল্য দিলো না। হয়তো তার মূল্যায়ন হবে, হয়তো শতবর্ষ পরে। কী আসে যায়?

ও কি? মহাপরিচালক সাহেব দেখি উঠে দাঁড়িয়েছেন। দৌড়ে আসছে দু’জন কমান্ডো, তাদের থামালেন মহাপরিচালক, 'দাঁড়াও, তোমাদের কিছু করা লাগবে না। সাতক্ষীরার র‍্যাবকে খবর দিয়েছি। এক লাথিতে আমি ওকে ওখানেই পাঠাবো। উলটো ঘোরো তো বাবা সাহেদ... না না, দাঁড়াও। আগে আমার সাথে একটা সেলফি তুলে নাও।'

 

৭.

'স্যার, ও স্যার...'

কী ব্যাপার? সাহেদের কাঁধ ঝাঁকাচ্ছে কে? মহাপরিচালকের লাথি খাবার কী হলো?

ভালো করে তাকাতে স্পষ্ট হলো মুখ। রাতের অন্ধকার আস্তে আস্তে ফর্সা হয়ে আসছে। এইবার মাঝিকে চিনতে পারলো সাহেদ।

- কী ব্যাপার, মাঝি? ইন্ডিয়া পৌঁছে গেছি?

- না স্যার, র‍্যাব আইসছে। আপনাকে খুঁজতিছে। আমি স্যার পালালাম। দোয়া রাখবেন।

ঝপাস করে লাফ দিয়ে পড়ার শব্দ হলো পানিতে। ফুঁপিয়ে উঠে সাহেদ উপলব্ধি করলো, এয়ারপোর্টের সেই রোমহর্ষক কাহিনীটা, ভারতে পালানোর পর কোনো টকশোতে তার না বলাই থেকে গেলো...

৯৯১ পঠিত ... ২২:২৫, জুলাই ১৬, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top