ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে পাবলিক শেমিং দেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিংবদন্তিদের প্রতিক্রিয়া

১৯৭৬ পঠিত ... ২৩:১২, এপ্রিল ২০, ২০২০

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে ফেসবুকে ৭২ ঘন্টা পাবলিক শেমিং দেখে স্কুল পড়ুয়া এক বালকের ক্ষোভ হয়; তার জন্মস্থানটি নিয়ে সবাই এমন বলছে; অথচ তার এই যে বেড়ে ওঠার জনপদ এইখানে অদ্বৈত মল্ল বর্মণ 'তিতাস একটি নদীর নাম' উপন্যাস লিখেছিলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন, কবি আল-মাহমুদ এই জনপদের অশ্রু দিয়ে লিখেছিলেন, "আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে; হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।" এইখানে আলাউদ্দিন খাঁ তার সেতার আর সানাইয়ের সুরে ছড়িয়ে রেখেছেন স্বপ্নের ইন্দ্রজাল।

বালকটি কী করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই সোনার মানুষদের তার দুঃখের কথা বলবে তা ভেবে পায় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করোনা ছুটিতে ফেরা চাচ্চুকে জিজ্ঞেস করে সে। চাচ্চু বলে, এটা কোন সমস্যা না। প্ল্যানচেট করলেই তারা এসে পড়বেন।

চাচ্চু একটা কাঠের টুকরো ডেটল দিয়ে ধুয়ে প্ল্যানচেট বোর্ড বানায়। রহস্যের হাসি হেসে বলে, আজ রাতে খেলা হবে। তুই উনাদের একটা করে ছবি খুঁজে বের কর। যা গুগল মামাকে বল খুঁজে দেবে।

পাশের বাসার নন্টে-ফন্টে সারাক্ষণ কান খাড়া করে রেখেছিলো। তারা এসে যোগ দেয় প্ল্যানচেট আসরে। টেবিলের ওপর প্ল্যানচেট বোর্ড রেখে; একপাশে একটা মোমবাতি জ্বেলে দেয়া হয়। চাচ্চু ব্রিফ করে, ফেসবুকে গিয়ে নিত্য হাস্যরসের যে বেয়াদ্দবিগুলো শিখছো; ঔগুলি অফ রাখো এখন। ঘরের টিউবলাইট অফ করে দে রে ফন্টে।

চাচ্চুই প্ল্যানচেটের মিডিয়াম হয়; বালক-নন্টে-ফন্টের কাজ প্ল্যানচেট বোর্ডের ওপর কয়েন ঘুরিয়ে তাতে আঙ্গুল স্পর্শ করা; আর একজন করে মহৎ পুরুষের ছবি রাখা। স্মার্টফোনে ছবি খুলে রাখলেও আজকাল নাকি চলে; যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ।

চারজন গ্লাভস পরে চেয়ারের চারপাশে বসে পরস্পরের আঙ্গুল স্পর্শ করে। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর কারণে গ্লাভস পরে আঙ্গুল স্পর্শ করেছে তারা। এমনিতে পরস্পরের হাত ধরে রাখার কথা।

অদ্বৈত মল্ল বর্মণ আসেন প্রথমে। চাচ্চুর কন্ঠস্বর বদলে যায়; উনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে ট্রল দেখেছি আমিও। কী আর বলবো, আমার 'তিতাস একটি নদীর নামে' দেখবে, সাধারণ হিন্দু-মুসলমানদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। তখন ব্রাহ্মণ পুরোহিত আর ধনী মাগন সরকার টাইপের লোকেরা সহজ জীবনগুলোকে জটিল করে তুলতো। এখন দেখছি মুসলমান মওলানারা সহজ জীবনগুলোকে জটিল করে তুলছে। এক ধর্মের বাড়াবাড়ির অত্যাচারেই বাঁচা দায়; তার উপরে যুক্ত হয়েছে রাজনীতির হ্যাপা।

এরপর ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ছবি রাখলে, তিনি এসে বলেন, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে কৌতুক করছে; তারা কী জানে, বাংলা ভাষাকে বিলুপ্ত করার চেষ্টায় ছিলো পাকিস্তান উপনিবেশের শাসকেরা। আমি পাকিস্তানের পার্লামেন্টে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলাম। মানুষ এতো অকৃতজ্ঞ হয়। আরে বাবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তোমাদের মায়ের ভাষা বাঁচাতে অগ্রণী হয়েছিলো; নইলে আজ কলকাতায় হিন্দি ভাষার যে উপনিবেশ দেখছো; অমনি ঢাকায় দেখতে উর্দু-ভাষার উপনিবেশ; সেটা কী ভালো হতো। আর মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতায় লড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ। কুল্লা পাথরের শহীদ স্মৃতিসৌধ ঘুরে যেও।

এরপর প্ল্যানচেট বোর্ডে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সেতারের ঝালার বেজে ওঠে। উনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুরের জগতে অসুর হয়েছে সমাজের অল্প কিছু লোক। এরা বৃটিশের দালালি করেছে; পাকিস্তানের দালালি করেছে; নিজের দেশের মানুষের ক্ষতি করে। স্বাধীন দেশে যখনই যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে; সে সব দলের দালালেরা আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ধর্ম আর রাজনীতির বাড়াবাড়িতে একটু শান্তিতে সেতার বাজাতে পারিনি। আমি মরে যাবার পরেও সুরের প্রতি শত্রুতায় আমার সুরের বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পাঠাগার গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তা এ অবস্থা কী কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়; দেশের অন্যত্র কী সুর আর গ্রন্থ থৈ থৈ করছে।

এরপর কবি আল-মাহমুদের ছবি রাখতেই উনি এসে বলেন, আমি কবি মানুষ; আমার কবিতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পাবে। আজকাল চারপাশে এতো মত ও পথের সংঘর্ষ; এতো নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেয় ভাবার আত্মম্ভরিতা দেখে মনে হয় ; করোনা এসেছে গজদন্তের স্বৈর নাগপাশ থেকে জনপদগুলোকে বাঁচাতে। করোনাকালের পর আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেতার শোনা যাবে; অদ্বৈত মল্ল বর্মণের তিতাস নদীতে "কাদির মিয়া ও তার ছেলের সকরকন্দ আলু বোঝাই নৌকা ভারী বর্ষণে ও জোরালো বাতাসে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলে বনমালী ও ধনঞ্জয় তাদের ও তাদের আলু উদ্ধার করে নিজেদের জেলে নৌকাতে তুলে নেবে। বনমালী ও কাদির মিয়ার সৌভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠবে।"

১৯৭৬ পঠিত ... ২৩:১২, এপ্রিল ২০, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top