ফুপুর শ্বশুরবাড়ির অন্দরমহলে গিয়ে আমি যেভাবে হেনস্থা হলাম

২৯৭৪ পঠিত ... ০৪:১৫, জুন ০৪, ২০১৮

আমার দাদার বাড়ি সেইরকম একটা মজার বাড়ি ছিল। অসংখ্য ভাই বোন, দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ফুপু সব নিয়ে আমাদের বিরাট পরিবার। অন্তত বিশজন মানুষ এক বৈঠকে ভাত খেতে বসতাম। ভাইবোনদের খেলা, হাসাহাসি আর আড্ডাবাজিতে কীভাবে যে ছুটির সময়টা পার হয়ে যেত, আমরা বুঝতামই না। আমাদের ছাত্রজীবনের সবচেয়ে বড় বিনোদন ছিল এই গ্রামের বাড়ির দিনগুলো। কোনো শাসন, শোষণ, নিয়ম-কানুনের বালাই কিচ্ছু ছিল না।

আমি তখন ক্লাস সিক্স অথবা সেভেনে পড়ি। গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার খাটুরিয়াতে বেড়াতে গিয়েছি। কয়েক মাস আগে সেজো ফুপুর বিয়ে হয়েছে সোনারায় ইউনিয়নের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। আমি আগে কখনো ফুপুর শ্বশুরবাড়ি যাইনি। আমার সেজো ফুপু খুবই সুন্দরী ছিলেন। সেই সাথে পড়াশোনা করেছিলেন যথেষ্ট, কবিতাও লিখতেন। ফুপাও সুপুরুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

যা হোক, শীতের পিঠাপুলি নিয়ে ফুপুর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ভার পড়লো আমার আর আমার চাচাতো ভাই, আমার বন্ধু, লাজ্জাতের উপর। আমরা ছোট বলে বাড়ির অভিভাবকসম অতি পুরাতন গারোয়ান মকসেদ ব্যাটাকে আমাদের সাথে দেয়া হলো। সে সময় আমাদের এলাকার একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। মহা উত্সাহে গরুর গাড়িতে তিন/চারটা টিন ভর্তি পিঠা নিয়ে আমরা রওয়ানা হলাম। গরুর গাড়িতে হেলতে-দুলতে যেতে যেতে আমাদের খিদে লেগে গিয়েছিল। আমরা আপন মনে একটা-দুটো করে বেশ কিছু পিঠা পেটে চালান করে দিলাম!

২/৩ ঘন্টা পর আমরা সোনারায় পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর দেখলাম বিরাট বাড়িঘর। বড় একটি দরজা দিয়ে বাড়িটাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নামার পর একজন এসে আমাকে অন্দরমহলে নিয়ে গেল। লাজ্জাত থেকে গেল বাইরের মহলে। ও আমার সমবয়সী হলেও পুরুষ বলে অন্দরমহলে ঢোকার রেওয়াজ নেই। ওর খাওয়া থাকা সব বাইরের মহলে ।

এদিকে ওরকম একটি প্রাণপূর্ণ বাড়ি থেকে এই পর্দার অন্তরালে গিয়ে আমার তো দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। সে বাড়িতে আমার বয়সী কেউ নেই। ফুপু রান্নাঘরে ব্যস্ত। লাজ্জাত বাইরের ঘরে। আমার বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। কীভাবে যে রাতটা পার করে আমাদের বাড়িতে ফিরবো, এ কথাই শুধু ভাবছিলাম।

কিছুক্ষণ পর পর এটা সেটা খেতে দিচ্ছে, কিন্তু আমি তো পর্দা প্রথার গ্যাঁড়াকলে বন্দী। তখন বুঝলাম কেন বাড়ির অন্য ভাইবোনরা এখানে আসার ব্যাপারে উত্সাহী ছিল না, কেন আমিই বেশি লাফিয়েছিলাম আসার জন্য! আমিতো জানতাম না এই বন্দী অবস্থার কথা।

আমি এঘর-ওঘর করছি, এটা সেটা দেখছি। হঠাৎ দেখলাম একটা তাকের উপর কিছু পাথর বা ইটের টুকরা পড়ে আছে। আমি সেগুলো নিয়েই গুটি খেলতে শুরু করলাম। কী আর করি, একা একা ইট দিয়ে গুটি খেলি। হঠাৎ দেখলাম, রান্নাঘর থেকে আমার ফুপুর শ্বাশুড়ি চিলের মত ছুটে এসে হাত থেকে ছোঁ মেরে টুকরাগুলো নিয়ে নিল। বলতে থাকলো, ‘ছি ছি মাই (মেয়ে) এগুলো দিয়া কাহো খেলায়। যাও যাও কলের পারোত গিয়া হাতখান ধুইয়া ফেলাও।’

অলংকরণ: মাহাতাব রশীদ

আমি একটু থতমত খেয়ে গেলাম। দাদির সাথে সাথে দৌঁড়ে এল আমার ফুপু, ফুপুর ননদ। সবার চোখে মুখে বিস্ময় ও চাপা হাসি। আমি আমার অপরাধটা বুঝতে পারলাম না। কেন কী হল, আমি কী এমন ধরলাম যে হাত ধুতে হবে।

কেউ আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিচ্ছিল না।

পরে আবার আমি ফুপুকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ওগুলো কী ছিল? কেন আমাকে খেলতে দিলো না? আমার ফুপু শুধু বলল, ওগুলো দিয়ে খেলে না। এই পাথরগুলো দাদার খুব দরকারি জিনিস। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কী এমন দরকারি পাথর দাদার। উনি ওগুলো দিয়ে করেনটা কী? ফুপু শুধু বললেন ওগুলো দাদার, মানে ওনার শ্বশুরের, কুলুখ। এই কুলুখ জিনিসটা কী, কী এর ব্যবহার, তা তখনও আমার কাছে পরিস্কার হলো না। মনে প্রশ্ন নিয়েই বাড়ি ফিরলাম পরের দিন।

বাড়িতে এ কথা শোনার পরতো সবাই হাসতে হাসতে শেষ। শেষ পর্যন্ত জানতে পারলাম কুলুখ জিনিসটা কী এবং কী এর ব্যবহার! আরো মনে আছে, জানার পর আমি দশ পনেরোবার হাত ধুয়েছিলাম। এরকম একটা কাজ মনে হয় শুধু ওই ধরণের হুজুর বাড়িতেই চলে।

এখনও মাঝেমাঝে অন্দরমহলে আমার ওই হেনস্থার কথা মনে হলে হাসি পায়। খুব জানতে ইচ্ছা করে, টিস্যু পেপার আসার পরও কি হুজুররা ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করেই চলেছেন?

২৯৭৪ পঠিত ... ০৪:১৫, জুন ০৪, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top