যে সময় সবার ফোনে একই রিংটোন থাকত না

২৫৩৯ পঠিত ... ২২:০১, নভেম্বর ২৩, ২০১৭

১.
একটা সময় রিংটোন নিয়ে আমাদের আহ্লাদ আর উদযাপনের কোনো সীমা ছিলো না।

আমাদের ছিলো মোটোরোলা ফোন। ভেতরে সিটিসেলের রিমকার্ড। পাশের বাড়ির ফোন ছিলো নোকিয়া।

আমাদের ফোনে রিংটোন ছিল মাত্র ৮ টা। ওদের নোকিয়া ফোনে রিংটোন ছিলো ২০টা।

লস্কর বাড়ির ছেলেদের মতো আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে প্রতিদিন নতুন রিংটোন বাজাতো তারা। আমরা পৃথিবীর সব হিংসা নিয়ে শুনতাম। আমাদের মন খারাপ লাগত।

আমাদের বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে গেল যখন গ্রামীনফোন গানের সুরে সুরে রিংটোন ডাউনলোড করার ব্যাবস্থা করলো। মাত্র ১৫ টাকায় একেকটা টোন। ওরা পত্রিকা ঘেটে ঘেটে রিংটোন বের করে, সেটা ফোনে সেভ করে।

কী সুন্দর সুরে বাজে-- পড়ে না চোখের পলক, কী জাদু করিলা, কুচ কুচ হোতা হায়...

আমাদের প্রিয় সব গানের সুর বাজে পাশের বাড়ির ফোনে। আর আমাদের ফোনে বাজে সিটিসিলের ক্রিং ক্রিং। প্রথমবারের মতো আমরা বুঝে গেলাম পৃথিবী নামক এই গ্রহটি অনেক নিষ্ঠুর, অনেক নির্মম।

এক শীতে আমাদের দীর্ঘশ্বাসের দিন শেষ হলো। অভিশপ্ত সিটিসেল মটোরোলা থেকে আমাদের মুক্তি মিললো। 'বিদেশ থেকে' আমাদের জন্য আসলো নতুন নোকিয়া ফোন। সবচেয়ে বড় কথা এটার রিংটোন 'পলিফোনিক'।

বাড়িতে শুরু হলো ঈদের আনন্দ। আমরা সারাদিন রিংটোন বাজাই, কান ভরে শুনি, মুগ্ধ হই। পাশের বাড়ির ছেলেদের দেখলে রিংটোনের ভলিউম বাড়িয়ে দেই। এ এক পৈশাচিক আনন্দ, এ এক অপার্থিব আনন্দ।

৩০০ টাকার কার্ডের একটা বড় অংশ চলে যায় রিংটোন নামাতে। প্রতিদিন রিংটোন।

বাসায় মেহমান আসলে ফোন বের করে রিংটোনের লিস্ট দেখাই। গর্ব নিয়ে বলি - 'আমাদের ফোনে তুম পাস আয়ে' রিংটোন আছে। আপনার তো মনে হয় নাই, তাই না?'

মেহমানের সামনেই আমাদের ফোনে কল আসে। আমরা ইচ্ছা করে ফোন ধরি না। বাজুক আরেকটু রিংটোন। শুনুক লোকটা। পলিফোনিক টোন। হুহ!
বাজার থেকে বই কিনে আনা হলো 'মোবাইল ফোনের টুকিটাকি'। এটার মধ্যে রিংটোন বানানোর সিস্টেম আছে। কোনো টাকা লাগে না। শুধু সিস্টেম মতো টাইপ করে নিলেই হয়। এই বই পাওয়ার পর এই পৃথিবীতে আমার কাজ হলো মাত্র একটা। সেটা হচ্ছে - রিংটোন বানানো।

একেকটা রিংটোন বানাই, শুনি, নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাই।

২.
রিংটোন উন্মাদনার সেই দিনগুলো সুন্দর ছিলো।
আমার হাতে ফোন এখন দুইটা।
একটা আনস্মার্ট নোকিয়া। এটার বয়স হয়েছে প্রায় ৭ বছর। এখনো নোকিয়া টোনই রয়ে গেছে।
আরেকটা স্মার্ট স্যামসাং। বয়স ২ বছর। কী জানি একটা রিংটোন আছে। এটাই বাজছে দুই বছর ধরে। সেটিং নামক একটা অপশন আছে, ওটাতে গিয়ে টোন চেঞ্জ করা যায়-- মাথায়ই আসে না কখনো।

২৫৩৯ পঠিত ... ২২:০১, নভেম্বর ২৩, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top