হিরো আলম যেভাবে রুচি-সনদ পেতে পারেন

১২১৫ পঠিত ... ১৫:৫৯, এপ্রিল ০১, ২০২৩

Hero-alom

হিরো আলম রুচির দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে মুষড়ে পড়েছেন। সমাজের রুচি পুরোহিতরা তাকে সুরুচির মন্দির থেকে গলাধাক্কা দিয়েছেন। রুচির এই দলিত এখন কী করবে! সে কি আত্মহত্যা করবে! নাকি মামলা করবে!

আত্মহত্যা কাপুরুষতা। আর রুচি পুরোহিতের বিরুদ্ধে মামলা ব্লাসফেমাস। মামলা করার অধিকার কেবল রুচি কেন্দ্রের। রুচি প্রান্তের অধিকার নেই রুচিকেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ করার।

হিরো আলমকে এখন চেষ্টা করতে হবে বরং রুচি পুরোহিতের মন জয়ের। ক্ষ্যাপা দুর্বাশার মন পেতে হিরোকে এখন কণ্ঠশীলনে ভর্তি হয়ে পোকিত প্রমিত বাংলা শিখতে হবে। মনে রাখতে হবে রুচি মন্দিরের ভাষা ‘হয়েছে-বলেছে-করেছে’। আহবান শব্দের উচ্চারণ হবে আওভান।

হিরো আলমের জন্য বেইলি রোড আর শাহবাগ এই দুই এলাকায় গম্ভীর মুখে ঘোরাঘুরি করা শেখা জরুরী। চেষ্টায় থাকতে হবে কোন একটি থিয়েটার দলে ঢুকে রুচি পুরোহিতের আশীর্বাদ লাভের। এজন্য প্রাণপাত করতে হবে।

ফেসবুকে তেলাঞ্জলির আসরে গিয়ে সহমত ভাই বলে পাশে থাকতে শিখতে হবে। প্রতিষ্ঠিত সহমত ভাইয়েরা সেখানে দেশপ্রেমের পরীক্ষা নেবে। সে পরীক্ষা বড় কঠিন। কিন্তু হিরোকে ধৈর্য্য হারালে চলবে না। তেলাঞ্জলি দেয়া শিখতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের ফিরিস্তি মুখস্থ করতে হবে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী নদীর টানেল; আপাতত এই তিনটি বিষয় বারবার আওড়ানো শিখলেও কিছুদিন চালিয়ে নেয়া যাবে।

হিরো যেন ভুলেও আর রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার চেষ্টা না করে। তাকে শিখতে হবে রবীন্দ্র সংগীত শুনে কীভাবে মাথা দোলাতে হয়।

আর তাকে হতে হবে নারীবাদী পুরুষ। তাই বলে মুক্তির মোড় থেকে সুলতানাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার দরকার নাই। কেবল বাতাবি লেবুর সুবাতাস টিভির উন্নয়ন আপারা যেসব নারী ইস্যুতে আলাপ করবে; সেইসব ইস্যুতে রেগে কাঁই হয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে হবে। প্রয়োজনে শাড়ি পরে ছবি দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে।

উন্নয়নের সরকার বারবার দরকার; তিনিই পারেন তিনিই পারবেন; তিনি আছেন বলেই আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারি; এসব বাক্যবন্ধ বারবার কপি পেস্ট করতে হবে হিরোকে। ফেসবুকে কেউ এসে সরকারের সমালোচনা করলে; তার যদি দাড়ি টুপি পরা প্রোপিক থাকে; তাহলে তাকে ফট করে ছাগু বলে কাঁঠাল পাতার ছবি যুক্ত করতে হবে। আর যদি পশ্চিমা পোশাকের প্রোপিকের কেউ সরকার সমালোচনা করে; তাকে ফট করে বামাতি বলে দিতে হবে। এইসব কাজে সাহসিকতা প্রদর্শন করে তেলাঞ্জলি আসরের আস্থা অর্জন করা গেলে; রুচি মন্দিরের কাছে যাওয়া সহজ হবে।

হিরোর ভুল হয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। সে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে এখন থেকেই ফেসবুকে সরকারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে। উন্নয়ন উন্নয়ন জপ করতে করতে একসময় শরীরে উন্নয়নের চর্বি লেগে গেলে; মুখমণ্ডল চকচক করবে। তখন রুচি পুরোহিতের সঙ্গে দেখা হলে, তিনি ঠিকই চিনতে পারবেন, একটু আস্কারা দিয়ে বলবেন, হিরো আমি ফেসবুকে তোমার সাহসী পোস্টগুলো দেখি। তোমাদেরই তো চালিয়ে নিতে হবে আমাদের যুদ্ধটা। আমরা আর কদিনই বা বাঁচবো। ঠিক তখন চোখে জল এনে বলতে হবে, অনেকদিন বাঁচতে হবে স্যার; আপনার আলোয় আমরা পথ দেখি।

অমনি হিরো আলম সংস্কৃতির বোধিপ্রাপ্ত হবে। রুচির অদৃশ্য পৈতেটি পরিয়ে দেবেন রুচি পুরোহিত। ব্যাস প্রকৃত রুচিসনদ পেয়ে যাবেন হিরো।

আসল কথা হচ্ছে, সরকারই রাষ্ট্র, সরকারই সংস্কৃতি, সরকারই রুচি, সরকারই সৃষ্টিকর্তা। সরকারের সঙ্গে ইঞ্চি ইঞ্চি মিলিয়ে চলতে পারলে, হিরো হয়ে উঠতে পারে রুচির মোহন পাত্র।

 

১২১৫ পঠিত ... ১৫:৫৯, এপ্রিল ০১, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top