উন্নয়ন সীতার অগ্নিপরীক্ষা

৮৫৫ পঠিত ... ১৬:৫২, জুন ০৫, ২০২২

282741263_2100610690131472_5973120723598717832_n

পদ্মা সেতু আমাদের উন্নয়নের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় লিখে ফেলুদা একটা ফেসবুক পোস্ট দিতেই; লাইকাঞ্জলি পড়ে। একজন মন্তব্য করে, ‘আপনি লিমিট ক্রস করছেন; সীতাকুণ্ডে ডিপোতে আগুন লেগে মানুষ মরছে; আর আপনি আছেন আপনার উন্নয়ন নিয়ে।‘

ফেলুদা তোপসের ইনবক্সে জিজ্ঞেস করেন, ‘সীতাকুণ্ডে কী হয়েছে তোপসে; এমন আনন্দের সময়ে রুদালিদের দেখছি কাঁদতে। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।‘

তোপসে জানায়, ‘সরকার দলীয় এক নেতার ডিপোতে আগুন লেগেছে; সেইসঙ্গে ফেসবুকে আগুন লেগেছে; রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনায় ধারাবাহিক মানুষ পুড়িয়ে মারার দোজখ কীনা এটা প্রশ্ন তুলছে লোকে। অগ্নি নির্বাপণের উপযুক্ত ট্রেনিং ছিলো না ফায়ার ব্রিগেডের; এমন অভিযোগ উঠছে।‘

ফেসবুকে সাইরেন বাজিয়ে ফায়ার ব্রিগেড এসে পড়ে তাদের দক্ষতা দেখাতে। কী করিলে দ্রুত অগ্নি নির্বাপণ করিয়া অনেক প্রাণ বাঁচানো যাইতো; তা নিয়ে অভিসন্দর্ভ লিখতে থাকেন পশ্চিমে ও পূর্বের হোয়াটস এপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিরত ছাত্রেরা।

ফেলুদা জিজ্ঞেস করেন, ‘ক্ষতিপূরণ ঘোষণা হয়েছে তোপসে?’

: হ্যাঁ মাংসের বাজার দর হিসেবে আহতের পরিবার ২০ কেজি মাংসের মূল্য পাচ্ছে; আর নিহতের পরিবার ৫০ কেজি মাংসের মূল্য পাচ্ছে। একে বলা যায় উন্নয়নের মাংসের কারবারে দিয়াত বা ব্লাড মানি।

ফেসবুকের ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান নির্দেশ দেন, ‘ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা দৌড়ে গিয়ে রক্ত দিন, ত্রাণ দিন, আর কান্নার পানিতে নিভিয়ে ফেলুন আগুন; পৃথিবীতে এমন কোন আগুন নেই যা চোখের পানিতে নেভে না।‘

ফায়ার ব্রিগেডের এক আপা এসে বলেন, ‘প্লিজ সবখানে সরকারের দোষ খুঁজবেন না। ডিপোর মালিক আবার মিডিয়ার মালিক; তারে কোনভাবে বিএনপি-জামায়াতের আত্মীয় ট্যাগিং কইরা ঐ সফট টার্গেটে পিটাইতে থাকেন সবাই। সরকারকে টাচ করার দরকার নাই; এতে উন্নয়ন ব্যহত হবে।‘

ফেসবুকের রাজ জ্যোতিষীকে গিয়ে পদ্মাসেতুর ভক্ত জিজ্ঞেস করে, ‘পদ্মা সেতুর মূর্চি উন্মোচনের ক্ষণ কী অটুট থাকবে; সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের পর; নাকী উন্মোচন তিথির কোন পরিবর্তন আসবে?’

ফেসবুক রাজ জ্যোতিষী গম্ভীরভাবে বলেন, ‘বিরহ-বিচ্ছেদের সুর থেকেই মিলনের আভাষ ফুটে ওঠে; উন্নয়নের জন্য যারা প্রাণবলি দিয়েছে; তারা তো স্বর্গবাসী হবে। তাদের পুনর্জন্ম হবে রাজনীতিক-আমলা-ব্যবসায়ী-সেনাকর্মকর্তা-পুলিশের সন্তান হিসেবে। নিম্ন নগরীতে রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে এরপর উচ্চ নগরীর স্বর্গ পাওয়া যায় পরজন্মে।‘

এক লোক আক্ষেপ করে বলে, ‘হিরো আলমের গান আর হাছান মাহমুদের কৌতুকে জীবনটা ভালোই যাচ্ছিলো; পদ্মা সেতুতে আলো জ্বলেছে কাল; নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র করে কেউ; ডিপোর কাছে গিয়ে সিগ্রেট ফেলেছে!’

তোপসে ফেলুদাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা ফেলুদা, অন্যদেশে মানুষ মারা যাওয়ার আগে, আই লাভ ইউ বলে স্বজনকে; কিন্তু আমাদের এখানে সবাই মারা যাবার আগে ক্ষমা চায় কেন?’

ফেলুদা বলেন, ‘রাষ্ট্রের টপ টু বটম ক্ষমা চাওয়ার কালচার নাই; তাই সবাই মৃত্যুর আগে ক্ষমাগুলো চেয়ে যায়।‘

কিছুদিন পর পর রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা অযোগ্যতায় আগুনে পুড়ে মারা যাবে মানুষ; আর তখনই ৭২ ঘণ্টার জন্য ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে; এরপর আস্তে আস্তে ফেসবুকে ফুল ফল লতা পাতার চেঞ্জওভার দিয়ে চলে যেতে হবে উন্নয়নের পদ্মা-সেতুর নাচন-কোদনে। পুতুল নাচের ইতিকথার পাপেট মাস্টার কাঁদলে সবাই কাঁদে, হাসলে সবাই হাসে, রস করলে সবাই আনন্দে হুটোপুটি খায়; আবার গম্ভীর হয়ে গেলে সবাই ভয়ে জড়সড়ো হয়। এর অন্যথা হলেই ফুটসোলজারদের মিছিল শোডাউন, উন্নয়নের শত্রুরা হুঁশিয়ার সাবধান।

কন্সপিরেসি থিওরিস্টরা যুক্তরাষ্ট্রের সি আই এ কে দায়ী করছেন, ‘এমন ভেনেজুয়েলা স্টাইলের অগ্নিকাণ্ড দেখে।‘

ফেলুদা অকুস্থলে পৌঁছে লোকজনকে লিওনার্দো দ্য ক্যাপ্রিও'র ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘একে কি এ এলাকায় উদ্দেশ্যমূলক ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন?’

: না স্যার।

টম ক্রুজের ছবি দেখালে বলে, ‘না স্যার।‘

জর্জ ক্লুনির ছবি দেখালে বলে, ‘না স্যার।‘

তবে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা কিছু বিদেশী সিগেরেটের ফিল্টার দেখে ফেলুদার সন্দেহ ঘন হয়। সিসিটিভিগুলোর ক্যামেরার ওপর চুইংগাম লাগানো দেখে, প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায়।

এক স্থানীয় নেতা এসে চোখ পাকিয়ে বলে, ‘এই যে আপনি কাঁদতেছেন না কেন! উন্নয়নের শত্রু নাকি?’

তোপসে উত্তর দেয়, ‘ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে কেঁদে কেঁদে উনার চোখের একোয়াস ও ভিট্রিয়াস হিউমার শুকিয়ে গেছে।‘

নেতা শান্ত হয়ে বলে, ‘তাহলে ৭২ ঘণ্টা পরে অবিরাম হাসার প্রস্তুতি নিন। উন্নয়নের ইতিহাসে এমন আনন্দযজ্ঞ জাতির জীবনে আর আসেনি।‘

প্রাডো হাঁকিয়ে দাতা হাতেম তাই এসে গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে বলেন, ‘তবু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বার্ন ইউনিট গড়ে তোলাতে; যুগোপযোগী কাজ হয়েছে।‘

ফেলুদা জিজ্ঞেস করেন, ‘উন্নয়ন আগে না মানুষের জীবন আগে?’

হাতেম তাই আর্তনাদ করেন, ‘উন্নয়নের সীতার আর কত অগ্নিপরীক্ষা নেবেন আপনারা? এই তোমরা তাড়াতাড়ি ক্ষতিপূরণের মাংসমূল্য দিয়ে দাফন সমাপ্ত করো; ঐ দেখো ছাইগাদার মাঝ থেকে উন্নয়ন সীতা ফিনিক্স পাখির মতো উড়ছে।‘

৮৫৫ পঠিত ... ১৬:৫২, জুন ০৫, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top