তিন বেলা মাংস

৯৫৪ পঠিত ... ১৭:৪৯, মে ২৯, ২০২২

3-bela-mangsho

তিন বেলা মাংস ক্লাবে সন্ধ্যেবেলায় একে একে সভ্যেরা আসতে থাকে। আজকাল এই ক্লাবে ভেজিটেরিয়ানের সংখ্যা বাড়ছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে ও মাথা পিছু দিবস পালনের ফলে অত্যাধিক উন্নয়নের মাংস খেয়ে, এখন মেদ-ভুঁড়ি ও কোলেস্টেরল লীগের সদস্যরা এখন এখানে ভর্তা-ভাজি-ডাল আর সালাদ খেতে আসেন।

মুজিব শতবর্ষ আর বাংলাদেশের ৫০ বছরে সরকার আয়োজিত শ্রদ্ধা-ওরসের বিরিয়ানি খেয়ে সাংবাদিক লীগ, যুবলীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক লীগের সভ্যেরা আর শার্ট ইন করে পাতলুন পরতে পারছেন না। বেল্টও যেন অসমর্থ কোমরের চর্বি টাইট করে দড়িতে বাঁধতে। হাঁসফাস লাগে আজকাল। বাড়ির বাইরে যেতে ফতুয়া, প্যান্ট, জুতোর মোজা পরতে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যায় সুচিন্তা যুগের সহমত ভাইয়েরা।

প্রতিদিন টিভি টকশোতে সহমতের দর্শন প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়ায় উন্নয়নের আনন্দ প্রচার আর সাঁঝে ক্লাবে এসে ভিন্নমতের প্রতি রাগ প্রচারের তিন বেলা মাংস ক্লাবে ঘুরে ফিরে ওবিসিটি হ্রাস, ডায়েট কনট্রোল, ওভার ওয়েট কমিয়ে আনা, ইন্টিমিটেন্ট ফাস্টিং, ট্রেডমিলে দৌড়ানো, সকালে হাঁটতে যাওয়া, মোদির যোগ ব্যায়াম ইত্যাদি বিষয় ঘুরে ফিরে আসে আলোচনায়।

মাঝে মধ্যে উন্নয়ন ঠিকাদার লীগের মুরাদ মহিমেরা এসে অভিজাত ক্লাবের বেয়ারাকে তুই বলে ডাকলে; অনেক আগে থেকে যে প্রবীণেরা এখানে বসে শিল্প-সংস্কৃতি আড্ডা দিতেন; তারা বিস্মিত হন। জলসা ঘরের বিপন্ন বিস্ময়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখেন, তিন বেলা মাংসের কারবারিদের।

নতুন সদস্যরা গত কয়েক বছর ধরে এখানে বারবিকিউ আর খুশীজলে উন্নয়ন উদযাপন করতে আসে। কাফলিং দিয়ে ব্র্যান্ডের শার্ট পরে আসে; ইটালির জুতা পরে আসে; ফরাসী সৌরভ মেখে আসে। তাদের খোয়ারিতে এটাকে শূয়োর ঝলসে খাওয়ার বুনো উল্লাসতলা বলে মনে হয় আজকাল।

দূরের টেবিল থেকে ঝাপসা চোখে তাকান সত্তরোর্ধ এক ইংরেজির শিক্ষক। সাংবাদিক লীগের এক টকশো বুদ্ধিজীবী আসে; তাকে ওদের টেবিলে আমন্ত্রণ জানাতে। সে আমন্ত্রণ এড়াতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ক্লাব বলেন, ‘আমি উঠছিলাম এমনিতেই। বয়স হয়ে গেছে। আরেকদিন আড্ডা দেবো তোমাদের সঙ্গে কেমন?’

সাংবাদিক লীগের বাবুটি একটু অসন্তুষ্ট হলেও বুঝতে দেন না। শুধু টেবিলে ফিরে এসে বলেন, ‘অই রুপালী ঐ বুইড়ারে খবরদার টকশোতে ডাকবা না। সরকার বিরোধী লোক সে। সে আমাদের চেতনার লোক নয়।‘

টেবিলে উপস্থিত পুলিশ আধিকারিক কোমরের বেল্ট ডিলা করতে করতে বলেন, ‘স্যার তো বিসিএস-দের নিয়া খুব হাসিঠাট্টা করে; নিজে বিসিএস-এ চান্স পায় নাই তো; তাই বোধ হয় হিংসা করে।‘

রুপালী হেসে বলেন, ‘স্যার তো বিসিএস দেন নাই; আই মিন সিএসপি পরীক্ষায় বসেন নাই শুনছি।‘

টকশো লীগের সিং হদা হেসে বলেন, ‘প্রাণিমন্ত্রী যে বললেন, চাইলে এখন তিন বেলা মাংস খেতে পারে জনগণ; এটা আজ রাতের টকশোতে কী করে জাস্টিফাই করি ভাবছি। ঐ রূম্পা আপা, কিছু পয়েন্ট টয়েন্ট দেন।‘

রূম্পা আপা চশমা পরে স্মার্ট ফোনে গুগল করে বলেন, ‘দেশে গরুর সংখ্যা এখন ছাগলের সংখ্যা চেয়ে বেশি। এই সরকারের সময়ে গরুর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। আজকাল আমার কাজের লোক ড্রাইভার মালি, এদের মুখে মাংস ছাড়া রোচে না। ওদের জন্য বাসায় রান্না হয়। আমি তো স্যালাড ছাড়া কিছু খাই না।‘

সাংবাদিক কোমলদা বলেন, ‘এতো মাংস খায় কী করে ওরা; আমি তো পুরোপুরি শাকাহারি হয়ে গেছি। মাঝে মধ্যে একটু মাছ খাই; তবু শাক দিয়ে ঢেকে।‘

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার আবার মাদক নির্মূলে ক্রসফায়ার শুরু হবার পর থেকে আলাদা করে আর মাংস খেতে ইচ্ছা করে না।‘

মিডিয়া বাবু ভাই বলেন, ‘জাতিসংঘকে যে গুমের তথ্য দিতে পারলেন না; নিষেধাজ্ঞা চিরস্থায়ী হলে সেকেন্ড হোমে যাবেন কী করে!’

পুলিশ বলেন, ‘ওমরাহ করতে গিয়ে আল্লাহ'র কাছে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি চেয়েছি। আল্লাহ ভরসা।‘

ফেমিনিস্ট গুলজাবিন আসেন বাঁশ হাতে। তিনি বাঁশ বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসে শান্তি প্রার্থনায় মানব বন্ধনে যোগ দিয়ে এলেন। বাঁশ হাতে তিনি গিয়েছিলেন, নারী অধিকারের পক্ষে দুটি কথা বলতে। ছাত্রীলীগ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো। তিলোত্তমা কেন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ জবাব চাই বলে অনেক করতালি পেয়েছেন তিনি।

সিংহদা জিজ্ঞেস করেন, ‘আচ্ছা বলুন তো মিস গুলজাবিন, পোগোতিচিলেরা নাহয় বিশেষ দিবসের বিরিয়ানি খেয়ে তিন বেলা মাংসের রেকর্ড পূর্ণ করেছে; ধর্মচিলের মাংসের অভাব পূরণ হলো কী করে!’

গুলজাবিন বলেন, ‘শোকরানা মেহেফিলের মাধ্যমে তো তারাও বিরিয়ানী খাওয়ার আওতায় এসেছে। মন্ত্রী-এমপি প্রধান অতিথি হন অনেক ওয়াজে। আর ফেসবুকে লিবেরেল মেয়েদের পেট-পিঠ-বক্ষ উপত্যকায় চোখ রেখে এই লোলুপ পুরুষদের মাংসের শখ মিটে যায়।‘

টেবিলে উপস্থিত পুরুষেরা সবাই আকাশের দিকে তাকায়। গুলজাবিন কখন থামবে বা কে ওকে থামাবে এটা ভাবতে থাকেন ভাইয়ারা।

কিন্তু গুলজাবিন বলতেই থাকে, ‘শুধু মৌলবাদীদের দোষ দিয়েই বা কী লাভ! একটু স্লিভলেস ব্লাউজ পরে এলেই অফিসের উদারবাদী পুরুষেরা তাকে মুরগীর রান ভেবে তাকিয়ে থাকে।‘

দূরের ঠিকাদার লীগের মুরাদ-মহিমেরা মিডিয়ার জলসাঘরের মেয়েদের টেবিলের দিকে তাকিয়ে;

মালয় দ্বীপের এক যে বোকা শেয়ালে

লাগলে ক্ষিদে মুরগী এঁকে দেয়ালে

চাটতে থাকে আপন মনে খেয়ালে।

৯৫৪ পঠিত ... ১৭:৪৯, মে ২৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top