ক্যাশ মি ইফ ইউ ক্যান

৩০৪ পঠিত ... ১৭:০১, মে ১৮, ২০২২

Cash-me-if-you-can

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করেছিলেন। আর একালে পিকে টেকাটুকাসাগর সধবার অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার করছেন। নাহিদা ব্রনাই, অবন্তিকা, অনিন্দিতা মৃধা, সুস্মিতা সাহা, পাপিয়া ব্যানার্জি, মমতাজ; পিকে টেকাটুকাসাগরের টেকাটুকা পেয়ে বাংলাদেশের দ্রুততম ধনীদের মাঝে ঠাঁই করে নিয়েছেন।

পিকে হালদার বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার শিক্ষিকা মা চেয়েছিলেন, ছেলে বড় হয়ে অনেক নামডাক করবে। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেছেন পিকেদা। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে এখন পিকে হবার স্বপ্ন।

পিকে ঢাকায় এসে একদিন বলাকা সিনেমায় যান গৌতম ঘোষের পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্র দেখতে। সেই যে কপিলা, তার উন্নত গ্রীবা; সুঠাম দেহবল্লরী; পিকে হালদারকে আকৃষ্ট করে। সিনেমা থেকে বের হয়ে চলে যান ইডেন গার্ডেনের নারী হোস্টেলে। চিরকুট পাঠান, নিজ গ্রামের মেয়ে রুপা হালদারকে। রুপা বেরিয়ে এসে ধমক দেয়, কী চান পিকেদা; এইখানে ঘুরঘুর করেন কেন!

পিকেদা টেনশনে বলে ফেলেন, আমরা লগে স্বর্ণদীপে যাবি কপিলা! তরে স্বর্ণদ্বীপের রাণী করুম।

: পড়া মুখস্ত কইরা ঠোঁট সাদা কইরা ফালাইছো; অহন বড় কুবের সাজতেছো যে পিকেদা! তুমি হালদার পাড়ার পোলা জীবনে কোনদিন দরিয়ায় যাওয়ার সাহস পাও নাই। যে হালদার মাছ না ধইরা বুয়েটে আইসা জ্যামিতি বক্স হাতে ধরছে; তার আর কপিলার স্বপ্ন না দেখাই ভালো পিকেদা! তোমারে দিয়া হইবো না। পুলিশের লগে বিয়া ঠিক হইছে। আমি দারোগার বউ হইতাছি। আশীর্বাদ দ্যানগো পিকেদা।

পিকেদা বুয়েটের হলে ফিরে পড়ার টেবিলের পাশে ওসমানীর ফটো ঝুলিয়ে চিরকুমারব্রত গ্রহণ করেন।

বাজার থেকে ছোট একটি জাল কিনে এনে; ঘরের মেঝেতে ছুঁড়ে দেয়; মেঝেতে ছড়িয়ে রাখা কিছু দশটাকার নোট তুলে আনে্ন জাল দিয়ে।

এরপর আর পিকেদাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টেকাটুকা প্রকৌশলে জ্ঞান বাড়াতে এমবিএ ও সিএ ডিগ্রি নিয়ে পিকেদা নানারকম লিজিং কোম্পানির গুরু হয়ে ওঠেন। উন্নয়ন বসন্তে লিজিং-এর জাল ফেলে হাজার কোটি টাকা তুলে আনেন। যে মারমেইড লিজিং কোম্পানি খুলে, সেটার চাকরির বিজ্ঞাপনের জাল ফেলে তুলে আনেন মতস্যকুমারীদের। অফিসে রাজা ইন্দর সেজে বসে থাকে্ন। ইলি-মিলি-জুলি পেনসিল হিলে ঠক ঠক শব্দ করে আসে আর যায়; পিকেদার সিংহাসনের আশেপাশে।

পিকে টেকাটুকাসাগর উপাধিতে ভূষিত হলে; পাপিয়ামাণ্ডির মেয়েরা ধেয়ে আসে। পিকেদা নিষেধ করে দেন, আমি ঐসব ফালতু সুচিন্তা নিয়ে ঘুরি না। আমার চিন্তা আকবর-শাজাহান এইসব মুঘল সম্রাটের ন্যায়। কে আমার যোধা হবে কে হবে মমতাজমহল!

হোয়াটস এপে পিকেদা নস্টালজিয়ার রুপা হালদারকে মেসেজ পাঠান, ক্যাশ মি ইফ ইউ ক্যান!

ছবি পাঠান, নাহিদা ব্রনাই, চামর দোলাচ্ছে, অবন্তিকা সেতার বাজাচ্ছে, অনিন্দিতা আঙ্গুরের গুচ্ছ ধরেছে মুখের কাছে, সুস্মিতা নাচছে, প্রিয় এমনো রাত যেন যায় না বৃথাই!

রুপা পিকেদাকে ব্লক করে দেয়, তার আগে শেষ বার্তা পাঠায়, পিকেদা তুমি টেকাটুকার গরব দেখাইও না। আমার স্বামীরও সেকেন্ড হোম আছে; আমি যাইতেছিগা ছেলে-মেয়ে নিয়া। তুমি থাকো তোমার হারেম নিয়া।

পিকেদা ঢাকার পাপিয়া সুলতানার আহবান অগ্রাহ্য করে কলকাতার পাপিয়া মুখার্জির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। কারণ ওটা সাম্যবাদী এলাকা; ওখানে মেয়েদের টেকাটুকার লোভ কম; চাহিদা কম, অল্পে তুষ্ট। একটা এপার্টমেন্ট কিনে দিলেই খুশি। কিন্তু উন্নয়নের ঢাকার মেয়েদের শুধু টাকা টাকা।

এরমধ্যে দেখা হয় মমতাজ মহলের সঙ্গে। সে ঢাকার মায়াবতী মেয়ে। একদম টাকার লোভ নেই। মুগ্ধ হয়ে পিকেদা গ্রানাডায় মমতাজের জন্য তাজমহল-টু নির্মাণ শুরু করে।

সাংবাদিকগুলো তো প্রেম বোঝে না; শুধু বোঝে গেম; তাই পিকে টেকাটুকাসাগরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর ছাপতে থাকে। অথচ নারীকল্যাণে পিকেদার ভূমিকা নিয়ে একটি প্রবন্ধও ছাপা হলো না কোথাও।

কলকাতায় মিতব্যায়িতা ও শিষ্টাচারের পরিবেশে পিকেদা পাপিয়া মুখার্জির গান শুনে সময় কাটান দিল্লির শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর স্টাইলে। নেত্রী মমতাময়ী মমতা ব্যানার্জির কবিতা পাঠ করে খুশি হয়ে পিকেদা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গড়ে তোলেন, আরেকটি তাজমহল-থ্রি। শাজাহানকে এইখানে টপকে যান; গ্রানাডায় বান্ধবী মমতাজের জন্য একটি তাজমহল আর ভারতে মাতৃরূপেন সংস্থিতা মমতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আরে্কটি তাজমহল স্থাপন করে অমরতার আয়োজন করেন, পিকে টেকাটুকাসাগর। সেখানে সাজিয়ে রাখেন নানারকম আকাদেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবিতা, পুরস্কারের জুরিদের ছবিও ঝুলতে থাকে কবিতামহলের দেয়ালে দেয়ালে।

পাপিয়া ব্যানার্জির তাতে ঈর্ষা হয়, সে টুপ করে জয়শ্রীরামদের খবর দেয়, পিকেদা আসলে মনে প্রাণে শাজাহান। সে নারীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সেকুলার ও প্লেটোনিক।

সুতরাং গ্রেফতার হয়ে যায় পিকেদা। নারীমানবতাবাদী পিকে টেকাটুকাসাগর নিজের জন্য কোন অর্থ খরচ করেননি। তিনি কেবলই নারীর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। পৃথিবীতে নারী প্রেমের ইতিহাসে পিকেদা একটি মাইলফলক হয়ে রইলেন।

গভীর অনুতাপে পাপিয়া ব্যানার্জি টিফিন বাটিতে করে লুচি-সব্জি-বুন্দিয়া নিয়ে জেলখানায় হাজির হয়, ধীর লয়ে গায়, ‘লাইলি তোমার এসেছে ফিরিয়া, মজনু গো আঁখি খোলো!’

৩০৪ পঠিত ... ১৭:০১, মে ১৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top