চোরের খনির রহস্য গল্প

৭৩৫ পঠিত ... ১৭:০৩, এপ্রিল ২৮, ২০২২

Chorer-khoni

সে ছিলো এক জাদু বাস্তব সংঘর্ষের কাল। থাগস অফ বেঙ্গল লীগ ও বিএনপি-জামাত পালা করিয়া বাংলা লুন্ঠন করিতো। কে এই রাষ্ট্রযন্ত্রের টাকার যন্ত্রের দখল ধরিয়া রাখিতে পারিবে; তাহা লইয়া উভয় পক্ষের ডাকাত সর্দারদের চাঁদাপথের যুদ্ধ হইতো স্থানে স্থানে। এইসব চাঁদাপথের যুদ্ধের মাঝখানে পড়িয়া ক্রসফায়ারে মারা যাইতো নিরীহ প্রজা।

দুই মহা ডাকাত সর্দার কিশোর-তরুণদের বলি দিতো তাহাদের লুন্ঠনের চর দখলের লড়াইয়ে।

একসময় গুম ও ক্রসফায়ারে বিএনপি-জামাতের ডাকাতদলের তরুণদের হত্যা করিয়া সর্বেসর্বা হইয়া উঠে আওয়ামী লীগের ডাকাতেরা।

এরপর শুরু হয় আওয়ামী ডাকাতদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব। মাৎস্যন্যায়ের নিষ্ঠুরতায় প্রতিদিনই তরুণ বলি দিয়া উৎসব করিতো রাজবদর নরোভোজীরা। ফেসবুকে হত্যাকারি ‘বিএনপি জামায়াত’ ডাকাত দল হইতে আওয়ামী লীগ লীগ ডাকাত দলে অনুপ্রবেশ করিয়াছে বলিয়া বিবৃতি দিতে শুরু করে চোরের খনির রাজার নবরত্ন সভার কুতসা কাসুন্দি কংস মামারা । আওয়ামী ডাকাত দল হইতে হত্যাকারিকে বহিষ্কার করিয়া বিশুদ্ধ গোবর খাইয়া শুদ্ধ হইতো ডাকাত ঠাকুরেরা।

চাঁদাপথের যুদ্ধে নিহতের দাদার ভাইয়ের দুলাভাইয়ের ভাগ্নের শ্যালক বিএনপি করিতো, অথবা ১৯৭১ সালে পরাজিত পাকিস্তানের রাজাকার ছিলো বলিয়া; মৃতদেহের কপালে হুরমতীর মতো চুরির আধুলির ছ্যাঁকা দিয়া দিতো চেতনার পেটমোটা পুরুতেরা।

মৃতদেহ পাকি ছিলো বলিয়া গালাগাল করিতো লীগের ডাকাত দলের বিশেষত কালা বাঙ্গিরা। ধর্ম ডাকাতদের বিশেষত কালা বাঙ্গিরা হত্যাকারী রেন্ডিয়া ছিলো বলিয়া গজরাইয়া উঠিতো। কালাবাঙ্গিরা অজানা হীনমন্যতায় পাকি রেন্ডিয়া গালি দিয়া লাফ দিয়া জাতে উঠিতে চাহিলে, প্রজারা মনে করাইয়া দিতো, তগো জাত একটাই, ডাকাতের জাত।

কালাবাঙ্গিরা তাহাদের পৃথিবীর ভয়ংকরতম বর্ণবিদ্বেষের ভয়কর ডাকাতস্তানে বাড়িয়া ওঠায়, উহাদের শিশু মনে গাঁথিয়া যাওয়া হীনমন্যতাজনিত কারণে তাহারা চ-বর্গীয় গালির সিপি গ্যাং গড়িয়া তুলিয়াছিলো। কালাশিয়াল এই গ্যাং-এর লিডার হইয়া ইতিহাসানের মনগড়া বয়ান দিয়া রাতারাতি ফেসবুক সেলিব্রেটি হইয়া উঠিয়াছিলো। সিপি গ্যাং-এর যৌবন জ্বালা অধিক হওয়ায়; তাহারা চ-বর্গীয় গালিতে যৌন সুখ খুঁজিতো বলিয়া মন্তব্য করিয়াছেন ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি। ভাষার দুর্গতি দেখিয়া চমস্কি চট্টগ্রামের মেহের ফ্যাশান বস্ত্রালয়ে আসিয়া বসিতেন মাঝে মাঝে, বাংলা ভাষার সর্বনাশ সাধনের প্রক্রিয়া অনুসন্ধানে।

চোরের খনির রাজার রাজ্যে লাইলাতুল ইলেকশনের ডেমোক্রেসি পাহারা দিতে গিয়া পুলিশ কালক্রমে সুপারকপ হারকিউলিসের প্রদীপ জ্বালায়। পুলিশ প্রতিরাতে নরমাংস দিয়া আহার সারিতো। আওয়ামী লীগের ডাকাতদলে পুলিশই হইয়া দাঁড়ায় অগ্রবর্তী বাহিনী। আর ফেসবুকে রাজবদরেরা উহাদিগকে স্যার ডাকিয়া পুলিশের হাইড্রোসিল রোগ সৃষ্টি করে।

হাইড্রোসিলে কাতর পুলিশ তাহার মানব সম্পদ বলয় সামলাইতে চোরের খনির গুনগান করিতো। এমনকী আগ বাড়াইয়া বিএনপির ডাকাত দলের

মহা সর্দারের বেড রুমের গল্প ফাঁদিয়া পুলিশ তাহার বিগত যৌবনে আগত যৌবনজ্বালার দহন জুড়াইতো।

চোরক রাজার দেশে চোরের ডিএনএ দেখিয়া প্রশাসক-পুলিশ নিয়োগ হইতো। দাদা চুরি করিতো কিংবা চর দখলের লড়াইয়ে লেঠেল ছিলো; এমন প্রমাণ পাইলে; উহাকে চোরস্তানের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলিয়া নিয়োগ দেয়া হইতো, চাঁদাপথের যুদ্ধে ডাকাত সর্দারদের সেকেন্ড হোমের জন্য দেশলুণ্ঠন করিতে।

এই অন্ধকার কালে নবরত্নসভার মুনতাসির ফ্যান্টাসি দিয়া, দেশকে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষশক্তিতে বিভাজন করিয়া, বৃটিশ ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি বাস্তবায়িত হইয়াছিলো, রাষ্ট্রযন্ত্রের টাকাযন্ত্রের চিরস্থায়ী মালিকানা ধরিয়া রাখিতে।

চুরিশিল্পের বিকাশ জাতীয় জীবনে আলোড়ন তুলিলে চলচ্চিত্র-সংগীত-থিয়েটার জগতে পিঁপড়াবিদ্যার বিশেষ প্রসার ঘটে। হালাকু খানের বংশধরেরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করিয়া মঙ্গলদের লুণ্ঠন সংস্কৃতির একটি শৈল্পিক রুপ দিয়াছিলো। একদিনের জন্য সবাই বাঙ্গি খাইয়া পোকিত বাঙালি হইয়া চকরাবকরা পাঞ্জাবি পরিয়া ঘুরিতো। ফকিন্নির ঘরের ফকিন্নির গর্বিত অতীত উদযাপনে পাঁচতারা হোটেলে নতুন পাস্তা সরাইয়া উহারা পান্তা খাইতো।

জামায়াতের অশ্লীল চ বর্গীয় গালাগাল গ্যাং বাঁশের কেল্লার উগ্র নিম্নজাতের মুসলমানের ভয়ে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পুলিশ প্রশাসনে ভর্তি করা হইতো। মুসলিম জিহাদির ভয়ে বৃটিশ যেমন সিপাহী বিপ্লবের আগে হইতেই প্রায় ৫৮ শতাংশ সৈন্য ভর্তি করিয়াছিলো নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্য হইতে।

চোরের খনির পুরুষেরা নানারকম ফ্যান্টাসিতে ভুগিতো। কেহ স্ত্রীকে বোরকা পরাইয়া আলেফ লায়লার উত্তেজনা গ্রহণ করিতো। কেহবা স্ত্রীকে বড় করিয়া টিপ পরাইয়া স্ত্রীর মাঝে উর্বশী রম্ভা খুঁজিত। আসলে লুন্ঠন আর দুর্নীতিতে সমাজ নিমজ্জিত হইলে জৈবিক তাড়না আর পাপিয়া মাদকের নেশা পুরুষদিগকে কর্মে অক্ষম করিয়া তুলে। নারীকেই তখন কষ্টে সৃষ্টে সমাজের চাকা ঘুরাইয়া নিতে হইতো।

আদেখলা শিক্ষিত পুরুষেরা অনেক কষ্টে একটি বউ জোগাড় করিবার পর এই সম্পদ হাতছাড়া হইয়া না যায়, এই ভয়ে ফেসবুকে নারীর গোপন আড্ডায় উঁকি দিতো। চোরস্তানে বেকারের সংখ্যা অত্যাধিক বাড়িয়া যাওয়ায় এসথেটিক প্রমোদ বালকের সংখ্যা জ্যামিতিক বৃদ্ধি পায়। এই কারণে চারুলতার স্বামী উহার স্ত্রীর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড লইয়া ইনবক্স মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপ তন্ন তন্ন করিয়া দেখিতো যে কেহ, দেশপ্রেমের গল্প শুনাইয়া বা ধর্মপ্রেমের আফিম ঢালিয়া বা ভারতবর্ষের অমূল্য বিজ্ঞান কামাসূত্র পড়াইয়া দোলনায় দুলিতেছে কীনা চারুর কোলে মাথা রাখিয়া।

বিএনপি ডাকাতেরা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ঈদুল ইলেকশনে মৃতব্যক্তিদের ভোট দান প্রথা চালু করিয়াছিলো। ২০১৪ সালে আওয়ামী ডাকাতেরা ঈদুল ইলেকশনের ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করিয়াছিলো গোরস্তান ও শ্মশানে। ২০১৮ সালে দেশের সব ভোটারকে মারিয়া ফেলিয়া, কোটাল পুত্রদের লইয়া লাইলাতুল ইলেকশনের মাধ্যমে লুন্ঠনের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাকা করে।

সময়ের বিবর্তনে বিএনপির ডাকাত মরিয়া ভূত হইয়া গেলে, আওয়ামী ডাকাত পুলিশ সেই ভূতের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া শুরু করে। অভিযোগ চাঁদাপথের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

চোরের খনির এক গ্রামে একবার এক লোক অনেক সাধ করিয়া পুত্র সন্তান চাহিলে; খোদা উহা মঞ্জুর করেন। কিন্তু আনন্দের আতিশয্যে পুত্র সন্তানের মায়ের সঙ্গে বন্ধনের নাড়ি কাটিবার পরিবর্তে শিশুর শিশ্নটি কাটিয়া ফেলে। চেতনা ও উন্নয়ন লইয়া অধিক আহলাদ করিয়া ঘটনা সেইরূপ দাঁড়াইয়াছে বলিয়া প্রতীয়মান হয়।

প্রজারা চুরি-ডাকাতির প্রতিবাদ জানাইলে তাহাদিগকে ‘ষড়যন্ত্রকারী’ বলিয়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে ধরিয়া লইয়া যাওয়া শুরু করে ডাকাত পুলিশ। মুনতাসির ফ্যান্টাসির হাবসি ক্রীতদাসেরা তোতাপাখির মতো, প্রতিবাদকারীকে ‘স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি’ তকমা দিয়া একঘরে করিবার চেষ্টা করে। অশিক্ষিত লালসালু মুসলমান সমাজ ও অশিক্ষিত জয়শ্রীরাম হিন্দু সমাজে এই সমাজচ্যুত করিবার ঐতিহ্য অনাদিকালের।

গোটা দুনিয়ায় চোরস্তানের লুন্ঠকদের সেকেন্ড হোম মাথা গজাইয়া উঁকি দিলে ও কাসিনো গুলিতে আওয়ামী জুয়াড়ু মশহুর হইয়া উঠলে; দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে দেশব্যাপী মডেল মসজিদ ও জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপিত হয়। চোর ডাকাতেরা ধার্মিকের পোষাক পরিয়া তাহাতে দেশপ্রেমিক কোট চড়াইয়া সর্বত্র সততার শোকরানা মেহেফিল ও বাতাবি টকশো আয়োজন শুরু করিতে থাকে। সৎ মানুষের পোষাক ছিনাইয়া লইয়াছে চোরের খনির লুণ্ঠকেরা।

চোরের সাধু সাজিবার এই কৌশলের গ্রাম্যতা এতো প্রকট যে; পাখিরাও গান করে, চোরের মায়ের বড় গলা, চোরের পোলার বড় নলা।

চোরের খনির চাটার দলের এইসব শঠতা দেখিয়া জাতির জনক আগেই বলিয়াছিলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তব করিবার কারণে ইহারা কৃতঘ্ন হইবে। কারণ নিউটনের তৃতীয় সূত্র চোরের খনিতে আসিয়া নতুন রূপ লইয়াছে। "তুমি কাহারো উপকার করিলে, সে তোমাকে সমান ও বিপরীত অপকার ফিরাইয়া দেবে।" দেখিলে তো আমার আদর্শের সৈনিক সাজিয়া চাটাচাটি করিয়া চুরিডাকাতি শুরু করিলে আমি উহাদিগকে শক্তভাবে বাধা দিতাম; তাই উহারা আমাকে হত্যা করে।

 জনক আক্ষেপ করিয়া উঠেন, আর একালে দেখিলে তো, আমার ছবি ঝুলাইয়া কীভাবে দেশভক্ষণ করিলো। দেশভক্ষণ উদযাপনে উহারা এখন আমার অনুকৃতির কেক-পেস্ট্রি বানাইয়া ভক্ষণ করে। উহারা যে অবচেতনে নরভোজী; তাহা এক্ষণে বুঝিলে তো।

৭৩৫ পঠিত ... ১৭:০৩, এপ্রিল ২৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top