হাহা লীগের পিঁপড়াবিদ্যা

৩৭২ পঠিত ... ১৬:০৬, এপ্রিল ১৮, ২০২২

Ha-ha-league

গতকাল সকাল থেকে সমকালে প্রকাশিত রিপোর্ট ‘ফেসবুকে মন খারাপের কথা লেখা’ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে; এমন আইন প্রণীত হতে যাচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হলে; বিস্ময়ে বিহবল নাগরিক সমাজ উত্তর কোরিয়ার সুখে মাতোয়ারা হয়।

দু-একজন হাহালীগ ও ঝুমঝুম উন্নয়ন বাজনদার এসে আইনের ড্রাফট দেখিয়ে জাস্টিফিকেশনের প্রাণান্ত চেষ্টা করে। কিন্তু ওভাবে হচ্ছিলো না; নাগরিক সমাজ বিপন্ন বিস্ময়ে নিয়ন্ত্রণবাদের উন্মাদনা লক্ষ করছিলো। এও কী সম্ভব; আর কতো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চায় ‘মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস’।

টাইম মেশিন লীগ তখন অভিনেতা ও কবি মারজুক রাসেলের বীরত্বের স্ক্রিনশট এনে হিজড়ে লাগিয়ে দিয়ে ইতিহাসের পদ্য লেখে। মারজুকের এক খাদেম তাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘গুরু আপনি কী হিন্দু নাকি মুসলমান!’

মারজুক বিরক্ত হন এমন ব্যক্তিগত প্রশ্নে। কিন্তু ভাইবেরাদেরা যে কোন প্রশ্নের উত্তর টাইম মেশিন লীগের প্যাটার্নে দিতে পছন্দ করে। মারজুক বলেন, ‘এইরকম প্রশ্ন স্বাধীনতার আগে ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান আর্মি করতো।‘

ভাইবেরাদারের মনোজগত মানেই কিছু নিম্নাঙ্গ সংগীতের সুড়সুড়ি, অতএব পাকিস্তান আর্মি লুঙ্গি খুলে চেক করতো একথা বলেন তিনি! এরপর মারজুক প্রশ্ন কর্তাকে একটি 'রাজাকার' সার্টিফিকেট দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপ্রণোদিত ম্যানেজার হয়ে ওঠেন।

এই যে সহমত ভাইয়েরা ফেসবুকে লোকজনকে জিজ্ঞেস করে বেড়ায়, আপনি আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি; এই যে পারলে সব কাপড় খুলে চেক করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা; এইসব অশালীন আচরণ কোন স্থানের আর্মি শিখিয়েছে মারজুক ও ভুঁইফোড় উগ্রজাতীয়তাবাদীদের?

মারজুকের ভক্তটি ধর্মচিল; আর মারজুক পোগোতিচিল। কিন্তু চিন্তার প্যাটার্ন যেনো একই। স্বপ্রণোদিত ম্যানেজারগিরি। ঐ তো ক্ষয়িষ্ণু শোবিজের  কতোগুলো সেলিব্রেটি; বাংলাদেশে ভাষা দূষণের কারিগর; মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের প্রমিত ভাষা বলতে না পারার অক্ষমতাকে মূলধারা বলে প্রতিষ্ঠার ভাইবেরাদেরা; তারা স্বাভাবিকভাবেই গুরু হয়েছেন অনগ্রসর দর্শকের।

কমনসেন্স বর্জিত একজন ফ্যান একটি আপত্তিকর প্রশ্ন করলে; পৃথিবীর যে কোন শিক্ষিত প্রমিত সেন্সিবল লোক শেখাবেন, এমন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে নেই। মানুষ খোদা বা গড ছাড়া আর কারো কাছে ধর্ম বা বিশ্বাসের ব্যাপারে জবাবদিহিতায় বাধ্য নয়।

কিন্তু এই যে ভক্তকে তুচ্ছ মনে করা; তাকে মুখে যা আসে বলা; তাকে যত্রতত্র রাজাকারের সার্টিফিকেট দেয়া; এইসব গ্রাম্য কলতলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এইসব গজদন্তের মিনার, প্রতিষ্ঠার ইউফোরিয়ায় পাগলপারা দাম্ভিক শোবিজের ভাইবেরাদারেরা।

ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো; মারজুকের বন্ধুবৃত্তের সঙ্গে। চারুকলাকে ঘিরে আমাদের একটি আনন্দঘন সময় ছিলো। জার্মানি চলে যাবার আগে একবার উনারা কয়েকজন কবি আমাকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে খুশী-গল্পের ফেয়ারওয়েল দিয়েছিলেন। আমাদের সবারই অঙ্গীকার ছিলো, আমরা বদলাবো না। সবসময় ডাউন টু আর্থ থাকবো।

নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ে; তা সে মুসলমান বা হিন্দু রক্ষণচিল হোক বা পোগোতিচিল হোক; ওরা আমাদের অনুজপ্রতিম, সন্তানপ্রতিম। তাদের ভুল চিন্তাগুলোকে ভালোবেসে সংশোধন করা আমাদের দায়িত্ব। কিশোর তরুণকে অপমান করার মাঝে প্রাকবৃদ্ধতার কোন সাফল্য নেই।

৩৭২ পঠিত ... ১৬:০৬, এপ্রিল ১৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top