বাইচান্সের লাইসেন্স নাই, তাই আমাদেরও নাই: রিজেন্ট হাসপাতাল

৭৭৩ পঠিত ... ১৯:০২, জুলাই ০৭, ২০২০

অভিজ্ঞরা প্রায়ই বলেন, বাংলাদেশে নাকি সবই হয়! এখানে আপনার করোনা না থাকলেও করোনা ধরা পড়তে পারে, নমুনা পরীক্ষা আদৌ না করে করোনা রেজাল্ট দেয়া হতে পারে, এমনকি হাসপাতালের লাইসেন্স না থাকলেও তারা সরকারিভাবে করোনা টেস্টের কাজ পেতে পারে! এতদিন যদি বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ এই কথায় আপনার বিশ্বাস না থাকে, আপনাকে সেই বিশ্বাস এনে দেবে রিজেন্ট হাসপাতাল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানকে এক নম্বর আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে র‍্যাব। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে— এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয় তারা (মানে বাটপারিরও তো একটা লেভেল থাকে, নাকি!)

র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে। এদিকে অভিযানে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়, এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফেসবুকে যোগাযোগ করি। নমুনা আদৌ পরীক্ষা না করে করোনা টেস্টের রেজাল্ট কেন দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দেখন, করোনা পরীক্ষায় অনেক টাইম লাগে। তার চেয়ে পরীক্ষা না করলেই দ্রুত রেজাল্ট দেয়া যায়। দেরিতে সঠিক রেজাল্ট পাওয়ার চেয়ে আগে আগে ভুল রেজাল্ট পেলেও তা রোগীর জন্য ভালো বলে আমাদের মনে হয়েছে।'

করোনা পরীক্ষা করা একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার, তিনি এমনটা বললে আমরা জানতে চাই, 'কিন্তু পরীক্ষার ফি তো আপনারা রোগীদের কাছ থেকে নিয়েছেনই...'! এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি একটি হাহা ইমো দিয়ে বলেন, 'এটা হলো রোগীদের বিশ্বাস করার চার্জ। আপনি যদি বিশ্বাস করেন, ঠকবেন। এটাই জীবনের মূল শিক্ষা। টাকা দিয়ে রোগীরা আসলে জীবনের মূল শিক্ষাটা কিনেছেন। বাই চান্স বেঁচে গেলে এই শিক্ষাই তাদের জীবনে কাজে লাগবে। আর মরলে তো হইলোই...'

কিন্তু সরকারের কাছ থেকে তো ফ্রি চিকিৎসা করার কথা বলে বড় অংকের বিলও জমা দিয়েছেন, সেটা? এই প্রশ্নে চেয়ারম্যান স্যার হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার স্টিকার দিয়ে লেখেন, 'উনারাও বিশ্বাস করার চার্জ দেবেন। লাইসেন্স আছে কিনা যাচাই না করে যাদের আপনি করোনা টেস্টের দায়িত্ব দিবেন, এমন বোকামির কি মাশুল দেয়া উচিত না বলে মনে করেন?'

তাইলে ২০১৪ সালের পর আপনাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি কেন, এই প্রশ্ন করতেই চেয়ারম্যান সাব এংরি ইমো দিয়ে লেখেন, 'ওই মিয়া করোনা টেস্ট কি ড্রাইভিং নাকি যে লাইসেন্স লাগবে? আর জানেনই তো, বাই চান্সের লাইসেন্স নাই! বাইচান্সেরই যদি কোনো লাইসেন্স না থাকে, আমাদের থাকবে কেন!'

এ পর্যায়ে উনাদের করোনা টেস্টের মতো উনার আইডিটিও ফেক ছিল তা জানতে পেরে আমাদের প্রতিবেদক মেসেজটি সিন করে আর রিপ্লাই দেননি।

আরও পড়ুন-

রিজেন্ট হাসপাতাল যে ১২টি সম্ভাব্য 'পদ্ধতি'তে করোনা পরীক্ষা করিয়েছে

'ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান' পদক পাচ্ছেন রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদ করিম

রিজেন্ট হাসপাতালের মতো খাতা না দেখেই রেজাল্ট দেয়ার অনুরোধ জানালো শিক্ষার্থীরা

৭৭৩ পঠিত ... ১৯:০২, জুলাই ০৭, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top