বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, ‘আগে বাজারে টাকা দিলেও পণ্য পাওয়া যেত না। তবে এখন আর সেই সমস্যা নেই। এখন মানুষের হাতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টাকা আছে। আমাদের বাজারে মানি সাপ্লাইটা বেশি।‘
এর আগের মন্ত্রীসভার বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এখন সবাই লিপস্টিক পরে আর দিনে দুই-তিন জোড়া স্যান্ডেল বদলায়।‘
এরপরেও উন্নয়নের শত্রুরা হিংসা করে বলে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় সামর্থ্যের বাইরে; মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খায়। সুশীল আলো নামে এক পত্রিকা "মাংসের স্বাধীনতা নেই" বলে মন্তব্য করে আদালতের বারান্দায় দৌড়েছে। শেষে নাকে খত দিয়ে স্বীকার করেছে, চারিদিকে কেবলি মাংসের কারবার।
অর্থনীতির মুনশী সূচকের সত্যতা খুঁজতে গিয়ে আমরা যার সঙ্গে কথা বলেছি, সেই বলেছে দাঁড়ান একটু ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে স্যান্ডেল বদলে আসি; তারপর সৌভাগ্যের গল্প বলবো।
এবার আমরা অর্থনীতির টিটু সূচক খুঁজতে কুড়িল বস্তিতে উপস্থিত হলে; সন্নিহিত চায়ের দোকানে সবাইকে চায়ে ভিজিয়ে টাকা খেতে দেখি। লিপস্টিকে ঠোঁট রঞ্জিত এক ভদ্র লোক নতুন স্যান্ডেল দুলিয়ে বলেন, বিস্কুট জিনিসটা একঘেয়ে; হাতে অনেক টাকা; তাই টাকা খাই; চায়ে ভিজিয়ে। চায়ের স্টলের মালিক বলেন, আগে চাপাতা দিয়ে চা বানাতাম। এখন টাকার পাতা দিয়ে চা বানাই।
রুপনগরের বস্তিতে গিয়ে দেখি এক ভদ্রমহিলা মুরগির পা নখসহ সিদ্ধ করছেন। উনি চট করে উঠে গিয়ে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে হাইহিল স্যান্ডেল পরে আসেন। তারপর বলেন, মুরগির পা ও গিলা কলিজা রান্নায় আগে তেজপাতা দিতাম; এখন টাকার তেজ বেশি; তাই টাকার পাতা দিই।
রামকৃষ্ণ মিশনের রাস্তা ধরে এগিয়ে একটু সামনে গিয়ে দেখি পাংগাস মাছের কাঁটা বিক্রি হচ্ছে। এক ভদ্রমহিলা বলেন, আগে যখন হাতে টাকা ছিলো না; তখন মাছ খেতাম। কিন্তু এখন টাকা দিয়ে মাছের কাঁটার ঘন্ট করে খাই; এটা বড্ড সুস্বাদু।
অপেক্ষাকৃত কম টাকার মানুষের টাকা খাওয়ার নমুনা পেয়ে যাবার পরে আমরা দেখতে চেষ্টা করি সহসভাপতিরা কী খাচ্ছেন! একটি ব্যাংকের এমডি ধারাপাত চৌধুরীর বাসায় গেলে উনি বলেন, পুরো ব্যাংক খেয়ে ফেলার পর কোলেস্টেরল লেভেল হাই হয়ে গেছে; তাই এখন টাকার কর্ন স্যুপ খাই। আপনি কী টাকা দিয়ে বেইক করা দুটি বিস্কিট খাবেন ভাই!
মিডিয়া ম্যাজিক গিল্ডের শনিবারের রাউন্ড টেবিলে গিয়ে দেখি টাকার এসপ্রেসো কফিতে চুমুক দিয়ে তারা বলছেন, আমরা রাজনীতিতে সরকারি দলেও দেখতে চাই টাকার পক্ষের শক্তি; বিপক্ষেও দেখতে চাই টাকার পক্ষের শক্তি। একজন বুদ্ধিজীবী গোঁফ কামড়ে বলেন, টাকা একটা ফিল্টার; যে বলবে তার হাতে টাকা বেশি; সেই আমাদের অর্থচেতনার বন্ধু। যে বলবে তার হাতে টাকা নাই; তার এদেশে বসবাসের কোন অধিকার নেই।
সংস্কৃতি মামাদের এক আড্ডায় গিয়ে দেখা যায় তারা টাকা দিয়ে তৈরি লাড্ডু খেতে খেতে বলছেন, আগে লাড্ডুতে চকচকে রাংতা দিতো; সেটা এমন সুস্বাদু হতো না মোটেও।
ইয়ো ইয়ো ইউটিউবারদের এক আড্ডায় গিয়ে দেখা যায়, তারা ওপরে টাকার টুকরা ছড়ানো পিতযা খাচ্ছে। একজন তৃপ্তি প্রকাশ করে বলে, আগে অলিভের টুকরা ছড়ানো থাকতো; ওর চেয়ে টাকার টুকরা অনেক বেশি স্বাদ এনে দেয় পিতযাতে।
এবার আমরা প্রবাসে এক সেকেন্ড হোমে গেলে বিশ্রামে হত এক আমলার স্ত্রী পরিবেশন করেন, টাকার শাহী টুকরা। তার মেয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে টাকা দিয়ে তৈরি সিরিয়াল খাচ্ছিলো; আর ছেলেটি টাকা দিয়ে তৈরি এগ স্যান্ডউইচ খাচ্ছিলো।
সবশেষে দেশেই টাকাভবনে গিয়ে দেখি তলস্তয়ের মতো সাদা দাড়িওয়ালা এক মাটি ও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে টাকার গাছ লাগাচ্ছেন এক আধ্যাত্মিক নারী। মহীয়সী এই নারী যা কিছু স্পর্শ করেন; তাই টাকা হয়ে যায়। পুকুরে ছিপ ফেললে মাছের বদলে টাকা উঠে আসে। হাঁসকে খাবার দিলে হাঁসের পালকগুলো টাকা হয়ে যায়।
একটু পরে টাকাভবনে শুরু হয় "প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছি"-র আসর। সেখানে আগত খামবাদিকদের বলা হয়, আগে আপনাদের খামে করে টাকা দেয়া হতো; কিন্তু আজ থেকে টেবিলে প্লেটে প্লেটে সাজানো থাকবে টাকার নানা রকমের পিঠাপুলি। যত খুশি খেয়ে যান; কিন্তু পকেটে নিতে পারবেন না।
খামবাদিকেরা টাকা ভবনের অনুষ্ঠান শেষে যে যার পথে বেরিয়ে যায়। অবাক হয়ে লক্ষ্য করে; সাইন বোর্ডে -নিয়ন সাইনে সর্বত্র লেখা টাকা। কোন এক জাদুতে ঢাকা গেটের সামনে লেখা হয়ে গেছে, টাকা নগরীতে স্বাগতম।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন